No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    সত্যজিতের রবীন্দ্রনাথ এবং মেয়েটির নাম ‘চারুলতা’

    সত্যজিতের রবীন্দ্রনাথ এবং মেয়েটির নাম ‘চারুলতা’

    Story image

    মেয়েটির নাম চারুলতা, বড়ো বাড়ির বউ। রবীন্দ্রনাথের গল্পে ও সত্যজিতের সিনেমায় এই তার প্রাথমিক পরিচয়। তারপর ধীরে ধীরে গল্প ও সিনেমা চারুলতার মনের গহীনে ডুব দেয়। সে এক আশ্চর্য জগৎ। বড়োলোকের বাড়ির ছায়া ছায়া আলো আঁধারের মতো, ঘোরানো সিঁড়ি, প্রাচীন উদ্যানের মতো রহস্যঘন সে মন। গল্পে রবীন্দ্রনাথ চারুলতাকে অনেক সমঝদার করে তোলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সত্যজিতের চারুলতা অনেকটাই দৃপ্ত, ঋজু! নিজের সিদ্ধান্তে অবচল। পৃথিবীর স্বস্তির জন্য নিজের আবেগ লুকাতে জানে না। সিনেমার চারুলতার রাগ, অভিমান, প্রেম, কামনা সবটাই স্পষ্ট, জোরালো! একাকিত্বের যন্ত্রণাও গভীর, অনেকটাই বেশি গভীর। আজ আলোচনার কেন্দ্রে থাক সত্যজিতের চারুলতা। 

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নষ্টনীড়’ গল্পটিকে নির্ভর করে সত্যজিৎ রায় ‘চারুলতা’ সিনেমা নির্মাণ করেন। বলা ভালো নির্মাণ ও সৃষ্টি করেন। সিনেমার নাম প্রথমে ‘নষ্টনীড়’ হওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু সিনেমার নির্মাণ পর্বে একবার গাড়ি করে যেতে যেতে সত্যজিতের চোখে পড়ে একটি হোর্ডিং— সেখানে লেখা -‘নষ্টনীড়’ পরিচালনায় পশুপতি চট্টোপাধ্যায়। এইটি দেখার পর সত্যজিৎ সিদ্ধান্ত নেন ছবির নাম দেবেন—‘চারুলতা’। এক দিক দিয়ে ঠিক হল। চারুলতাই এই সিনেমার নিউক্লিয়াস। তাকে কেন্দ্র করেই অন্য চরিত্রগুলির উপস্থাপনা। ১৯৬৪ সালে আত্মপ্রকাশ করা এই নতুন চারুলতা সত্যিই ‘নবীনা’। আনকোরা   আধুনিক মনের চোখ থাকলে তবেই চারুলতার অন্তর স্পর্শ করা যাবে। সিনেমা দেখতে বসে ‘প্রাচীনা’ ভাব ভঙ্গি তীব্রভাবে বাতিল করতে হবে। মূল চরিত্র তিনটি— চারু, ভূপতি এবং অমল। এছাড়াও মন্দার  আর উমাপতি চরিত্রদুটি স্বল্প হলেও জোরালো ভূমিকায় রয়েছে। ব্রজ নামের ভৃত্যটি চারুর মৌনমূর্তি ভঙ্গ করতে এক আশ্চর্য ভূমিকায় আসে। এছাড়াও সিনেমায় ভূপতির বন্ধুদের একটি দল দেখানো হয়েছে। তবে গল্প হোক বা সিনেমা চারুলতা খুব বেশি মুখর না হয়েও সেইই কথক। একটি বিবাহিতা একলা মেয়ের মনস্তত্ত্ব বোঝানোর জন্য চারুলতার ভূমিকায় মাধবী মুখোপাধ্যায় অনবদ্য। অমল হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং ভৃপতি শৈলেন মুখোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথের ‘নষ্টনীড়’ অনেক বেশি শব্দ খরচ করেছেন লেখক। চারুর এই দ্বিধাকে প্রতিষ্ঠা করার একটা দায় যেন লেখক গ্রহণ করেছিলেন নিজের অজান্তে। প্রতিটা চরিত্রের মানসিক দ্বন্দ্বের জন্য কথক হিসেবে যেন স্বীকারোক্তি দিতে দিতে চলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সত্যজিতের ‘চারুলতা’ অনেক সংহত, সংক্ষিপ্ত ও স্বচ্ছ। পরিচালক চরিত্রের দ্বন্দ্ব দেখাতে চেয়েছিলেন। দেখিয়েছেন। কিন্তু কোনো চরিত্রের ভালো ও মন্দ কোনো দ্বন্দ্বেরই দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নেননি। এইখানেই তাঁর স্বকীয়তা।

    সিনেমার শুরুতে সাত মিনিট প্রায় কোনো কথা না বলিয়ে চারুর নিঃসঙ্গতাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শুধু মাঝে একবার চারু জোরালো গলায় ব্রজ চাকরকে ডাক দেয়। নীরবতা ভঙ্গ করা সে ডাক যেন নির্জনতার কনট্রাস্ট তৈরি করে। সিনেমার শুরুতে চারুলতার মুখ প্রশান্ত, হয়তো কিছুটা তৃপ্তও। সে সুতোর ফোঁড়ে ভূপতির নামের প্রথম ইংরেজি হরফ ‘B’ লেখে, ঠিক বিকেলবেলাপ স্বামীর জন্য চা পাঠায়, বঙ্কিমচন্দ্রের বই হাতে ভ্রমরের মতো মৃদু গুঞ্জন করে— ‘বঙ্কিম বঙ্কিম’! বাইনোকুলার নিয়ে দরজার খড়খড়ি ফাঁক করে রাস্তার ফেরিওয়ালা, পথচারীকে দেখে পরম কৌতূকে! কোনো কিছুই তাকে তেমন চঞ্চল করে তোলে না। ভূপতির খেতে বসার মুহূর্তে বসে থাকা চারু, ভূপতিকে কাছে পেতে চাওয়া দূরবীন হাতের চারু গতানুগতিক জীবনেই অভ্যস্ত। কিন্তু তৃপ্ত নয়। ভিতরে ভিতরে মেঘ জমছিল, বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার অপেক্ষায়। ভূপতি কোনোভাবেই সে ঝড়ের ইঙ্গিত পায়নি। স্ত্রীকে তিনি ভালোইবাসতেন। কিন্তু চারুলতার অভাববোধ কোথায় তা ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। তাই চারুর দাদা বৌদিকে ডাক পাঠালেন। বৌদির সঙ্গে থাকলে বুঝি চারুর ভালো লাগবে। কিন্তু প্রতি মানুষের মনের গড়ন একরকম হয় না। চারুর মনের মিল হল না মন্দারের সঙ্গে। নির্জন ঘরে জনসংখ্যা একটু বাড়ল মাত্র। সিনেমায় প্রবল ঝড়ের সঙ্গে অমলের প্রথম আবির্ভাব হল ‘হরে মুরারি’ বলতে বলতে। গল্পে অমল আগে থেকেই ভূপতির বাড়িতে থাকত। সিনেমায় চমকটা বেশি। আর ঠিক এই ঝড়, অমলের আকস্মিক আগমন চারুকে চঞ্চল করে তুলল। চারু তখন কোনো গৃহবধূ নয়, এক যুবতী মাত্র। এরপর চারু আর অমলের বন্ধুত্ব প্লটে গতি নিয়ে এল। যেন ঝোড়ো হাওয়া সব উলটপালট করে দিল। গল্পে অমল আর চারুর নিভৃত সময় যতটা বেশি, সিনেমায় সে অবসর কম। মন্দারের অনুপ্রবেশ তাদের নিভৃত আলাপচারিতায় বাধা দিয়েছে। চারুর বিরক্তি সিনেমায় স্পষ্ট। অমল কিন্তু দুই বৌঠানের সঙ্গেই সমান স্বচ্ছন্দ। মন্দাকে ‘প্রাচীনা’ আর চারুকে ‘নবীনা’ বলে একই ভঙ্গিতে। মন্দাও অমলের সঙ্গে সম্পর্কের স্বাভাবিকতায় স্বচ্ছন্দ। কিন্তু ঈর্ষাকাতর  হয় চারু। মন্দার অমলের জন্য পান সাজাতে ওর রাগ, অমলের অন্যত্র লেখা প্রকাশে আপত্তি, অমলের বিলেত যাওয়া, বিয়ে করা সবেতেই চারুর সমস্যা। আসলে অমলের প্রতি প্রবল এক অধিকারবোধ তখন চারুর গৃহস্থজীবনে ঝড় নিয়ে আসছে। চারুকে অমল বলবে ‘নবীনা’ অর্থাৎ আধুনিক নারী। সাহিত্য পড়ে চারু, লেখে চারু, সৃষ্টিশীল চারু— এখানেই সে মন্দারের থেকে আলাদা। কাপড়ে সুতোর ফোঁড় তুলতে তুলতে গীতগোবিন্দের শ্লোক বলে। চারু আর অমলের এই অন্যরকম সম্পর্ক বোঝাতে সিনেমায় সত্যজিৎ বেশ কিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই যেমন, গীতগোবিন্দের উল্লেখ। গীতগোবিন্দে রয়েছে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের কাহিনি। তাছাড়া বঙ্কিম পড়ার প্রসঙ্গে কুন্দনন্দিনীর উল্লেখ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়। যখন দুজনে বাগানে যায়, তখন বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে শুভ্র পাথরের কিউপিড মূর্তি দেখানো হয়। কিউপিড রোমান প্রেমের দেবতা। তারপর দোলনায় দুলবে চারু। পাশে শুয়ে থাকবে অমল। চারু দূরবীন দিয়ে চারিপাশ দেখবে, একটি বাড়িতে মা ও তার সন্তানকে দেখে একটু থমকে যাবে। 

