No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মেঘনাদ সাহা

    ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মেঘনাদ সাহা

    Story image

    প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় মেঘনাদ সাহা বিপ্লবী স্বদেশী আন্দোলনকারী নেতৃত্ববৃন্দের সংস্পর্শে আসেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং শৈলেন ঘোষ। অবশ্য বিপ্লবীদের গুঢ় আন্দোলনপন্থার কারণে ইতিহাসবিদগণের পক্ষে মেঘনাদ সাহার বিপ্লবী আন্দোলনের বিস্তারিত জানা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সেই সময় বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের স্বাধীনতা আন্দোলনে তৎকালীন আইরিশ রিভোলিউশনারি সিন ফেইন পার্টির স্বাধীনতা আন্দোলন অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। জার্মানির সহায়তায় আইরিশ অভ্যুত্থানকারীরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বেশ কিছু গুপ্ত সংগঠন তৈরি করেছিল।

    সিন ফেইন বাঙালিদের মধ্যে আলোড়ন তুলেছিল কারণ শত্রুপক্ষ ছিল একই –ব্রিটিশ, যারা এই দুটি জাতির মধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে উপনিবেশ কায়েম করে রেখেছিল। আইরিশ ন্যাশনালিষ্ট পার্টির আন্দোলন নানা দিক থেকেই উপমহাদেশীয় গান্ধীবাদী আন্দোলনের সাথে তুলনীয় ছিল। মেঘনাদ সাহা এই ধরনেরই সংগঠন অনুশীলন সমিতি এবং যুগান্তরের সাথে জড়িত ছিলেন।

    বিপ্লবী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়ে যতীন্দ্রনাথ মুখার্জি(বাঘা যতীন নামে অধিক পরিচিত) এবং পুলিন দাসের মতো নেতার সংস্পর্শে এসে তরুণ মেঘনাদ সাহা সশস্ত্র প্রতিরোধে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এবং এর ফলে ব্রিটিশ নানাবিধ চাপে তাঁর জীবন ওষ্ঠ্যাগত হয়ে যায়। একটি ঔপনিবেশিক শাসনের মধ্যে একজন পদার্থবিদের এধরনের বিপ্লবের সাথে জড়িয়ে যাওয়া খুবই বিরল ঘটনা।

    বাঙালিদের সংগঠন অনুশীলন সমিতির সাথে ১৯১৫ এর দিকে পাঞ্জাবের বিপ্লবী সংগঠন গদর পার্টির বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। তবে এই দলটির কর্মকাণ্ড পরিচালিত হত কানাডা ও সানফ্রান্সিসকো প্রবাসী বিভিন্ন বিপ্লবী নেতার মাধ্যমে। বার্লিনে অবস্থিত গদর বাহিনীর কিছু সদস্য বাঘা যতীনকে অবহিত করেন যে জার্মানির কাইজার উইলহেম ভারতীয় বিপ্লবীদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং জার্মানি এই বিপ্লবীদের অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করতে আগ্রহী। এই কর্মকাণ্ডের তদারকিতে ইন্ডিয়ান রেভোলিউশন কমিটি নামে বার্লিনে একটি সংগঠন তৈরি হয়। কাইজারের মারফত বাঘা যতীন জানতে পারেন হেনরী নামের অস্ত্রবাহী একটি জাহাজ সিঙ্গাপুর থেকে ফিলিপাইন হয়ে সুন্দরবনে ভিড়বে।

    মেঘনাদ সাহা এবং যাদুগোপাল মুখার্জিকে এই জাহাজ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে নিয়ে আসার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে ১৯১৫ এর ২ জুন, হেনরী যখন সাংহাইয়ের বন্দরে ভেড়ে, তখন ব্রিটিশ এবং ফরাসী বাহিনী জাহাজটিতে তল্লাশি চালিয়ে সব অস্ত্র উদ্ধার করে নিয়ে যায়। জাহাজটি সুন্দরবনে না এসে জার্মানিতে ফিরে যায় এবং মেঘনাদ সাহা খালি হাতে ফিরে আসেন।

    ১৯১৯ সালটি শুধু মেঘনাদ সাহার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এ বছরটি ভারতীয় মুক্তিকামী আন্দোলনের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার ঠিক পর-পরই এইবছর ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী বিতর্কিত রাওলাট আইন জারি করে। এই আইনের আওতায় যে কোনও ব্যক্তিকে সন্দেহের বশে এবং কোনো রকম আপিল করার সুযোগ প্রদান ছাড়াই আটক করে রাখা যাবে এবং তাদের আইনি সুবিধাবঞ্চিত করা যাবে। এই আইনের বিরুদ্ধে সারা ভারতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে আন্দোলনের তীব্রতা বাংলা এবং পাঞ্জাবেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই আইনের প্রেক্ষিতেই মহাত্মা গান্ধী সত্যাগ্রহ চালু করেন। ব্রিটিশ সরকার সেই সময় যেখানে সম্ভব হয়েছে কঠোরভাবে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করেছে।

    ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসারের জালিয়ানওয়ালাবাগে একটি নৃশংস ঘটনা ঘটে। বি্রটিশ কর্নেল রেজিনাল্ড ডায়ার একটি নিরস্ত্র প্রতিবাদের উপর নির্বিচারে গুলি করার আদেশ দিলে প্রচুর প্রাণহানি ঘটে। মেঘনাদ সাহা এর প্রতিবাদে লেখালেখি করেন। বিদ্যমান নৃশংসতায় মনোবল হারিয়ে তিনি পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করেন। নিজের জ্ঞান দিয়ে তিনি ভারতের উন্নয়নকল্পে মনোনিবেশ করেন।

    অন্য অনেক বিদুষকের বিপরীতে মেঘনাদ সাহা ভারতবর্ষের নানাবিধ সমস্যা যেমন: নদী ব্যবস্থাপনা, রেলওয়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারতের বিদ্যুৎব্যবস্থা এসব নিয়ে লেখালেখি করেন এবং ভারতজুড়ে এসব বিষয়ে সাংস্কৃতিক সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। তাঁর সারা জীবনের অন্যতম প্রেরণা ছিলো জাতির জন্য বিজ্ঞান সচেতনতা এবং বিজ্ঞানের মাধ্যমেই জাতির স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা। ১৯৩১ সালে তিনি Academy of Sciences of the United Provinces of Agra and Oudh প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩২ সালে তিনি এর প্রেসিডেন্ট নিয়োজিত হন।

    মেঘনাদ সাহার বিপ্লবী চরিত্রটি বাঙালি নেতৃত্বের দ্বারা প্রভাবিত ছিল, যারা গান্ধীবাদী আন্দোলনের বিপরীতে সশস্ত্র সংগ্রামে উদ্বু্দ্ধ হয়েছিল। সাহার বেড়ে ওঠার সময়কালীন রাজনৈতিক ও বৃদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশ তাঁর ক্যারিয়ারে প্রবলভাবে ছাপ রেখে গিয়েছিল। তাঁর চারিত্রিক বৈচিত্র্য তাঁর জীবনযাত্রার বৈচিত্র্য থেকেই উঠে এসেছে। বাঙালি ও ভারতীয় তরুণসমাজের কাছে তিনি হতে পারেন অন্যতম কাছের উদাহরণ এবং সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।

    (ঋণ – মুক্তমনা ডট কম

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @