বর্ষায় অপরূপ দার্জিলিং

বর্ষার মরসুমে যখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ে, অবগুণ্ঠন সরিয়ে তখন যেন উন্মুক্ত হয়ে যায় দার্জিলিংয়ের মায়াবী সৌন্দর্য।
বৃষ্টি উপভোগ করতে যদি ভালোবাসেন, আপনার গন্তব্য হতে পারে দার্জিলিং। সংকটের এই মুহূর্তে দার্জিলিং আপনাকে এক নিবিড় প্রশান্তির খোঁজ দেবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার লকডাউনের পর এই জেলার দরজা ইতিমধ্যেই পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে। পাহাড়ি শহরটি ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। টানা তিন মাস ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকার পর হোটেল, হোম স্টে, রিসর্টগুলি আলোর আশায় প্রতীক্ষা করছে অধীর আগ্রহে।
ভ্রমণপথ
ব্যস্ত রাস্তা
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০০০ ফুট উঁচুতে ছবির মতো সুন্দর হিল স্টেশন দার্জিলিং। পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা এই শহরকে আরও রাজকীয় করে তুলেছে। গ্রীষ্ম এবং বর্ষা-পরবর্তী সময়ে দার্জিলিং হয়ে ওঠে বাংলার এক প্রধান ভ্রমণস্থল। এখানে কত পর্যটকই একাধিকবার এসেছেন। দার্জিলিং কখনই পুরোনো হয় না। মনোরম সবুজ চা বাগানে ঘেরা এই শহরের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যও অনন্য। সব মিলিয়ে সারা বিশ্বের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে দার্জিলিং।
কুয়াশায় ঢাকা পাহাড়
বৃষ্টিভেজা সড়ক
মুষলধারে বৃষ্টি
ডাকবাক্স
একাকী পথচারী
দৃষ্টি নিবদ্ধ পথ
যখন আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার থাকে, তুষারে ঢাকা শৃঙ্গগুলি স্পষ্ট দেখা যায়, ওই সময়েই পাহাড়ে যেতে আমরা বেশি পছন্দ করি। তবে বর্ষায় দার্জিলিং যাওয়ার মজা অন্যরকম। তখন গাছপালা অনেক বেশি সতেজ থাকে। সবুজ চা বাগান হয়ে ওঠে আরও বেশি প্রাণবন্ত। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দ্রুত চলাফেরা করে আকাশের মেঘেরা। প্রকৃতির অন্যরকম রূপ দৃশ্যমান হয়। অন্য সময়ের থেকে বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আকাশ। দার্জিলিংয়ের বিশুদ্ধ সৌন্দর্য ফুটে ওঠে বর্ষায়। আরেকটা সুবিধে হল, এই সময়ে ভিড় প্রায় থাকেই না। অনেক কম দামে আপনি হোটেল পেয়ে যাবেন বর্ষাকালে। প্রায় ফাঁকা ম্যাল রোডে আপনি মেঘের ভিতর দিয়ে হাঁটতে পারবেন। পাহাড়ের ধারে যে কোনো ক্যাফের কর্নার সিটে বসে গরম কফির কাপ হাতে উপভোগ করতে পারবেন বর্ষার সৌন্দর্য। বেকারির সুগন্ধ আপনাকে এক স্বর্গীয় অনুভূতির রাজ্যে পৌঁছে দেবে।
সন্ধের ম্যাল
বর্ষার অভ্যর্থনা
মনোক্রোম প্যালেট
বৃষ্টিভেজা ওক, বার্চ, ম্যাপল, চেস্টনাট, রডোডেনড্রন গাছ দার্জিলিংকে এই মরসুমে আরও মোহময়ী করে তোলে। তবে বর্ষাকালে এখানে কয়েকটা ব্যাপারে সচেতন থাকা দরকার। ভারী বৃষ্টিপাতে ধস নেমে হঠাৎ রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাইরে থাকলে আপনি আটকে যেতে পারেন কয়েক ঘণ্টার জন্য। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ড্রাইভারের ওপর ভরসা রাখবেন। তিনি আপনাকে নিরাপদে পৌঁছে দেবেন সঠিক গন্তব্যে। বর্ষায় একবার দার্জিলিং ঘুরে আসুন, মনের মণিকোঠায় তার সুমধুর স্মৃতি থেকে যাবে সারা জীবন।
সকালের মণিমুক্তো
কোনটা নেবেন?
বৃষ্টির শব্দ
কীভাবে যাবেন
দার্জিলিংয়ের সবথেকে কাছের রেলস্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি। সেখান থেকে সড়কপথে এই হিল স্টেশনে যেতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য প্রাইভেট ট্যাক্সি, শেয়ার্ড ক্যাব এবং বাস পেয়ে যাবেন।
বিমানে আসতে চাইলে আপনাকে বাগডোগরা এয়ারপোর্টে নামতে হবে। সেখান থেকে প্রাইভেট ট্যাক্সি, শেয়ার্ড ট্যাক্সি এবং বাস পেয়ে যাবেন সহজেই। দার্জিলিং আসতে সময় লাগবে চার ঘণ্টার মতো।
কোথায় থাকবেন
দার্জিলিংয়ে প্রচুর বেসরকারি হোটেল, রিসর্ট এবং হোম স্টে রয়েছে। বর্ষাকাল যেহেতু অফ সিজন, তাই যে কোনো থাকার জায়গাতেই আকর্ষণীয় ছাড় পাবেন।
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের নিজস্ব বিলাসবহুল প্রপার্টি আছে দার্জিলিংয়ে। রাজকীয় এই ট্যুরিজম প্রপার্টির প্রায় সব ঘর থেকেই তুষারধবল কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। খুব শীঘ্রই পর্যটকদের জন্য এটি খুলে যাবে। নিয়মিত আপডেটের জন্য এই ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন। নিজের মতো পরিকল্পনা করে আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে চলে আসুন দার্জিলিং।