    চারুলতার একাকিত্বের অন্যতম কারণ সে নিঃসন্তান। সত্যজিৎ কয়েকটিমাত্র দৃশ্যে সবকথা বুঝিয়ে দেবেন। এরপর চারুর দূরবীন সোজা যাবে অমলের দিকে। অমলের নিখুঁত সুন্দর মুখ খুব কাছ থেকে দেখবে চারু। চোখের ভাষা বদলে যাবে। অথচ ভূপতিকে দূরবীনে ধরতে পারেনি চারু। দূরবীনটা হয়তো চারুর মনের প্রতীক। চারুলতার মনে অমল ধরা পড়েছে। প্রথমবার সিনেমায় যখন অমলের বিয়ের ও বিলেত যাবার প্রস্তাব আসে আর অমল তা প্রত্যাখ্যান করে তখন চারুলতার উচ্ছ্বসিত হাসি বড্ড প্রগলভ মনে হয়। অথচ ভূপতির মনে সন্দেহ জাগে না। চারু আর অমলের সখ্য গড়িয়ে চলে এক না দেখা পরিণতির দিকে। অমলের লেখা প্রকাশ, ভূপতির জন্য তৈরি করা জুতো অমলকে উপহার দেওয়া, মন্দার প্রতি চারুর বিরক্তি সবটাই চারুর অমলমুখী হয়ে ওঠার ইঙ্গিত। সিনেমার অমলও কিন্তু চারুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল। ঘরে চারুর ফোটোগ্রাফের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা, বাক্যালাপে মগ্ন থাকা, গানের ফাঁকে চারুর চিবুক স্পর্শ করা সবটাই তাঁর মুগ্ধতার প্রকাশ। চারু এই মুগ্ধ দৃষ্টি আর নান্দনিক স্পর্শের কাঙাল ছিল। নাহলে সবই তো তার ছিল। অর্থ সম্মান, স্নেহপ্রবণ স্বামী। সম্পর্কে অনুরাগ ছিল ছিল না শুধু। নভেল পড়া মেয়েটি প্রেমের সেই রোমাঞ্চটুকু পেয়েছিল অমলের কাছ থেকে। তাতেই  মনের লাগামটা আর ধরে রাখতে পারেনি। তারপর হঠাৎ করে অমলের উপলব্ধি আর সচেতন সরে যাওয়ার আঘাত সহ্য করা সত্যি কঠিন ছিল। ভূপতি চারুকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করেছিল পরে। সাহিত্য রচনা, সাহিত্য পাঠ— সবটাই করতে চেয়েছিল। কিন্তু ততদিনে চারুর মনে অমলের ছোঁয়াচ লেগেছে। ভূপতিকে ঠিক মনের কোনখানে বসাবে চারু বুঝে উঠতে পারছিল না। এই বিহ্বলতা থেকে ‘নষ্টনীড়’ গল্পের চারু ভূপতিকে লুকিয়ে গয়না বন্ধক দিয়ে অমলকে টেলিগ্রাম পাঠায়। কারণ চারুর জন্য অমলের তরফ থেকে আর কোনো চিঠি আসে না। শুধু শ্রদ্ধায় নুইয়ে পড়া প্রণামের কথা আসে লেফাফা বন্দি হয়ে। চারুর প্রবল অভিমানী মন এই পরাজয় মানতে পারেনি। 

