No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী মেখলি শিল্প

    কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী মেখলি শিল্প

    Story image

    পাট সেখানে অনেক উৎপাদিত হয়। পাট থেকে বের করা হয় সুতো। আর সেই সুতো দিয়ে মেশিনের সাহায্যে তৈরি করা হয় বিছানার চাদর থেকে শুরু করে ব্যাগ, মোবাইলের খাপ, পাপোশ সহ ঘর সাজানোর অনেক উপকরণ। সেই পাট থেকে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির এই পদ্ধতির নাম - মেখলি।

    উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমা অঞ্চলে বেশ পরিচিত নাম এই মেখলি। মেখলি একসময় সেখানে বেশ জনপ্রিয় ছিল। আর মেখলি থেকেই এসেছে মেখলিগঞ্জের নাম। কালের নিয়মে আধুনিক সব সামগ্রীর সঙ্গে পেরে উঠছে না এই মেখলি। তবুও মেখলিগঞ্জের নাম ধরে রাখতে সেখানকার বহু মহিলা এখনও মেখলির চর্চায় মেতে আছেন।

    কবে শুরু হয়েছিল এই মেখলির কাজ তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারেন না। তবে কোচবিহারের মহারাজের সময়ের অনেক আগেই তা শুরু হয়েছিল। মেখলিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন এই শিল্পকলার চর্চা আজও আছে। তার মধ্যে একটি এলাকা যেমন কুচলিবাড়ি আছে তেমনই বাগডগরা ফুলকাডাবরি, নিচ তরফ, ভোটবাড়ি প্রভৃতি অঞ্চল রয়েছে। বিভিন্ন বাড়িতে গ্রামের মহিলারা কাজের ফাঁকে পাট থেকে সুতো বের করে এর কাজে নামেন। এদের মধ্যে দীপিকা রায় যেমন আছেন তেমনই শান্তি রায়, জয়ন্তী রায় সহ আরও অনেকেই আছেন। দীপিকা গ্রামের মহিলাদের মেখলির কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজেও নেমেছেন। তাঁর কথায়, এই কাজে লাভ নেই। পরিশ্রম বেশি। তাছাড়া অনেক সময় লাগে, প্রয়োজন ধৈর্য। ফলে কেউ সেভাবে কাজ করতে এগিয়ে আসেন না। তবুও তাঁরা মেখলিগঞ্জের নাম বজায় রাখতে এই কাজ করে চলেছেন। তাঁদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই কাজের ধারা অব্যাহত রাখতে তারা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ শুরু করেছেন। দীপিকার দুই মেয়ে পল্লবী ও তনুশ্রী এই কাজ শিখছে। দীপিকা মূলত কৃষিকাজ করেন। সেই কৃষি কাজের ফাঁকে এই মেখলি তাঁর কাছে বাড়তি উৎসাহের কাজ।

    বাজারে এই মেখলি বিক্রি করার কোনও কাউন্টার নেই। বিয়ের মরশুম এলে অবশ্য এর একটা বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। রাজবংশীদের মধ্যে বিয়ের মরশুমে এই মেখলা উপহার দেওয়ার একটা রীতি আজও চলে আসছে। অন্নপ্রাশনেও এর উপহার দেওয়া হয়। একেকটি মেখলি বিছানার চাদর ১৫০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। আর আসন বিক্রি হয় দেড়শ টাকায়। তবে একটি সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আলাদাভাবে চালু হলে তাঁদের অনেক সুবিধা হয় বলে দীপিকা জানান।

    মেখলি বাঁচিয়ে রাখতে প্রশাসন যেমন বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছে তেমনি অনেক স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা সমবায় তৈরি হয়েছে। এরকমই একটি সংস্থা হল তিস্তাকাজ কৃষক কল্যাণ সংঘ। সংঘের সম্পাদক হলেন স্কুল শিক্ষক সন্তোষ কুমার রায়। তিনি জানালেন, টাকার অভাবে একসময় যখন অনেকে মেখলির কাজ করতে পারছিলেন না তখন তাঁরা ব্যাঙ্কের কাছ থেকে সহযোগিতার জন্য সংঘ গড়ে তোলেন। এই কাজে প্রযুক্তিগত সহায়তা দরকার। তারা বিভিন্ন ভাবে এই কাজ প্রসারে সহযোগিতা করেছেন। কিছুদিন আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওম্যান স্টাডি বিভাগ ঐ এলাকায় যায় সমীক্ষা করতে। তাঁরা আশ্বাস দিয়ে আসে যে তাদের ইন্দোআমেরিকান প্রকল্পের মধ্যে মেখলির কাজে যুক্ত মহিলাদের কাজে লাগানো হবে। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এখন প্রশাসন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। তবে মেখলিগঞ্জে কোনও শিল্প নেই। ফলে মেখলির কাজের জন্য আধুনিক মানের মেশিন নিয়ে আসার তাগিদ কেউ অনুভব করছেন না। আর ব্যক্তিগত ভাবে কেউ আধুনিক মেশিন বসাতে পারেন না। এমনি মেশিনও সবাই বসাতে পারেন না। ফলে এর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রতিযোগিতার বাজারে একে টিকে থাকতে বেশ লড়াইয়ে পড়তে হচ্ছে। তবে কুচলিবাড়ি এলাকাতেই প্রায় তিনশো পরিবার এর সঙ্গে যুক্ত।

    মেখলিগঞ্জের মহকুমা শাসক অপ্রতিম ঘোষ জানালেন, হলদিবাড়ি পুরসভা কদিন আগে মেখলির প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। মেখলিগঞ্জ পুরসভাও প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। পঞ্চায়েত এলাকাতেও চলছে প্রশিক্ষণ। বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা তাতে যোগ দিচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠান হলে তাঁরা এই মেখলি উপহার দেওয়ার রীতি চালু করেছেন। কদিন আগেই চ্যাংরাবান্ধা উন্নয়ন বিভাগের অনুষ্ঠান হলে সব অতিথিকে তারা মেখলি উপহার দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কোচবিহারের রাসমেলায় এর স্টল চালু হচ্ছে। সবলা মেলাতেও এর স্টল দেওয়া হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে এই মেখলিকে মার্কেটিং-এর জন্য তাঁরা মেতে রয়েছেন বলে মহকুমা শাসক জানান।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @