No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বড়োবাজারের সম্ভ্রান্ত দোকান ছিল ‘দয়ারামের পসারি’  

    ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বড়োবাজারের সম্ভ্রান্ত দোকান ছিল ‘দয়ারামের পসারি’  

    Story image

    স্রষ্টা কিছু নির্মাণ করলে তার নেপথ্যে যে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও তৎকালীন সময়ের কথা ফুটে ওঠে তা কালের গতিতে ফিকে হলেও নীরব সাক্ষী আজকের শহর। সময়টা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল। সে সময়ে কলকাতা শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে বেশ কিছু বাজার গড়ে উঠেছে। বৈঠকখানা, শোভাবাজার,  বাগবাজার, কলুটোলা, জানবাজার, মেছুয়া, হাটখোলা এইসব বাজার নিয়ে রমরমা হয়েছে। 

    একালের বড়োবাজার তখন অতীতে ছিল ‘বুড়ো’ (শিবের নাম) বাজার। ব্যস্ত হাটে কেনাবেচা ফুলে ফেঁপে চলত। তবে আজকের মতো ঝাঁ চকচকে এতটা সাজানো গোছানো ছিল না। সেকালেও বড়োবাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতা মিলে থিকথিকে লোক থাকতো। ছোটো ছোটো টানা গাড়ি বা গরুর গাড়িতে মালপত্র আসত। পণ্যবাহী গাড়িগুলিতে মশলা, তেল, কাপড়ের জোগান-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা হতো জীবিকার তাগিদে এই স্থানে নানা সম্প্রদায়ের মানুষ আসার পর আস্তে আস্তে অন্যান্য ব্যবসাও গড়ে উঠতে শুরু করল। গাছের নিচে কেউ বসে হুকা টানছে, রাস্তায় লংটি পরে পালোয়ান, হাটের মানুষজন, গরুর গাড়ি আর রাস্তার দু’পাশে বেশ কিছু দোকান। দোকানের সামনে ক্রেতাদের আনাগোনা। 

    সেকালের বড়োবাজারে এমনই একটি দোকান প্রচলিত ছিল ‘দয়ারামের পসারি’ বলে। ওই সময় সাইনবোর্ড বস্তুটির প্রচলন ছিল না। দোকানে কোনও সাইনবোর্ড লাগানো থাকত না বলে শুধুমাত্র লোকমুখে নামেই পরিচিত হতো। ১৭৩৪ সালে দয়ারাম দাঁ বাঁকুড়া জেলার পৈতৃক ভিটে ছেড়ে কুলদেবতাকে সঙ্গে নিয়ে পরিবার-সহ কলকাতার দর্জিপাড়ায় এসে বসবাস শুরু করেন। তারপর বড়োবাজার এলাকায় তিনি একটি মশলার দোকান দেন। পাইকারি কেনাকাটা এবং ক্রেতাদের সমাবেশে ক্রমে দোকানের পসার বাড়তে থাকে। সময়ের সাথেই দোকানের শ্রীবৃদ্ধি হয়। সাধারণ দোকানের উপার্জন থেকে এক সম্ভ্রান্ত জায়গা আসে।

    প্রভূত অবস্থার উন্নতির পর দয়ারামের নিজের বাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো। কয়েক প্রজন্ম পর সেই পুজো দেখতে স্বয়ং এসেছিলেন লর্ড ক্লাইভ। যেন বলা যায় আভিজাত্য আচার, অনুষ্ঠানে আর সুর সংগীতে বাড়ি সরগরম হয়ে উঠত। দয়ারামের ছিল দুই ছেলে। পরবর্তীতে তাঁর এক ছেলে রামনারায়ণ ওই দোকান থেকেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। ঈশ্বরের প্রতি রামনারায়ণের খুব ভক্তি ছিল, তাই তাঁর ধার্মিকতা ও স্বভাব সকলকে মুগ্ধ করত। দয়ারামের পসারি থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কয়লার খনি ও পাটের ব্যবসাও পরবর্তী সময়ে শুরু হয়। এরপর ধর্মদাস দাঁর হাত ধরে এই ব্যবসা পরের প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যায়। সেই দোকান এখন আর নেই। দয়ারামের বংশধরেরা অন্য ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছেন। সেকালের এমন পসার অহেরিব গতিতে স্মৃতিভারে উজ্জ্বল হয়ে আছে।

    ছবি - আঠারো শতকের একটি দোকান, শিল্পী উইলিয়াম সিম্পসন। 
     

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @