No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বাংলার লোক-ঐতিহ্যের নতুন সংযোজন মজিলপুরের ‘দুর্গা পুতুল’

    বাংলার লোক-ঐতিহ্যের নতুন সংযোজন মজিলপুরের ‘দুর্গা পুতুল’

    Story image

    শিয়ালদহ থেকে নামখানা পর্যন্ত যে রেললাইন চলে গেছে, তার পশ্চিমে গেলে জয়নগর, আর মজিলপুর পড়বে পূর্ব দিকে। সুন্দরবন অঞ্চলে আদিগঙ্গার প্রাচীন প্রবাহপথে রয়েছে মজিলপুর শহর। জয়নগর অবশ্য মজিলপুরের থেকে অনেক পুরোনো জনপদ। ১৭ শতকে মজিলপুরে জনবসতি গড়ে উঠতে থাকে। আদিগঙ্গার মজাগর্ভে জনবসতি শুরু হওয়ায় জায়গাটার নাম হয় মজিলপুর। জয়নগর যেমন বিখ্যাত তার মোয়ার জন্য, তেমনই মজিলপুরে বানানো পুতুলের খ্যাতিও বাংলা ছাড়িয়ে দুনিয়ার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।

    বাংলার অঞ্চলভেদে পুতুলের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। বিষ্ণুপুরের ফৌজদার পরিবারের মহিলারা তৈরি করেন হিঙ্গুল পুতুল। হাওড়ার জেলার রানি পুতুল বিখ্যাত। হুগলির শ্যাওড়াফুলিতেও এই পুতুল তৈরি হয়। মুর্শিদাবাদের কাঁঠালিয়া, নদিয়ার নবদ্বীপ, বাঁকুড়ার পাঁচমুড়া - আরও নানা জায়গার আশ্চর্য সব পুতুল বাংলার সাংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরছে। মজিলপুরেও রয়েছে পুতুল বানানোর এক নিজস্ব ঘরানা। প্রায় দু’শতাব্দী আগের কথা। যশোহরের দত্ত জমিদারেরা মজিলপুরে এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁদের সঙ্গে এসেছিলেন কালীচরণ পেয়াদা। এই কালীচরণ পেশায় ছিলেন জমিদারের পেয়াদা, কিন্তু তাঁর আরেকটি বিশেষ গুণ ছিল। মাটির পুতুল আর দেবদেবীর নয়নাভিরাম সব মূর্তি তিনি বানাতেন। তাঁর বানানো টেপা পুতুল সবাইকে মুগ্ধ করে দিত। কালীচরণের দুই ছেলে। এঁদের মধ্যে জানকীনাথ দাস ছিলেন পুতুল বানানোয় কালীচরণের উত্তরসূরী। অনেকে বলেন, জানকীনাথের ছেলে হরিনাথই পুতুলের আলাদা ঘরানা তৈরি করেন, যা পরে মজিলপুরের পুতুলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। তাঁর বংশধর মন্মথনাথের বানানো পুতুলের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে।

    মন্মথনাথের নাতি শম্ভুনাথ দাস এখন মজিলপুরের পুতুল তৈরির ঐতিহ্যকে পরম যত্নে লালন-পালন করছেন। এখন মজিলপুরে দেখা যায় এক-খোল এবং দু-খোল ছাঁচের পুতুল। এক-খোলের থেকে দু-খোল ব্যবহার করলে তাড়াতাড়ি বেশি সংখ্যায় পুতুল বানানো যায়। তবে হাতে বানানো পুতুলও আছে। মজিলপুরের হাতে বানানো পুতুলগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মানিকপির, আটেশ্বর, দক্ষিণেশ্বর, পঞ্চানন ইত্যাদি। এবার তাঁদের নবতম সংযোজন ‘দুর্গা পুতুল’

    দুর্গা পুতুল আমরা আগে কখনও বানাইনি, নতুন কাজ। গতবছর দুর্গাপুজোর আগে এই পুতুল বানাতে শুরু করি। ‘দ্য বেঙ্গল স্টোর’ যেভাবে আমাদের কাজের প্রচার-প্রসার ঘটিয়েছে, আমার ইচ্ছে ছিল তাঁদের হাতেই এই কাজ তুলে দেবো এবং আমার এই সিদ্ধান্ত যে ভুল নয়, তার প্রমাণ পাই হাতেনাতে। দুর্গা পুতুলের চাহিদা এতই ছিল যে, যোগান দিতে হিমসিম খেতে হয়েছিল। জয়নগরের মজিলপুরে একমাত্র আমাদের ঘরেই এই ধরণের পুতুল বানানোর কাজ হয়। কারিগর বলতে একমাত্র আমি বা আমাদের পরিবারের লোকজন। এখনকার দিনে কে-ই বা কাদা চটকানোর কাজ করবে! এই পেশায় এখন কেউই আসতে চায় না। পরপর আট প্রজন্ম এই কাজ করে চলেছে। আমি অষ্টম প্রজন্ম। এক সময় জমিদারদের পেয়াদাগিরি করা ছিল আমাদের পেশা। যে পেয়াদাদের হাতে ছিল লাঠি, তা ফেলে তারা হাতে নেয় মাটি। তারপরই জন্ম নেয় মজিলপুর ঘরানার একের পর এক পুতুল।” বলছিলেন শম্ভুবাবু।

    প্রসঙ্গত, মজিলপুরে নানা রকমের পুতুল পাওয়া যায়, যেমন, আহ্লাদ-আহ্লাদী, কলসি কাঁধে মেয়ে, গ্রামীন নারী, বেনেবউ, পশুপাখি, সাহেব-মেম। পৌরাণিক দেবদেবীদের নিয়ে তৈরি হয় রাধাকৃষ্ণ, কালীয়দমন, জগদ্ধাত্রী, গনেশজননী ইত্যাদি পুতুল। আর দক্ষিণ রায়, বনবিবি, বারা ঠাকুরের মতো সুন্দরবন অঞ্চলের লৌকিক দেবদেবীদের পুতুল রয়েছে। বাংলার বাবুদের কৃত্রিমতা, ঔদ্ধত্যকে কটাক্ষ করে মজিলপুরে বাবু পুতুল বানানো শুরু হয়েছিল, সেগুলো এখনও জনপ্রিয়।

    ________________

    মজিলপুরের পুতুল অনলাইনে কিনতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

    বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের পুতুল অনলাইনে কিনতে পারেন এখানে ক্লিক করে। 

     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @