দিদিঠাকরুনের জলযাত্রা

রাঢ়-বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় লোকদেবী দিদিঠাকরুন। মূর্তি নেই। তবে বড় বড় কাঠের ঘোড়াকে দিদিঠাকরুন জ্ঞানে পুজো করা হয়। পুরোহিত তথাকথিত অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের বাগদি বাউরি মুচি চাঁড়াল ইত্যাদি জনজাতি। তবে দিদিঠাকরুনের পুজো দেয় গ্রামের সকল সম্প্রদায়ের মানুষজন। বাৎসরিক পুজো হয় বৈশাখ-জষ্ঠি মাসে। চাষের কাজে পর্যাপ্ত জল না পড়লে, গ্রামে কলেরা রোগ দেখা দিলে অথবা গ্রামে আগুন লাগলে দিদিঠাকরুনের বিশেষ পুজো যায় গ্রামবাসীর তরফ থেকে বছরের যে-কোনও সময়ে।
বাৎসরিক পুজোর সময় মহিলা পুরুষ সকলেই মানত করেন। মানত বলতে একঘড়া গঙ্গাজল আর আর এক ছড়া বিজোড় চাঁপাকলা। সঙ্গে থাকে বাতাসার হরিরলুঠ। মানত হয় দু রকমের যথা সাধারণ মানত। অর্থাৎ যে-কোনও দিন মাটির লাল-কালো ঘোড়াসহ গঙ্গাজল নিয়ে এসে দিদিঠাকরুনতলায় দিতে হবে। দ্বিতীয় প্রকার হলো - ঠারো গঙ্গাজল। পুজোর দিন ভোরবেলায় একঘড়া গঙ্গাজল ভরে মুখে গঙ্গামাটি দিয়ে এঁটে ঘড়ার গলায় ঝোলাতে হবে কলা। কেউ কেউ আবার সুন্দর একখানা মালা জড়িয়ে দেয়। এরপর সোঁচুলে সোঁকাপড়ে অর্থাৎ ভিজে অবস্থায় কোথাও না দাঁড়িয়ে একেবারে সোজা ঠাকুরতলায় যেতে হবে পায়ে হেঁটে। পুজো বলতে ওই জল নিয়ে গিয়ে ঠাকুরতলায় যে গাছ আছে তার চারপাশে ঢেলে দিতে হবে আর কলাগুলো ঠাকুরের প্রসাদে নিবেদন করতে হবে। এই জল নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য অভূতপূর্ব। সারিবদ্ধভাবে যাবে এই জলযাত্রা। সঙ্গে ঢাক ঢোল খোল কাঁসি খঞ্জনির বাজনা। গ্রামবাসীরা রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে উলু দেবে। হাঁটুগেড়ে প্রণাম করে সেই পবিত্র জলযাত্রাকে।