No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ১৩৩ বছরের পুরোনো পঞ্চঘণ্টার শব্দে সময় মিলিয়ে নিতেন সেকালের কোচবিহারবাসী

    ১৩৩ বছরের পুরোনো পঞ্চঘণ্টার শব্দে সময় মিলিয়ে নিতেন সেকালের কোচবিহারবাসী

    Story image

    ত্তরবঙ্গের ছোট্টো জেলা কোচবিহার (Coochbehar), আর এই জেলার প্রসঙ্গ উঠতেই যে নামগুলো সবার আগে মনে হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মদনমোহন মন্দির। এমনিতেই ‘বারো মাসে তেরো পার্বন’ উদযাপন বাঙালির চিরকালের সঙ্গী। কখনও মেলা, কখনও বার্ষিক পার্বণ, বাঙালি মাত্রই উৎসব নিয়ে মাতামাতি। কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরের (Modon mohon Mandir) রাস উৎসব, সেরকমই এক পার্বণ। যার খ্যাতি উত্তরবঙ্গ ছড়িয়ে বাংলার সর্বত্র জনপ্রিয়।

    পুজো শুরুর প্রথম সময় থেকেই রয়েছে পঞ্চঘন্টাটি। প্রতিদিন সন্ধ্যাআরতি এবং ভোগ নিবেদনের সময় মদনমোহন মন্দিরে বেজে ওঠে এই পঞ্চঘন্টা।

    কোচবিহার শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মদনমোহন মন্দির। সময়টা ১৮৮৯ সাল। কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের আমলে শহরের বৈরাগী দিঘির ধারে তৈরি হয় কোচবিহারবাসীর প্রাণের ঠাকুর মদনমোহনের মন্দির। বর্তমানে মন্দিরটি জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বহু ভক্ত ও পর্যটক মন্দিরটিতে পুজো দিতে ও বেড়াতে আসেন।

    এ শহরের সর্বত্র জুড়ে রয়েছে ইতিহাসের গন্ধ। আজকের আধুনিক শহরের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা স্মৃতির ইমারতগুলো যেন বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় সেকেলে রাজপরিবারের ঐতিহ্যকে। কোচবিহারের রাজাদের হাত ধরেই এ শহরেরই আধুনিকীকরণ শুরু হয়েছিল সেসময়ে।

    মন্দির মাত্রই আমাদের প্রচলিত ধারণা, সেখানে থাকবে বিগ্রহ, পূজা কিংবা আরতির নানা উপাচার, পুরোহিত, ভক্ত আর অবশ্যই একটি ঘণ্টা। যে ঘণ্টাধ্বনি কানে এসে জানান দিয়ে যাবে মন্দিরের অস্তিত্ব। কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরও তার ব্যতিক্রম নয়। 

    তবে এ মন্দিরের ঘণ্টার এক অন্যরকম গল্প আছে। শোনা যায়, মন্দির প্রতিষ্ঠার সময়কাল থেকেই মন্দিরে রয়েছে এই ঘণ্টাটি। আজকের দিনে আমাদের হাতে হাতে ঘড়ি, মিনিটে মিনিটে সময় মিলিয়ে নিতে তাই কোনো অসুবিধা হয়না আমাদের। কিন্তু সেকালে ঘড়ির প্রচলন ব্রাত্য। ঠিক এরকম একটা সময়েই কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে লাগানো হয় এই ঘণ্টাটি। এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই মদনমোহন মন্দিরে শুরু হয় এক রীতি। ঘণ্টা বাজানোর। প্রত্যেক প্রহরে। এতে শুধু যে মন্দিরের পূজার্চনার সুবিধা হতো, তা-ই নয়। ঘনবসতি না থাকায় ওই ঘণ্টাধ্বনি শোনা যেত বহু দূর থেকে। মানুষ বুঝে নিতেন সঠিক সময়।

    সময় এগিয়েছে। কিন্তু ঐতিহ্যে বদল ঘটেনি। আজও মন্দিরের প্রবেশদ্বারের বাঁ পাশে রাখা সেই ঘণ্টা পুরনো নিয়ম মেনে বেজেই চলেছে। সকাল থেকে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় সশব্দে জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব। জানান দিচ্ছে, এতগুলো বছর পর করে এসেও তার টিকে থাকার গল্পকে।

    বাঁশের গোড়া দিয়ে নির্মিত একটি হাতুড়ির সাহায্যে সেটি বাজানো হয় এই ঘণ্টাটি। এতবছর ধরে নিয়মিত ডিউটি করতে গিয়ে হাতুড়ির শরীর বেশ কয়েকবার জীর্ণ হয়েছে, প্রয়োজনের খাতিরে বদলেছে পুরোনো হাতুড়ি কিন্তু তার আকৃতি আজও একইরকম রয়েছে।

    এছাড়াও মদনমোহন মন্দিরের বারান্দার বাঁ দিকে ঝোলানো রয়েছে পঞ্চঘন্টা। পাশেই রাখা একটি রাজ আমলের নাগারা। পুজো শুরুর প্রথম সময় থেকেই রয়েছে পঞ্চঘন্টাটি। প্রতিদিন সন্ধ্যাআরতি এবং ভোগ নিবেদনের সময় মদনমোহন মন্দিরে বেজে ওঠে এই পঞ্চঘন্টা। ভক্ত থেকে শুরু করে পর্যটক, সকলের কাছেই মদনমোহন মন্দিরের পঞ্চঘণ্টার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।

    বার্ধক্য এলে শরীরে ভাঙন ধরে, আর তখন দরকার চিকিৎসার। মনুষ্য শরীরের ক্ষেত্রেও এটা যেমন সত্যি, তেমনই সত্যি মন্দিরের ঐতিহ্যবাহী ঘণ্টাটির ক্ষেত্রও। সময়ের সঙ্গে বারবার জীর্ণ হয়ে পড়েছে পঞ্চঘণ্টার শিকলটি। মেরামতির জন্য বেশ কয়েকবার বন্ধ থেকেছে নিয়মিত ঘণ্টাধ্বনি। কিন্তু একেবারে মিলিয়ে যায়নি শব্দ। আবার ফিরে এসেছে স্বমহিমায়। ঘণ্টার শব্দে একই রকম গমগম করে উঠেছে মদনমোহন মন্দির প্রাঙ্গণ। বলাই বাহুল্য, ১৩৩ বছর পরও তার ঐতিহ্যে ফাটল ধরেনি একরত্তিও।

     

    তথ্যসূত্র 

    ১। বর্তমান পত্রিকা

    ২। উইকিপিডিয়া

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @