আমি জীবনে তিন ভগবানকে মানি- ব্রহ্মা, বিষ্ণু আর শাহরুখ খান : দীপাংশু আচার্য

অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, কে কোন বিষয়ে হাসছেন, তা দেখে মানুষ চেনা যায়। হাসি আর হাস্যরসের ধরনে ধরা পড়ে জীবনবোধ। হাস্যরস হিসাবে জীবনযাপনের জড়িয়ে রয়েছে রঙ্গ, ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ, আমোদ, প্যারোডি, নির্ভেজাল হাসি, স্যাটায়ার, উইট, সারকাজম। নতুন সংযোজন স্ট্যান্ড আপ কমেডি। এই সময়ে বাংলা স্ট্যান্ড আপ কমেডির জনপ্রিয় মুখ দীপাংশু আচার্য। তিনি একাধারে কবি, গীতিকার, অভিনেতা, স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান। মীরাক্কেল থেকে তাঁর যাত্রা শুরু। তারপর এনজয় গুরু, ইউটিউব চ্যানেল Late 66a, রেস্ট ইন প্রেম আর আড্ডা নামক ছবিতে অভিনয়, লাইভ কমেডি শো তাঁকে জনপ্রিয়তা দিয়েছে। তাঁর লেখা ‘কিচ্ছু চাইনি আমি’, ‘সবাই চুপ’, ‘বন্ধুরা এলোমেলো’, ‘রাইকিশোরী’ গানগুলি মুখে মুখে ফেরে। দীপাংশুর অভিনীত নতুন ছবি পিস রেট সদ্য মুক্তি পেয়েছে ইউটিউবে। সেই ছবি আর তাঁর অন্যান্য কাজ নিয়ে বঙ্গদর্শন.কম-এর সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা দিলেন দীপাংশু আচার্য। তবে দীপাংশু আচার্যের সঙ্গে আড্ডায় স্ট্যান্ড আপ কমেডির প্রসঙ্গ আসবে না, তা কি হয়? বাংলা স্ট্যান্ড আপ কমেডির বর্তমান-ভবিষ্যৎ আর নিজস্ব জীবনবোধ নিয়ে অকপটে বললেন দীপাংশু আচার্য।
আপনার শিল্পীস্বত্ত্বার অনেকগুলি দিক রয়েছে। কবি, গীতিকার, অভিনেতা, স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান। ‘কিচ্ছু চাইনি আমি’ প্রবল জনপ্রিয়। আরও অনেক জনপ্রিয় গান লিখেছেন। নতুন কি কাজ করছেন বা করার পরিকল্পনা করছেন?
দীপাংশুঃ প্রথমেই বলব নতুন ছবির কথা। ছবির নাম পিস রেট। মূল চরিত্রে আমি অভিনয় করছি। সঙ্গে আছেন সায়ন ঘোষ আর অনুরাধা মুখোপাধ্যায়। পরিচালক রূপম দত্ত। এটাই ওঁর প্রথম ফিচার ফিল্ম। এছাড়া আমি ২০১৭ সাল থেকে কলকাতা কমেডিয়ানস গ্রুপের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। বিভিন্ন স্ট্যান্ড আপ কমেডির শো করি। কর্পোরেট শো করি। এছাড়া গান লিখছি। ছবির জন্যে, অ্যালবামের জন্য গান লিখছি।
আপনি তো আগেও কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন। রেস্ট ইন প্রেম, আড্ডা। পিস রেট ছবির চরিত্র সম্পর্কে কী বলবেন?
দীপাংশুঃ এই ছবিতেই আমি প্রথমবার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছি। গল্পটাও অন্যরকম। আমার চরিত্রের নাম অমৃত গিরি। যে পিএইচডি করছে। গবেষণার বিষয় শান্তি। খাওয়া, নেশা, যৌনতা, ভ্রমণ, ঘুম, এরকম নানা দৈনন্দিন খুঁটিনাটি বিষয়ে কতটা শান্তি আর কতক্ষণের শান্তি তার হিসেব করতে থাকে অমৃত। একসময় তার জীবনই অশান্ত, অস্থির, পাগলাটে হওয়া শুরু করে। অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। এরকম সময়ে সে একটা এজেন্সির হদিশ পায় যারা টাকার বিনিময়ে শান্তি বিক্রি করে। এভাবেই গল্প এগিয়েছে। সিনেমাটা দেখা যাচ্ছে রূপমস রিভিউ ইউটিউব চ্যানেলে (Rupams Review Youtube Channel)।
আপনার সঙ্গে আলাপচারিতায় অবধারিত ভাবে চলে আসে স্ট্যান্ড আপ কমেডির প্রসঙ্গ। মীরাক্কেল দিয়ে শুরু। তারপর টেলিভিশন, সামাজিক মাধ্যম আর লাইভ কমেডি শো, ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন বিষয়ে মজাচ্ছলে ভিডিও কন্টেন্ট বানানো। এই দীর্ঘ যাত্রায় বাংলা স্ট্যান্ড আপ কমেডির কী পরিবর্তন দেখতে পান? আপনার পারফরমেন্স আর বিষয়বস্তুরই বা কী পরিবর্তন হয়েছে?
দীপাংশুঃ আমার বাবা ছিলেন ম্যাজিশিয়ান। তিনি মজার ছলে অনেক ম্যাজিক উপস্থাপনা করতেন। সেখান থেকেই আমি কমেডির প্রতি আকর্ষিত হই। তারপর বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুকুমার রায়, চার্লি চ্যাপলিনের সম্বন্ধে জানতে পারি। তবে আমরা যখন মীরাক্কেলে পারফর্ম করতাম, তখন স্ট্যান্ড আপ কমেডি ব্যাপারটাই বাংলা তথা ভারতে আসেনি। আমিও সেই বিষয়ে কিছু জানতাম না। ওই ফর্ম্যাটের শো-কে ঠিক স্ট্যান্ড আপ কমেডি শো বলাও যায় না। ওখানে আমরা জোকস বলতাম, যার অনেকগুলোই প্রচলিত জোকস। প্যারোডি করতাম। সেইসময় ধ্যাত্তেরিকা বলে একটা শো হতো টিভিতে। তারপর ধীরে ধীরে মুম্বইয়ের হাত ধরে স্ট্যান্ড আপ কমেডি (Stand Up Comedy) ভারতে জনপ্রিয়তা পেল। আমরাও দেশি-বিদেশি কমেডিয়ানদের দেখতে শুরু করলাম, কমেডির সূক্ষ্ম বিষয়গুলি সম্পর্কে জানলাম। সেইমতো বিষয়বস্তু, উপস্থাপনা, দুইয়েরই বদল হয়েছে। টেলিভিশনে বিষয়বস্তু নিয়ে অনেক সেন্সরশিপ থাকে। সামাজিক মাধ্যমে বা লাইভ শো-তে তা থাকে না। তারপরেও সায়ন আর আমি একসঙ্গে এনজয় গুরু-র মতো শো করেছি, যেখানে অনেক বিতর্কিত বিষয় নিয়ে মজা করেছি। সেগুলো উতরে গিয়েছে। আগে সিস্টেমকে প্রশ্ন করতাম খুব। তারপর ধীরে ধীরে অন্য বিষয়বস্তুকেও নিজের পারফরমেন্সের মধ্যে আনতে শুরু করি। এখন নিজের জীবন, ছোটোবেলা, চারপাশে যা ঘটে রোজ- সেসবই আমার কমেডির বিষয়বস্তু। তবে বাংলা স্ট্যান্ড আপ কমেডির বাজার বলতে যা বোঝায় তেমন বাজার তো একেবারেই নেই। কারণ বাংলা স্ট্যান্ড আপ কমেডির তেমন গ্রহণযোগ্যতা দর্শকমহলে এখনও তৈরিই হয়নি।
পিস রেট ছবির অভিনেতা ও পরিচালক। বাঁদিক থেকে যথাক্রমে অনুরাধা, রূপম, দীপাংশু, সায়ন
কিন্তু কেন? বাংলার সংস্কৃতি তো হাসি, মজা, কমেডিতে ভরপুর। এখানে সাহিত্য, শিল্প, রাজনৈতিক বোধ বা দৈনন্দিন জীবন- সবেতেই কমেডির অবাধ গতি। তবে বাংলা স্ট্যান্ড আপ কমেডির সেই আকর্ষণ কেন তৈরি হচ্ছে না? যেখানে অন্যান্য মেট্রো শহরগুলিতে স্ট্যান্ড আপ কমেডি অত্যন্ত জনপ্রিয়। আর মুম্বই, দিল্লির বিখ্যাত কমেডিয়ানরা কলকাতায় শো করতে এলেও তো হল ভরে যায়।
দীপাংশুঃ সেটার কারণ ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় উপস্থাপনা বা বিষয়বস্তু দুটিই। বাংলা স্ট্যান্ড আপ কমেডিকে জনপ্রিয় করতে হলে এই দুটি ক্ষেত্রেই নতুনত্ব আনতে হবে। অনেক বাংলা কমেডিয়ানই পুরোনো প্রচলিত জোকস বলেন, বা হিন্দি কমেডিয়ানদের জোকসগুলির বঙ্গানুবাদ করেন। তেমন কোনও কমিউনিটি তৈরি হয়নি। বাংলায় স্ট্যান্ড আপ কমেডি পুরোপুরি লার্নিং স্টেজে আছে। খুবই বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ বা কোনও কোনও গ্রুপ বাংলাতে স্ট্যান্ড আপ কমেডি করার চেষ্টা করছে। শিলাদিত্য চ্যাটার্জি করছেন। আরও দু-একজন করেন। অনেকেই আছেন, ভালো কাজ করছেন, তবে বেশিরভাগই হিন্দিতে বা বাংলা-হিন্দিতে মিশিয়ে স্ট্যান্ড আপ কমেডি করছেন। কারণ হিন্দিতে কমেডি করলে কাজের সুযোগও বেশি। যেমন অনির্বাণ দাশগুপ্ত এখন মুম্বইতে থাকেন। সৌরভ ঘোষ, ঋতব্রত দাস, ঋভু গাঙ্গুলি এঁরা হিন্দি বা ইংরেজিতে কমেডি করেন। কেউ যখন স্ট্যান্ড আপ কমেডিকে পেশা হিসাবে নেন, তখন তিনি চান জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পরিচিতি। বাংলায় স্ট্যান্ড আপ কমেডি করে সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়বস্তু আর উপস্থাপনার কারণেই কিছুটা। দর্শকেরা জাতীয়, আন্তর্জাতিক স্তরের কমেডিয়ানদের রোজ দেখছেন। তাঁরা হয়তো আমাদের কাছ থেকে আরও অন্যরকম কিছু আশা করেন, যা তাঁরা পাচ্ছেন না। আর জোকস আর স্ট্যান্ড আপ কমেডি এক নয়। এই দুইয়ের মধ্যে কোথাও একটা গুলিয়ে যায় অনেকেরই। স্ট্যান্ড আপ কমেডি একধরনের লাইভ আর্ট ফর্ম। অনেকটা একক থিয়েটারের মতন। এখানে দর্শকের সঙ্গে যুক্ত হতে গেলে আমাদের কমেডির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আরও চর্চা করতে হবে পারফর্মার হিসাবে। টপিকাল বা পলিটিকাল কমেডি হয়, যেটা বরুণ গ্রোভার করেন, অ্যানেকডটাল কমেডি বা গল্প বলা, যা করেন জাকির খান, অবজারভেশনাল কমেডি, যা করেন বিপুল গোয়েল, অভিষেক উপমন্যু। এইসব দিকগুলো নিয়ে আমাদের আরও ভালোভাবে জানতে হবে, শিখতে হবে। বিদেশিদের মধ্যে আমার প্রিয় স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান জর্জ কার্লিন, বিল হিকস। বাংলা স্ট্যান্ড আপ কমেডি বেশিরভাগই ওয়ার্ড-প্লে ভিত্তিক, অর্থাৎ কথার মারপ্যাঁচ। শিব্রামীয় ধরন। বাকি সম্ভাবনাগুলোও খতিয়ে দেখতে হবে আমাদের। বাংলাতে ওপেন মাইকেরও তেমন চল নেই। এত কপি করা, প্রচলিত জোকস বলার অভ্যাস, এগুলো বোধহয় আরও পিছিয়ে দিচ্ছে বাংলা স্ট্যান্ড আপ কমেডিকে। এক কথায় বলা যায়, বাংলার স্ট্যান্ড আপ কমেডি বাংলা স্ট্যান্ড আপ কমেডি নয়, বরং মিশ্র ভাষার কমেডি এবং কিছুক্ষেত্রে অনুকরণধর্মী।
দীপাংশু আচার্য আর সায়ন ঘোষের এনজয় গুরু
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কলকাতা কমেডিয়ানস (Kalkutta Komedians) গ্রুপ তৈরি হয়েছিল ২০১২ সালে। তারা শো করছে। নতুনদের নিয়ে কাজ করছে। আপনিও সেই গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। এই গ্রুপ বাংলা স্ট্যান্ড আপ কমেডির বাজারে কীভাবে ছাপ রাখছে বলে মনে করেন?
দীপাংশুঃ আমরা নিজেদের কাজ করছি। লাইভ শো করি, কর্পোরেট শো করি। এটা কলকাতার প্রথম স্ট্যান্ড আপ কমেডি গ্রুপ। বেশ কিছু নতুন ছেলেমেয়ে আমাদের গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত আছেন। ভাস্কর, জয়ন্ত শীল প্রত্যেকেই খুব প্রতিভাবান স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান (Stand Up Comedian)। আমাদের গ্রুপ যিনি তৈরি করেছেন এবং চালান, তিনি একজন জার্মান। নাম রাওউফ গ্যাঞ্জি (Raouf Gangjee)। বহুবছর ধরে কলকাতায় আছেন। লাইভ শো-গুলিতে তিনি প্রথমে পারফর্ম করেন। তারপর নতুন ছেলেমেয়েরা কিছুক্ষণ পারফর্ম করেন। তারপর আমার একটা একঘণ্টার পারফরমেন্স থাকে। কর্পোরেট শো করি। কিন্তু আমি স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হিসাবে মুখ হয়ে উঠিনি। যাঁরা আমার শো দেখতে আসছেন, তাঁরা কেউ মীরাক্কেল, কেউ টুম্পা বা পুটকিভাই দেখে আসছেন। শুধুমাত্র স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান বলে আমার শো দেখতে খুব বেশি মানুষ বোধহয় আসছেন না। ওই যেটা বললাম, বাংলা স্ট্যান্ড আপ কমেডির ছোট্ট ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত আমরা সবাই এখন শিখছি। এক বিখ্যাত কমেডিয়ানের উক্তি রয়েছে যে, একজন কমেডিয়ানের নিজস্ব ধারা তৈরি হতে ১০-১৫ বছর লাগে। গোটা বাংলা স্ট্যান্ড আপ কমেডির ইন্ডাস্ট্রিরই তো অত বয়স নয়।
স্ট্যান্ড আপ কমেডির বিষয়বস্তু হিসাবে ট্রোলিং বা ডার্ক হিউমার- এই নিয়ে প্রচুর বিতর্ক চলে। এই বিষয়ে শিল্পীর স্বাধীনতার বিরুদ্ধে একপক্ষ বারবার প্রশ্ন তোলে। শিল্পীর স্বাধীনতা কেড়ে নিলে শিল্প বাঁচে না। কিন্তু এই বিষয়ে শিল্পীরই কী আরও দায়িত্ববান হওয়া উচিৎ নয়?
দীপাংশুঃ হ্যাঁ। বিতর্কটা হয় মূলত সীমানাটা নিয়ে। কিন্তু সীমানা কোনটা, সেটা কে ঠিক করবেন? প্রত্যেকের বেড়ে ওঠা, জীবনদর্শন, ভাবনা আলাদা। এটা শিল্পীরাই খানিকটা ঠিক করেন। সমাজও তো পলিটিক্যালি ঠিক নয় সবসময়। স্ট্যান্ড আপ কমেডিতে এই বিষয়ে দুটো কথা ব্যবহৃত হয়। পাঞ্চিং আপ আর পাঞ্চিং ডাউন। পাঞ্চিং আপ অর্থ আমার থেকে সামাজিক বা আর্থিক ভাবে যাঁরা উঁচুস্তরে আছেন, তাঁদেরকে নিয়ে মজা করা, আর পাঞ্চিং ডাউনের অর্থ আমার থেকে সামাজিক বা আর্থিকভাবে নিচের স্তরে থাকা মানুষদের নিয়ে মজা করা। প্রথমটা গ্রহণযোগ্য, দ্বিতীয়টা নয়। এটা আমি শিখেছি, এই মানসিকতা তৈরি করেছি স্ট্যান্ড আপ কমেডি শিখতে শিখতে। এই মুহূর্তে আমার জীবনবোধ আমাকে এই সমস্ত ট্রোলিং উপভোগ করতে বাধা দেয়। যেমন- দীপিকা পাড়ুকোনকে নিয়ে বেশ কিছু মিম দেখলাম, যাতে রীতিমতো অস্বস্তি হয়েছে। তবে এই ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করলে তাঁকে একঘরে করা বা গ্রেপ্তার করার পক্ষপাতী নই। তেমন হলে তাঁর শো দেখব না।
সম্পূর্ণ সহমত। আচ্ছা, স্ট্যান্ড আপ কমেডির ক্ষেত্রে একজন কমেডিয়ান কীভাবে দর্শকের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেন? শুধু পরপর জোকস বলে গেলে তো তা সম্ভব নয়।
দীপাংশুঃ না। এটা আসলে একটা অ্যাক্ট। এমন একটা আবহ তৈরি করতে হয়, যা দর্শকদের ছুঁয়ে যাবে, যা দর্শকদের খুব চেনা। নিজের ছোটোবেলা, জীবনের কথা, নিজের কোনও অভ্যাসের কথা বলা। নিজেকে নিয়ে মজা করা। রুল অফ থ্রি প্রয়োগ করা। যেমন, আমি একটা জোকস বলি- “আমি জীবনে তিনজন ভগবানকে মানি। ব্রহ্মা, বিষ্ণু আর শাহরুখ খান।” আমি যখন প্রথম দুটো নাম বলছি, তখন সবাই তৃতীয় নাম হিসাবে মহেশ্বর ভেবে ফেলেছে। আমি সেই ভাবনাটাকে ভাঙলাম। কলিং ব্যাক বলে আর একরকম নিয়ম আছে। একটা জোকসের পাঞ্চলাইনকে অন্য আরেকটা জোকসে ব্যবহার করা, যাতে দর্শকরা দুটো জোকসের সঙ্গেই যোগাযোগ খুঁজে পান। আমি গত কয়েক বছরে নিজের বিষয়বস্তুকে পাল্টেছি। রাজনৈতিক, ধর্মীয় ব্যাপারে জোকসের বদলে এমন জোকস লিখি যা আমার দৈনন্দিন জীবনের কথা বলে, আমার অভ্যাসের কথা বলে। কারণ আমি এই বিষয়ে যত শিখছি, তত মনে হয়েছে, হাসি বা হাস্যরস আসলে একটা আধ্যাত্মিক যাত্রা। ওশো বলেছেন, হাসা মানে মুহূর্তে বাঁচা, অতীত, ভবিষ্যতের বাঁধন থেকে ক্ষণেকের জন্য হলেও মুক্ত হওয়া। তাঁর আরেকটা উক্তি হলো- “Seriousness is a disease”। কমেডির মাধ্যমে আমরা জীবন, জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গিকে খানিক হালকা, লঘু করে দিই, যেটা আমার কাছে দারুণ আকর্ষণীয়। এ প্রসঙ্গে বলতে চাইবো ড্যানিয়েল ফার্নান্ডেজের কথা। ওঁর ১ ঘণ্টার একটা স্পেশ্যাল শো রয়েছে ইউটিউবে, নাম শ্যাডোজ। উনি মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন বেশ কিছুদিন। কাউন্সেলিং ও অন্যান্য চিকিৎসা করাতে হয়েছিল। উনি নিজের জীবনের কথা বলছেন। শুরু করছেন এইভাবে- “আমি একটা অচেনা লোকের (কাউন্সিলার) কাছে গেলাম, কয়েক হাজার টাকা খরচ করলাম, আর তাঁকে আমার জীবনের সব কথা বললাম।” আর শেষ হচ্ছে এভাবে- “এখন আপনারা আমাকে কয়েক হাজার টাকা দিচ্ছেন, আর আমি আমার গল্প আপনাদের শোনাচ্ছি।” গোটা ব্যাপারটা কী ইন্টারেস্টিং! আর আমি চেষ্টা করি পারফর্ম এমনভাবে করতে, যাতে মনে হয় বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছি।
শেষ প্রশ্ন- স্ট্যান্ড আপ কমেডির দর্শক মূলত শহুরে মধ্যবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এর বাইরে বেরোতে কেন পারছে না কেউ?
দীপাংশুঃ স্ট্যান্ড আপ কমেডির একজন শিক্ষার্থী হিসাবে এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া খুব মুশকিল। বিষয়বস্তু দিয়ে তাঁদের কাছাকাছি পৌঁছাতে হবে। আমার মা যেমন ইন্টারনেটের ব্যবহার তেমন জানেন না, স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানদের নাম শোনেননি। মা-র পছন্দ হবে, এমন জোকস আমি এখনও লিখতে পারিনি।