অযোধ্যার কলাজলে ঘিরে ধরল বুনো হাতির পাল

শীতকাল মানেই গোটা বাংলা যেন ক্রীড়াপ্রেমিক হয়ে ওঠে। একের পর এক টুর্নামেন্ট, প্রতিযোগিতা চলতেই থাকে। সেইসব জায়গায় যোগ দেওয়ার নেশা অনেকেই ছাড়তে পারে না। যেমন আমি, রাজস্থান থেকে ফিরেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম র্যাদলিতে৷ কোলকাতা থেকে প্রথমদিন ২৩০ কিমি চালিয়ে পৌছলাম মুকুটমণিপুর, দ্বিতীয় দিন ১০০ কিমি পেরিয়ে অযোধ্যা পাহাড়, তৃতীয় দিন প্রায় ৩০০ কিমি পেরিয়ে কোলকাতা ফেরার কথা ছিল, কিন্তু মাঝরাস্তায় সাইকেল খারাপ হয়ে যাওয়ায় পুরুলিয়াতেই হাল ছাড়তে হল।
এরপর দৌড়লাম কোলকাতা ফুল ম্যারাথনে। আমার তৃতীয় ফুল ম্যারাথন, শেষ করলাম ৩ ঘন্টা ২৭ মিনিটে! গতবারের থেকে ৩২ মিনিট কম সময়ে।
এরপর দ্য আলট্রা হিমালয়ান্স-এর বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে চলে গেলাম অযোধ্যা পাহাড়ে নতুন রাস্তা খুঁজে বের করার জন্য। দৌরিগড়া খালের পাড় ধরে আমরা অযোধ্যা পাহাড়ের উপরে ওঠার চেষ্টা করলাম। অযোধ্যা পাহাড়ের দক্ষিণ পশ্চিম অংশটি এখনো ঘন সবুজ, অকৃত্রিম, অপ্রকাশিত। হাতি ভাল্লুক থেকে নেকড়ে, সবই আছে। খালের উৎসমুখ কলাজলের কাছে সে এক ভয়ঙ্কর কাণ্ড হল। সবাই প্রায় হাতির পালের মধ্যে আটকা পড়ে গেলাম। দু'বার হাতির তাড়া খেয়ে কোনোক্রমে প্রাণ বাচিঁয়ে সেই গভীর জঙ্গল থেকে রাস্তা খুঁজে বেরিয়ে এসেছিলাম।
এরপর নামলাম বেঙ্গল আল্ট্রার ৮০ কিমি বিভাগে। পুরুলিয়ার মাঠাবুরুর কাছে সোনকুপি বাঞ্জারা ক্যাম্প থেকে এই দৌড় শুরু হয় ভোর পাঁচটায়, তারপর ১০ কিমি জঙ্গল হয়ে গ্রামের রাস্তা পেরিয়ে লোয়ার ড্যাম হয়ে দৌড়তে দৌড়তে অযোধ্যা পাহাড় উঠতে হয়, আবার আপার ড্যাম হয়ে স্টার্টিং পয়েন্টে নেমে এসে শেষ হয় প্রথম লুপ, ৪০ কিমি। প্রথম লুপ নিজের স্পিডে শেষ করলাম মাত্র ৪ ঘন্টাতেই। ধারেকাছে কোনো প্রতিযোগী না পেয়ে তার পরের স্পিড অনেকটাই কমিয়ে দিলাম, রেস শেষ করলাম প্রায় ১০ ঘন্টা ৫০ মিনিটে, প্রথম স্থানে!
স্কুলে ১০০ মিটার দৌড় শেষ করতে গিয়েও ভাবতাম কতদূর, শেষই হচ্ছে না ট্র্যা ক, শেষের দিক দিয়ে প্রথম দ্বিতীয় হতাম। আজ জঙ্গল-পাহাড় টপকে আন্তর্জাতিক মানের ৮০ কিমি রেস শেষ করছি প্রথম হয়ে! সত্যি, ড্রিম প্যাশন ডেডিকেশন মানুষকে কোন জায়গায় পৌঁছে দেয়..আমিও এখন বিশ্বাস করি ‘মানুষের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই’। মাঝে মাঝে হাতির পাল তাড়া করে, ফালুটে এক দৌড়নোর পথে এক বন্য জন্তুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে হতেও হয়নি।
এইসবই এক অনিশ্চিত হাতছানিতে ভরিয়ে তোলে জীবনকে। জীবন তো একটাই। দৌড়েই নিই খানিক।