শক্ত হাতে করোনা মোকাবিলায় তৎপর মুখ্যমন্ত্রী, লাগু হয়েছে কড়া আইন

কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতে প্রথম এক ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে। তখন থেকেই পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন, যাতে এই প্রাণঘাতী জীবাণু কোনোভাবেই আমাদের রাজ্যে ঢুকে পড়তে সক্ষম না হয়।
এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করতে দ্রুত বেশ কিছু বৈঠক করেছেন তিনি। রাজ্যবাসীকে বারবার স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া-সহ আরও বেশ কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা পালন করার আর্জি রেখেছেন সাধারণ মানুষের কাছে। এরই মধ্যে করোনা আক্রান্ত এক যুবক লন্ডন থেকে কলকাতায় ফিরে ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব নিয়ে স্বাস্থবিধি ভাঙতে থাকে। তার প্রভাবশালী অভিভাবকরাও এতে মদত জোগান। রাজ্যে প্রথম করোনার থাবায় আতংক তৈরি হয় আম-মানুষের মনে। এক টেলিভিশন বক্তৃতায় তখন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেন, কোনো ব্যক্তি যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার অধিকার তার নেই। কলকাতায় দ্বিতীয়বার যখন আরেকজনের শরীরে করোনা ভাইরাস মেলে, গোটা অ্যাপার্টমেন্টকে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার রাতে হাবরার এক তরুণীর দেহে এই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। তাকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তি চিকিৎসা এড়িয়ে গেলে, কোয়ারেন্টিনে না গেলে, পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
আরও পড়ুন
পিছু হটছেন রবীন্দ্রনাথ, পুজো পাচ্ছেন গডসে– দেশপ্রেমের নামে এই রাজনীতি অভ্যন্তরীণ ঐক্য-বিরোধী
করোনার প্রকোপ থেকে জনগণকে নিরাপদ রাখার বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনের কাছে সব সময়েই অগ্রাধিকার পায়। এই ভাইরাসের ছড়িয়ে যাওয়াকে প্রতিহত করা, আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা – প্রশাসন সব কিছুই সুষ্ঠুভাবে সামলাচ্ছে। সংকটের এই সময়ে দরিদ্রদের জন্য থাকছে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ। এক নজরে দেখে নিই, করোনার প্রতিরোধে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন –
• হাসপাতালগুলির জন্য ১০ হাজার ভেন্টিলেটরের অর্ডার দেওয়া, পর্যাপ্ত মাস্ক এবং গ্লাভস সরবরাহের ব্যবস্থা করা।
• স্যানিটাইজার, মাস্ক, জরুরি ওষুধ, খাবার কোনোভাবেই মজুত না করার নির্দেশ।
• কেউ আতঙ্ক এবং গুজব ছড়ালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
• কলকাতা এবং জেলাগুলিতে আইসোলেশন ওয়ার্ডের সংখ্যা বাড়ানো।
• করোনা রুখতে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করে গোটা বিষয়টির দায়িত্বে একজন আইএএস নোডাল অফিসারকে নিয়োগ।
• আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে ‘এপিডেমিক ডিজাস্টার অ্যাক্ট’ লাগু করা।
• বাজারে সমস্ত জরুরি সামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহের বন্দোবস্ত করা, যাতে সাধারণ মানুষ সমস্যায় না পড়েন।
• বেসরকারি হাসপাতাল এবং ডাক্তারদের সহায়তা নেওয়া। করোনা মোকাবিলায় সরকারি এবং বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার মধ্যে সমন্বয় করতে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রিন্সিপল সেক্রেটারির অধীনে একটি স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে।
• রেশন দোকান থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭.৫ কোটি রাজ্যবাসী ৫ কেজি করে চাল পাবেন বিনামূল্যে।
মুখ্যমন্ত্রী আশাবাদী, করোনা ভাইরাসকে আমাদের রাজ্য খুব শীঘ্রই পরাজিত করতে পারবে। তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব রকমের ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষকেও সচেতন এবং সক্রিয় হতে হবে, সে কথাও বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।