No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    রাসমণির স্বামীর থেকে টাকা ধার করলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর

    রাসমণির স্বামীর থেকে টাকা ধার করলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর

    Story image

    মাত্র ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে মারা গেলেন রাসমণির স্বামী রাজচন্দ্র। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে রাসমণি তখন দিশেহারা। কিন্তু ভেঙে পড়লেন না। বুঝতে পারলেন সংসারের সমস্ত হাল এবার তাঁকেই ধরতে হবে। খুব ধুমধাম করে স্বামীর শ্রাদ্ধ সারলেন। শ্রাদ্ধে অকাতরে দু’হাত ভরে দান করলেন। পুরো কলকাতা সাক্ষী থাকল সেই শ্রাদ্ধের।

    রাজচন্দ্রের মৃত্যুর আগে কলকাতার মানুষ রাসমণির নাম জানত না। কারণ রাজচন্দ্রের মতো ধনী কলকাতা শহরে সেসময় আরও অনেকেই ছিল। তাই ধনীদের স্ত্রীকে নিয়ে কেউই বিশেষ মাথা ঘামাত না। কিন্তু কলকাতার মানুষ রাজচন্দ্রের শ্রাদ্ধের পর বলাবলি করতে লাগল, ‘হ্যাঁ, রাজচন্দ্রের স্ত্রী রাসমণি দয়ালু বটে। একেবারে রানির মত স্বভাব।’ স্বামীর নাম রাজচন্দ্র হওয়ায় রাজার স্ত্রী হিসাবে 'রানি' জুড়ে গেল রাসমণি নামের আগে। লোকমুখে রাসমণি হয়ে উঠলেন ‘রানি রাসমণি’। 

    ভালোবাসার মানুষটার ছায়া হারিয়ে তখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তিনি। অন্যদিকে জমিদারি কেড়ে নেওয়ার জন্য পারিবারেরই অন্য শরিকরা ষড়যন্ত্র শুরু করল। কোম্পানি এবং রাসমণির পরিবারের কয়েকজন ভেবেছিলেন একা বিধবা নারী কী-ই বা করতে পারবে! রাসমণির অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তারা যখন বিশাল জমিদারি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করল, ঠিক তখনই রাসমণি সমস্ত শোক ভুলে জমিদারির হিসেবনিকেশ দেখা শুরু করলেন।

    ঠাকুরবাড়ির প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন রাজচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এক সময় বিদেশ যাত্রার উদ্দেশ্যে দ্বারকানাথ দু'লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন রাজচন্দ্রের কাছ থেকে।  রাজচন্দ্রের মৃত্যুর পর দ্বারকানাথ সদ্য বিধবা রাসমণির কাছে এসে তাঁদের জমিদারির ম্যানেজার হতে চান বলে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। এদিকে রাসমণি চান দ্বারকানাথের কাছে দু'লক্ষ টাকা ফেরত পেতে। স্বামীর এত ঘনিষ্ঠ বন্ধু দ্বারকানাথ, তাঁকে জমিদারির ম্যানেজার হিসাবে নিযুক্ত করবেন, নাকি তাঁর কাছে পাওনা দু'লক্ষ টাকা চাইবেন! বড়ই চিন্তায় পড়লেন রাসমণি।

    আরও পড়ুন
    প্রথম বাঙালি আইসিএস

    শেষমেশ রাসমণি ঠিক করলেন দ্বারকানাথের কাছ থেকে পাওনা নগদ টাকাটাই ফেরত চাইবেন। চাইলেনও। এদিকে দ্বারকানাথ জানালেন যে, তাঁর কাছে সেই মুহূর্তে দু’লক্ষ টাকা নগদ নেই। চিন্তায় পড়লেন রাসমণি। কিন্তু বুদ্ধিমতী রানি তখন দ্বারকানাথকে বললেন ঠাকুরবাড়ির অনেক জমি জায়গা রয়েছে, অতএব তাকে দু'লক্ষ টাকা সমমূল্যের জমি লিখে দিলেও চলবে। এই চুক্তিপত্রে রাজি হলেন দ্বারকানাথ। জমির দলিলাদি গ্রহণের পর রাসমণি দ্বারকানাথকে জানালেন, তাঁর জামাতাও এস্টেটের ম্যানেজার হতে চায়, নিজের লোককে তিনি কীভাবে আশাহত করবেন, অতএব দ্বারকানাথ যেন কিছু মনে না করেন।

    যদিও বেশ কয়েকবছর পর রাসমণি ধীরে ধীরে বিষয় সম্পত্তি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে থাকেন। ইতিমধ্যেই তার কিছু বছর আগে তিনি শ্রী রামকৃষ্ণের দেখা পেয়েছেন। জমিদারির সব দায়দায়িত্ব তুলে দিলেন মাথুরবাবুর হাতে। রানি রাসমণি থেকে আবার শুধুই রাসমণি হয়ে গেলেন। কালীমায়ের পূজা এবং সাধন ভজন করে দিন কাটাতে থাকলেন।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @