No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বিকনার ডোকরা শিল্পকে বিশিষ্ট করে তুলেছে জালির সূক্ষ্মতা 

    বিকনার ডোকরা শিল্পকে বিশিষ্ট করে তুলেছে জালির সূক্ষ্মতা 

    Story image

    কোন সুদূর অতীতে বাঁকুড়া জেলার বিক্‌না গ্রামে ডোকরা শিল্পের প্রচলন হয়েছিল তা এখন আর সেখানকার মানুষ বিশেষ মনে করতে পারেন না। কেউ কেউ বলেন, ১৫০ বছর বা তারও আগে বিক্‌নাতে প্রথম ডোকরার কাজ শুরু হয়। এই দীর্ঘ সময়ে একটু একটু করে পাল্টেছে  বিকনার শিল্পীদের কাজের ধরন। এক সময় লক্ষ্মীর ভাঁড়, চাল মাপার কুনকে কিংবা হাতি, ঘোড়া (votive ও ঘর সাজানোর জন্য)  এবং দেবদেবীর মূর্তি (গণেশ, লক্ষ্মী-নারায়ণ) তৈরির মধ্যেই যে শিল্প সীমাবদ্ধ ছিল আজ তার পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী গয়নার বাক্স, ফলের ঝুড়ি, সোপ্‌ কেস্‌, অ্যাসট্রে, ঘর সাজানোর জিনিসের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের গয়না। পুরনো দিনের হাঁসুলি (গলায় পরার গয়না বিশেষ) ছাড়াও বিক্‌নার শিল্পীদের ডোকরার কানের দুল, গলার মালা, লকেট, চুড়ি, খোঁপার কাঁটা এখন বেশ জনপ্রিয় আধুনিকাদের কাছে। 

    বিক্‌না গ্রামে প্রায় বিয়াল্লিশটি পরিবারের বাস এবং পরিবারের  সকলেই ডোকরা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি প্রয়াত শিল্পী যুদ্ধ কর্মকার এখনও গ্রামের গর্ব। তিনি ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান। কিন্তু বিক্‌নার শিল্পীদের কাজ গুসকরা বা দরিয়াপুর (বর্ধমান) এর ডোকরা শিল্পীদের কাজের থেকে কেন আলাদা? উত্তর দিলেন বিক্‌নার নবীন প্রজন্মের শিল্পী সন্দীপ কর্মকার। তাঁর মতে Solid কাজের পাশাপাশি জালি বা নেটের কাজের সূক্ষ্মতাই তাঁদের শিল্পকে বিশিষ্ট করে তুলেছে। 

    দীর্ঘ ৪০ বছরের চর্চায় নেটের কাজে তাঁরা এই নৈপুণ্য অর্জন করেছেন। আর তাছাড়া ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী ডোকরায় যে কোনো নকশা তৈরি করার দক্ষতা বিকনার শিল্পীদের আছে। কল্পনাশ্রিত হলেও নিজেদের কাজকে তাঁরা বাস্তবধর্মী বলতেই পছন্দ করেন। নারী-পুরুষের যে মূর্তি তাঁরা তৈরি করেন তাও দৈনন্দিন জীবনের নানা মুহূর্তকেই তুলে ধরে। তবে বিক্‌নার শিল্পীরা তাঁদের নারীদের শ্রমকে (কাস্তে, বঁটি, কুলো হাতে নারীর মূর্তি) যে মর্যাদায় শিল্পে রচনা করেন তা আসলে রোজকার জীবনে পুরুষ ও মহিলাদের কাঁধে কাঁধ  মিলিয়ে কাজ করার ঐতিহ্যকেই প্রতিফলিত করে। বিশেষ করে ডোকরা শিল্পে মহিলাদের সাহায্য অপরিহার্য। পুরুষ শিল্পীরা নকশা তৈরি করার পর মেটাল কাস্টিং পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে মহিলারাই প্রধান ভূমিকা নেন। লোনা মাটি (প্রথম আস্তরণ), লোটা মাটির (দ্বিতীয় আস্তরণ) প্রলেপ দেওয়া থেকে শুরু করে পিতলের টুকরো ভিতরে রেখে উপরে মাটি চাপিয়ে ঘড়িয়া তৈরি – সবটাই তাঁরা করেন।  মহিলাদের এই সাহায্যের কথা মাথায় রেখেই সন্দীপবাবু বললেন, “ওরাও নকশা করতে পারে। ওদের সে দক্ষতা আছে। কিন্তু ওঁরা যদি শুধু নকশা করাতেই ব্যস্ত হয়ে যায় তাহলে নকশা পরবর্তী কাজগুলো ঠিকভাবে হবে না আর আমরাও নকশার কাজটা নিশ্চিন্তে করতে পারব না।” এই প্রসঙ্গে তিনি স্ত্রী ঋতুপর্ণার  প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানালেন। প্রশ্ন ছিল “মহিলারা কেমন নকশা করতে পছন্দ করেন?” সন্দীপ বাবুর মতে, বেশিরভাগ মহিলাই গয়না তৈরি করতে বেশি আগ্রহী। গত সাত-আট বছরে ডোকরার গয়নায় যে নকশার বৈচিত্র্য এসেছে তা অনেকটা এই মহিলাদের হাতের ছোঁয়ার কারণেই।

    বর্ধিত দ্রব্যমূল্য, পিতলের জোগানের স্বল্পতা, আধুনিক ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদার পরিবর্তনকে মাথায় রেখেই বিক্‌নার ডোকরা শিল্পীরাও এখন তাঁদের শিল্পকে নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। আর তাঁদের এই অস্ত্বিত রক্ষার লড়াইয়ে সব সময় পাশে আছেন গ্রামের মহিলারা, যাঁদের ছাড়া এই শিল্পের বাস্তবায়ন অসম্ভব। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @