মুরগির ঝোল, জাপান ও একজন বাঙালি বিপ্লবীর কথা

বাংলা আর জাপানের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তা সে বাঙালির ওকাকুরা চর্চাই হোক বা জাপানিদের রবীন্দ্রনাথ অন্বেষা, অথবা বাণিজ্যিক আদানপ্রদান। এ কথা তো সবার জানা। কিন্তু এই দুই জাতিকে রসনার সেতু দিয়ে জুড়েছে আদ্যন্ত এক বাঙালি রান্না। সে খবর রাখে ক’জন। বাঙালির রবিবারের প্রায় অনিবার্য মেনু পাতলা মুরগির ঝোলেই কয়েক যুগ ধরে মজে আছে টোকিও। কী ভাবে? সেও দীর্ঘ ইতিহাস। আর এই ইতিহাসের পরতে পরতে রয়েছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও এক বাঙালি বিপ্লবীর কাহিনি।


বাংলার মুরগির ঝোল টোকিওতে বিখ্যাত ‘নাকামুরায়ার কারি’ নামে। আর এই নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক আশ্চর্য কাহিনি। নাকামুরায়া ছিল টোকিও-র একটি বেকারি। আর সেখানেই আত্মগোপন করেন আইএনএ-র প্রতিষ্ঠাতা রাসবিহারী বসু। দিল্লি ষড়যন্ত্র মামলায় তখন তাঁর মৃত্যুদণ্ডের হুকুম হয়েছে। জাপানে এসে নাকামুরায়ায় তাঁর আত্মগোপন করার কারণ হল এই বেকারির মালিকদের পরিবার ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থক ছিলেন। পরে এই পরিবারেরই কন্যার সঙ্গে বিয়ে হয় রাসবিহারী বসুর। স্ত্রী-র অকালমৃত্যুর পর শ্বশুরমশায়কে সঙ্গে নিয়ে তিনিই নাকামুরায়াকে গড়ে তোলেন রেস্তোরা হিসেবে। কথিত আছে দীর্ঘদিন বাইরে থাকায় রাসবিহারীর মন বাড়ির রান্নার জন্য আনচান করত। আর তাই তিনি নিজের হাতে রেঁধে ফেলেন তাঁদের রেস্তোরার জন্য বাঙালির প্রাণের পাতলা মুরগির ঝোল আর ভাত। এই ঝোলের মহিমা এমনই যা অচিরেই জাপানিদের স্বাদকোরকেও জাগায় মায়া। তাই কেবল নাকামুরায়ায় নয় আজ টোকিও-র বহু রেস্তোরার মেনু কার্ডে সগর্বে নিজের উদ্ধত উপস্থিতি জানাচ্ছে ‘নাকামুরায়া কারি’।

কেমন খেতে এই নাকামুরায়া কারি? বাঙালির হেঁশেলের থেকে খুব একটা আলাদা কিছু নয়। বাছাই করা মশলা দিয়ে হালকা করে বানানো এই মুরগির ঝোল ভাতে মেখে ভোজন রসিক জাপানিরা খান তৃপ্তি করেই। যত্ন করে ভাত রাঁধার পিছনেও আছে রাসবিহারী বসুর অবদান। শোনা যায় তিনিই নাকি বাছাই করা সরু চাল জাপানে চাষ করার ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

তাই কেবল মাত্র বৈপ্লবিক স্বাধীনতা যুদ্ধেই যে বাঙালি হিসেবে তিনি অবদান রেখেছিলেন বলা যাবে না বরং বাঙালির ‘রসনার বিপ্লব’কেও সুদূর জাপানে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি। আর সে ‘বিপ্লব’-এর জনপ্রিয়তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।