পরিবেশ বাঁচানোর পথ দেখাচ্ছে ইকো-ট্যুরিজম

গজলডোবা
ইকো-ট্যুরিজমের ধারণা পশ্চিমি দুনিয়ায় প্রথম চালু হয়েছিল ১৯৮০-র দশকে। তারপর পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তেও ক্রমশ জনপ্রিয় হতে থাকে। মানুষ সচেতন হতে থাকেন যে, বাস্তুতন্ত্র এবং প্রাণী-উদ্ভিদদের রক্ষা করা এখন জরুরি প্রয়োজন। জীবজন্তু-গাছপালাকে বিরক্ত না করেই প্রকৃতির সংস্পর্শে যাওয়া সম্ভব। স্থানীয় অর্থনীতিরও তাতে উন্নতি হয়। গতকাল ছিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। সেই উপলক্ষ্যে চলুন আমাদের রাজ্যের সবচেয়ে পরিচিত দুই ইকো-ট্যুরিজম গন্তব্য সম্পর্কে জেনে নিই।
গজলডোবা
প্রথমেই বলা যাক গজলডোবার কথা। তাকে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তর। জলপাইগুড়ি জেলায় ওদলাবাড়ির কাছই গজলডোবা গ্রাম। এলাকার অন্যান্য গ্রামের মতো গজলডোবার পাশেও গড়ে উঠেছে একটি চা বাগান, একই নামে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চারদিকে। পাশেই তিস্তা নদী এবং বৈকুণ্ঠপুর অরণ্য। চাষের কাজে জল সরবরাহের জন্য তিস্তা নদীতে অনেকগুলি বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। যেগুলির থেকে মনোরম কিছু হ্রদের জন্ম হয়। শীতকালে রংবেরঙের পরিযায়ী পাখিরা আসতে থাকে। বেড়ে যায় গোটা অঞ্চলের সৌন্দর্য। পাহাড়, নদী, জঙ্গল, হ্রদ – সব নিয়ে যেন রূপকথার রাজ্য গজলডোবা। পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দা – সবার কাছেই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
গজলডোবা
আরেকটা সুবিধে হল, হাতে কাছে পেয়ে যাবেন বেশ কিছু ডেস্টিনেশন। যেমন শিলিগুড়ি (৩০ কিলোমিটার), জলপাইগুড়ি (৪০ কিলোমিটার), ওদলাবাড়ি (২০ কিলোমিটার) এবং গরুমারা জাতীয় উদ্যান (২৬ কিলোমিটার)। অর্থাৎ গজলডোবায় কয়েকদিন থেকে সহজেই ঘুরে আসতে পারবেন আশেপাশে। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। উন্নয়ন এবং পরিকাঠামোর জন্য চিহ্নিত করা হয় ২০০ একরের বেশি জায়গা। অদূর ভবিষ্যতে গজলডোবা যাতে হয়ে ওঠে জমজমাট ট্যুরিস্ট হটস্পট, তেমনই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
লামাহাট্টা
পাহাড়ের ওপর আরেকটি সম্ভাবনাময় ইকো-ট্যুরিজম গন্তব্য লামাহাট্টা। ২০১২ সালে এই ছোট্ট গ্রামটির রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকৃতির অসাধারণ সৌন্দর্য তাঁর মন কেড়ে নেয়। গাড়ি থামিয়ে ছবি তুলতে থাকেন। বুঝতে পারেন, পর্যটনকেন্দ্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে এই জায়গায়। তাঁর নির্দেশে কাজ শুরু করে দেয় প্রশাসন। ভ্রমণার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে লামাহাট্টাকে গড়ে তোলার পাশাপাশি একটি ইকো-ট্যুরিজম পার্কও নির্মাণ করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫৭০০ ফুট উঁচুতে পূর্ব হিমালয়ের কোলে শান্ত নিরিবিলি গ্রাম লামাহাট্টা। দার্জিলিং থেকে দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। পাইন এবং ওক গাছে ভরা এই গ্রামে সব সময় বিরাজ করে নিরবিচ্ছিন্ন এক নিস্তব্ধতা। মানুষের দেখা মেলে খুবই কম।
প্রকৃতিকে বাঁচাতে লামাহাট্টার বাসিন্দারা প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুরু হয়েছে ‘স্বচ্ছ লামাহাট্টা অভিযান’। গড়ে তোলা হয় নতুন এক কমিটি। সভাপতি রাজকুমার প্রধান নিজেও একটি হোমস্টে-র স্বত্বাধিকারী। তিনি জানালেন, “আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, আমাদের এলাকায় আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতেই হবে। প্রথম পদক্ষেপ ছিল প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা”।
লামাহাট্টা
শেরপা, ভুটিয়া, তামাং, ইয়ালমো এবং দুকপা জনগোষ্ঠীর বাস এই গ্রামে। ‘লামাহাট্টা’ শব্দের অর্থ ‘লামার আশ্রম’। স্থানীয় মানুষ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক। এলাকার জীববৈচিত্র্য দারুণভাবে সংরক্ষিত এবং প্রদর্শিত হয়েছে সেখানে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে আপনি পার্ক থেকেই দেখতে পাবেন দার্জিলিং শহর, টাইগার হিল, রঙ্গিত নদী এবং পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা।
লামাহাট্টা ইকো পার্ক
আরও পড়ুন: পাথরা – পশ্চিম মেদিনীপুরের মন্দির-গ্রাম
এবছর বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের থিম ‘আমাদের পৃথিবী পুনরুদ্ধার’। অনেকেই বুঝতে পারছেন, এটি কেবল চমক দেওয়ার কথা নয়। পৃথিবীকে আমরা যদি দূষণের থেকে পুনরুদ্ধার না করি, প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের মানবসভ্যতাও ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই ইকো-ট্যুরিজমের বিস্তার ঘটানো খুবই দরকার। আজকে উল্লেখ করা গন্তব্যের কোনো একটিতে ঘুরে আসুন। অংশ নিন পৃথিবী রক্ষার লড়াইয়ে।
ভোরের আলো ট্যুরিজম প্রপার্টি, গজলডোবা
পর্যটকদের থাকার জন্য গজলডোবায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের নিজস্ব ছবির মতো সুন্দর ভোরের আলো ট্যুরিজম প্রপার্টি। আর লামাহাট্টায় পেয়ে যাবেন প্রচুর হোমস্টের বন্দোবস্ত। তাহলে আর দেরি কেন? এখনই বেড়াতে যাওয়ার আয়োজন শুরু করে দিন। বুকিং এবং অন্যান্য তথ্য জানতে যোগাযোগ করুন –
West Bengal Tourism Development Corporation Ltd
DG Block, Sector-II, Salt Lake
Kolkata 700091
Phone: (033) 2358 5189, Fax: 2359 8292
Website: https://www.wbtdcl.com/
Email: visitwestbengal@yahoo.co.in, mdwbtdc@gmail.com, dgmrwbtdc@gmail.com