No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    নজরুলের থেকে গান শিখে রেকর্ড করেছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস

    নজরুলের থেকে গান শিখে রেকর্ড করেছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস

    Story image

    ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জ তখন দিল্লির দরবারে আসতে চলেছেন। চারদিকে সাজো সাজো রব। এরকম সময়েই বরিশালে জন্ম নিয়েছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস। তাঁর ডাকনাম তাই রাখা হয় ‘জর্জ’। পরে বন্ধু আর অনুরাগীদের কাছে এই ‘জর্জ’ নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। জর্জ বিশ্বাসের পিতামহ কালীমোহন বিশ্বাস ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে তাঁকে নিজের গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ব্রাহ্ম পরিবারের ছেলে দেবব্রত বিশ্বাসকেও ‘ম্লেচ্ছ’ বলে অপমান করা হত স্কুল জীবনে। ছোটোবেলাতেই মা অবলা দেবীর থেকে ব্রহ্মসংগীত শেখা শুরু করেছিলেন জর্জ। তাঁর বাবা দেবেন্দ্রমোহন বিশ্বাস ছিলেন ব্রিটিশ শাসনের ভক্ত। সেই অন্ধভক্তিকে প্রশ্ন করেছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস। ব্রহ্মসংগীত গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছিলেন।

    রবি ঠাকুরের গান তিনি প্রথম শিখেছিলেন মায়ের কাছেই। আর মহেন্দ্র রায়ের কাছে শিখেছিলেন দেশাত্মবোধক গান। ছোটোবেলা থেকেই কিশোরগঞ্জের স্বদেশি সভায় গান গাইতেন তিনি। জর্জ বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথকে প্রথম দেখেছিলেন কলকাতায় সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের মন্দিরে ১৯২৮ সালের ব্রাহ্ম ভাদ্রোৎসবে। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন রবীন্দ্রসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী। এতদিন যে রবীন্দ্রসঙ্গীত একান্তই ছিল এলিট মধ্যবিত্তের বৃত্তে আবদ্ধ, তাকে জর্জ ছড়িয়ে দিলেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে। প্রথাগত রবীন্দ্রসংগীত প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়েছিল তাঁর। বিশ্বভারতী সংগীত সমিতির সঙ্গে তাঁর মতভেদ এমন জায়গায় পৌঁছয় যে তিনি রবীন্দ্রসংগীত গাওয়াই ছেড়ে দেন। ১৯৭১ সালের পর কোনো রবীন্দ্রসংগীর রেকর্ড করেননি তিনি। অবশ্য গণসংগীত এবং অন্যান্য গানও তিনি গেয়েছেন। গানের অনুষ্ঠান করেছেন দেশে বিদেশে। ভারতীয় গণনাট্য সংঘ এবং অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হলে তিনি গোপনে পার্টির জন্য অর্থসংগ্রহ করেছিলেন।  

    জর্জ বিশ্বাস প্রথম রবীন্দ্রসংগীত রেকর্ড করেছিলেন ১৯৩৮ সালে। হিজ মাস্টার্স ভয়েস এবং আর কিছু রেকর্ডিং সংস্থা তাঁর গান রেকর্ড করত। এরকম সময়েই তাঁর পরিচয় হয়েছিল বাংলা কবিতা ও গানের জগতে আরেক কিংবদন্তি চিরবিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। নজরুল তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন, নিজের দু’টো গান শিখিয়েছিলেন। সেই গানগুলো রেকর্ড করা হয়েছিল দেবব্রত বিশ্বাসের কণ্ঠে। তবে সেই রেকর্ড কোনোদিন প্রকাশিত হয়নি। একটি গান ছিল, “মোর ভুলিবার সাধনায় কেন সাধো বাদ”। আরেকটি গান যে কী ছিল, তা জর্জ বিশ্বাস তাঁর আত্মজীবনী ‘ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত’-এ স্মরণ করতে পারেননি। ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘যুক্তি তক্কো ও গল্প’ ছবিতে গান গেয়েছিলেন দেবব্রত। তিনি অভিনয়ও করেছিলেন ঋত্বিকের ‘কোমল গান্ধার’ ছবিতে, অতিথি শিল্পী হিসেবে। ‘ছেঁড়া তার’ এবং ‘ভুলি নাই’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন জর্জ বিশ্বাস। 

    তথ্যঋণ - আনন্দবাজার আর্কাইভ                                                       

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @