No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    পূর্ব কলকাতা জলাভূমি : মহানগরের কিডনি

    পূর্ব কলকাতা জলাভূমি : মহানগরের কিডনি

    Story image

    লকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে বা দক্ষিণ থেকে উত্তরে পৌঁছতে আপনি যখন পূর্বদিকের ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের পথ ধরবেন, তখন রাস্তার এক পাশের নাগরিক জৌলুস যদি আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, তাহলে আপনি তাকাতেই পারেন এর ঠিক উল্টো দিকে।‌ দেখতে পাবেন, এক বিস্তীর্ণ জলাভূমি, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি (East Kolkata Wetlands)। কলকাতার আবর্জনাকে প্রাকৃতিক ভাবে পরিশোধন করে সম্পদে পরিণত করছে এই জলাভূমি। তাই এর আরেক নাম কলকাতার কিডনি।

    কলকাতার একপাশ দিয়ে বয়ে চলা এই জলাভূমি কীভাবে লাভ করলো রামসার সাইটের স্বীকৃতি? এর কৃতিত্ব অনেকটাই ড. ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ-এর। কৃষি বাস্তুতন্ত্রের উপদেষ্টা ড. ঘোষ এই জলাভূমির ওপর নিরলস গবেষণা করে বিশ্ববাসীর কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরেন।

    প্রায় ১২৫ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে শান্তভাবে বয়ে চলা  এই জলাভূমির পাশে বসবাসকারী মানুষেরা নগরের বর্জ্য জলকে একদম প্রাকৃতিকভাবে পরিশোধিত করে   নগরকে করে তুলছে সুজলা, সুফলা। মাছে-ভাতে পালন করছে কলকাতাবাসীকে; শহুরে ক্যাকোফোনির পাশে এই অংশ বাঁচিয়ে রেখেছে পাখির কলকাকলিকে, ধরে রেখেছে জীববৈচিত্র্য। শুধু তাই নয় স্থানীয় অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেও এই জলাভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই, ২০০২ সালের ১৯ অগাস্ট পূর্ব কলকাতা জলাভূমি লাভ করে রামসার সাইটের শিরোপা।

    ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর পৃষ্ঠপোষকতায় ইরানের রামসারে একটি পরিবেশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি জলাভূমি সংরক্ষণ এবং সেই জলাভূমির সম্পদের স্থিতিশীল ব্যবহারের বিষয়ে জাতীয় পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রদান করে। বিভিন্ন জলপাখির আবাস্থল হিসাবেও এই ধরনের জলাভূমির গুরুত্ব আছে। পূর্ব কলকাতা জলাভূমি অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষেরা কলকাতার বর্জ্য জল বয়ে নিয়ে চলা এই জলাভূমির জলকে প্রাকৃতিকভাবে শোধন করে তার মাধ্যমে বিভিন্ন মাছ, শাক-সবজি চাষ করে নিজেদের রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করেছেন। রাজ্য মৎস উন্নয়ন নিগমের সর্ববৃহৎ প্রকল্প ‘নলবন ফিশারিজ প্রজেক্ট’ এই জলাভূমিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে। নানারকম জলজ প্রাণী, উভচর, সরীসৃপ, পাখি, উদ্ভিদের স্থায়ী ঠিকানা এই জলাভূমি।‌ শুধু তাই নয় অনেক পরিযায়ী পাখিও ভিড় করে এখানে। পূর্ব কলকাতা জলাভূমি শুধু জল নয়, বাতাস থেকে কার্বণ শোষণ করে কলকাতার বায়ুকেও অনেকটা দূষণমুক্ত করছে বলে শোনা যায়।

     

    কলকাতার একপাশ দিয়ে বয়ে চলা এই জলাভূমি কীভাবে লাভ করলো রামসার সাইটের স্বীকৃতি? এর কৃতিত্ব অনেকটাই ড. ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ-এর। কৃষি বাস্তুতন্ত্রের উপদেষ্টা ড. ঘোষ এই জলাভূমির ওপর নিরলস গবেষণা করে বিশ্ববাসীর কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। জীববৈচিত্র্যে ভরা এই অংশ নিজগুণেই হয়ে উঠেছে কলকাতার একমাত্র রামসার সাইট। কলকাতার ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করে আছে এই জলাভূমির ওপর, কিন্তু এই জলাভূমির প্রয়োজনীয়তা এখনও অনেকের কাছেই অজানা। কলকাতার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ উভয় ক্ষেত্রেই এই জলাভূমির গুরুত্ব অপরিসীম।

    প্রায় ১২৫ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে শান্তভাবে বয়ে চলা এই জলাভূমির পাশে বসবাসকারী মানুষেরা নগরের বর্জ্য জলকে একদম প্রাকৃতিকভাবে পরিশোধিত করে নগরকে করে তুলছে সুজলা, সুফলা। মাছে-ভাতে পালন করছে কলকাতাবাসীকে।

    রামসার সাইটের স্বীকৃতি মিললেও মাত্রাছাড়া নগরায়নের কুফল ভোগ করতে হচ্ছে পূর্ব কলকাতা জলাভূমিকে। মানুষের বিবেচনাহীন কর্মকাণ্ড এই জলাভূমিকে রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে। এই বিষয়ে Disappearing Dialogue Foundation-এর ফর্মার ডিরেক্টর নবীনা গুপ্তা বঙ্গদর্শন.কম-কে জানাচ্ছেন, “কলকাতাকে বাঁচিয়ে রাখতে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি অত্যন্ত প্রয়োজন।‌ কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, কলকাতাবাসী এই জলাভূমির বিষয়ে একেবারেই সচেতন না। ফলে মাত্রাছাড়া নগরায়ন, অতিরিক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার ভারসাম্য নষ্ট করছে জলাভূমির জন্য। এর ফলে ওই অঞ্চলে যে শাক-সবজি,‌ মাছ চাষ হয় তাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এইরকম চলতে থাকলে আমরা কলকাতাবাসীরা আর টাটকা শাক-সবজি, মাছের স্বাদ পাব না। কারণ কলকাতার বাজারের অধিকাংশ মাছ,‌ সবজি এই অঞ্চলেই উৎপাদিত হয়।”

    নবীনা আরও জানান, শুধু চাষবাসের জন্য নয়, কলকাতার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে, কলকাতার দূষণ প্রতিরোধ করতেও এই জলাভূমির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং কলকাতাবাসীর মধ্যে সচেতনতা প্রয়োজন। এই অঞ্চল কার্বণ সিঙ্ক হিসাবে কলকাতার বায়ুকেও অনেকটা দূষণমুক্ত করে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে কলকাতাকে রক্ষা করে। তাই এই অঞ্চল‌ নিয়ে সচেতনতা খুবই দরকার।

    বিশ্ব জল দিবস (World Water Day)-এ সারা পৃথিবী জুড়ে জলের গুরুত্ব আলোচ্য বিষয়। কলকাতা প্রকৃতির অপার দানের শহর। হুগলি নদীর পূর্ব পাড়ের এই শহর শিল্প সংস্কৃতিতে বারবার বিশ্বের আসনে সেরার শিরোপা লাভ করেছে। তাই শিক্ষা, শিল্পের শহর সচেতনতাতেও বিশ্বের কাছে নজির স্থাপন করে রক্ষা করবে তার প্রাকৃতিক সম্পদকে, জলকে, জলাভূমিকে এটাই লক্ষ্য হোক শহরবাসীর।

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @