সাতক্ষীরার গোপন স্বাদের রং রেশরাঙায়

বাংলার রান্না কি আর কাঁটাতার মানে! এপার-ওপার দুই বাংলাতেই কত লুকোনো স্বাদের খাজানা। কাঁটাতারে বিভক্ত দুই বাংলা স্বাদের সেতুতে মিলে যায় বারবার। মেদিনীপুরের কোনো আঞ্চলিক পদ যেমন বাংলার নিজের, তেমনই খুলনার পদেও বাংলারই হেঁসেলের স্বাদ। কিংবা ধরা যাক সাতক্ষীরা। একসময় বারো ভুইঁইয়াদের অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্যর রাজধানী ছিল এই জেলাতেই। কত ইতিহাস এই ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে। ইতিহাসের মতোই রয়েছে সাতক্ষীরার নিজস্ব কিছু পদের ম্যাজিকও। বাঙালি হিসেবে অবশ্য সেই সব পদে আমাদেরও অগাধ অধিকার।
তেমনই একটা পদের হদিশ আমায় দিয়েছিল রত্না মাসি। সাতক্ষীরার নিজের রেসিপি—ডিমের রেশরাঙা। সামান্য ডিমের পদেরও এমন সুন্দর নাম দিতে পারে কেউ! শুধু নাম? ডিমের এমন আশ্চর্য রেসিপি যে বাংলার হেঁসেলেই লুকিয়ে ছিল, তা ভাবিইনি আগে। দেশভাগের সময় এপারে চলে এসেছিলেন মাসির মা-বাবারা। ছিন্নমূল পরিবার সঙ্গে করে প্রায় কিছুই আনতে পারেনি, নিয়ে এসেছিল শুধু নিজেদের চর্যার কয়েকটা টুকরো। নিজেদের কিছু পদ। তারই একটা এই রেশরাঙা। বলাই বাহুল্য, রোজকার পাতে ডিমের যে যে পদ আমরা খাই, তার চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা এই পদের স্বাদ। বাড়িতে অতিথি এলে চমকে দেওয়ার জন্য হেঁসেলের গুপ্তভাণ্ডার থেকে বের করতেই পারেন ডিমের রেশরাঙা। শুধু, তার আগে একবার জেনে নিতে হবে রেসিপিটা।
আরও পড়ুন
বাংলার হেঁসেলের গুপ্তধন: মুলোর পাতুরি
উপকরণ :
ডিম- ৪টে
পেঁয়াজকুচি- ১টা বড়ো সাইজের
পেঁয়াজবাটা- ৩ টেবিল চামচ
রসুনকুচি- ৩টে
রসুন আর আদাবাটা- ১ টেবিল চামচ
ধনেগুঁড়ো- ১ চা-চামচ
জিরেগুঁড়ো- ১ চা-চামচ
হলুদগুঁড়ো- ১ চিমটে
কাশ্মীরি লঙ্কাগুঁড়ো- সামান্য
গোটা কাঁচালঙ্কা- ৩টে
তেঁতুলের কাথ- ১টেবিল চামচ
এলাচ- ২টো
শুকনো লঙ্কা- ১টা
নুন, চিনি পরিমাণমতো
ধনেপাতা এবং সরষের তেল
প্রণালী:
প্রথমে চারটে ডিম এর পোচ (দু’পিঠই ভাজতে হবে) করে একটি পাত্রে তুলে রাখুন। এরপর, কড়াইয়ে তেল দিয়ে তাতে এলাচ, শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে প্রথমে রসুন কুচি, তারপর পেঁয়াজকুচি সোনালি করে, অল্প আঁচে ভেজে নিন। তারপর, সব বাটা এবং গুঁড়ো মশলাগুলো ঢেলে দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। কাঁচা লঙ্কা আর মশলাধোয়া জলগুলোও ঢেলে দেবেন রান্নায়।
আরও পড়ুন
শীতের আবহে খুল যা ‘ধনে-শিম’
মশলা কষে তেল বেরিয়ে এলে ডিমের পোচগুলো খুব সাবধানে দিয়ে দিন ওর মধ্যে। সামান্য গরম জল দিয়ে ঢেকে রাখুন কিছুসময়। তারপর, তেঁতুলের কাথ আর চিনি একসঙ্গে জ্বাল দিয়ে রান্নায় যোগ করে দিন। সামান্য নাড়াচাড়া করে গরম মশলাগুঁড়ো আর ধনেপাতা দিয়ে ৩ সেকেন্ড মতো রেখে গ্যাস বন্ধ করে দিলেই তৈরি ডিমের রেশরাঙা।