    সিনেমায় একদম শেষে অমলের চিঠি হাতে চারুর অঝোর কান্না ভূপতির কাছে সবটা স্পষ্ট করে দেয়। ভূপতিকে উমাপদ ঠকিয়ে ব্যবসার লোকসান করেছিল। অথচ ঘরে যে কোনোভাবে সম্পর্কে ঠকে যেতে পারেন ভূপতি তা ভাবতেই পারেননি। গল্পে অমল সম্পর্কে চারুর দুর্বলতা বোঝার পর ভূপতির রাগের প্রকাশ খুব তীব্র । নিজের লেখাগুলি আগুনে দগ্ধ করে দেনতিনি। তারপরেই চারুকে অনুভব করার চেষ্টাও করলেন মনে মনে। গল্পের চারু তখন জানালার গরাদ ধরে অশ্রুহীন অনিমেষদৃষ্টিতে বাইরের দিকে চেয়ে। গল্পের ভূপতি তার মাথায় হাত রেখে বেরিয়ে যায়। তারপর মৈশুর চলে যাবে একটি কাগজের সম্পাদক হয়ে—এমনটা ঠিক করে। চারু সঙ্গে যেতে চায়, কিন্তু প্রথমে ভূপতি বলে, ‘সে আমি পারিব না’। তারপর চারুকে সাধলেও চারু আর যায় না।  

    সত্যজিৎ রায় সিনেমার শেষটা কিন্তু একেবারেই অন্যরকমভাবে করেন। চারুর কান্নায় সিনেমার ভূপতি সবটা বুঝে ঝড়বাদল মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। চলন্ত ঘোড়ার গাড়িতে উদ্গত কান্না মুছতে বের করেন সেই রুমাল যা চারু তাঁকে সাধ করে দিয়েছিল। সেদিন চারুর অনুরক্ত আবেগ বোঝেননি ভূপতি। এখন এই কান্নার দায়বদ্ধতা তাঁরও। এরপর সিনেমার দৃশ্যে দেখানো হয় চারু ভূপতির ঘর। মনে মনে ভেঙে পড়া চারু ধোয়া শাড়ি পরে, চুল বাঁধে,  কপালে সিঁদুর পরে। ভূপতির উপর অগাধ আস্থা থেকেই এইসব করে। ভূপতি ফেরার শব্দে ব্রজ চাকরকে আলো আনতে বলে। ভূপতির পকেটে উঁকি মারে সেই সিনেমার প্রথম দৃশ্যে দেওয়া রুমাল। মনের সব শক্তি একজোট করে চারুর আন্তরিক আহ্বান শোনা যায়, ‘এসো’। চারু হাত বাড়ায়, ভূপতিও! ব্রজ আলো নিয়ে এগোতে থাকে। দর্শকের মনে উৎকণ্ঠা তৈরি হয় সিনেমার পরিণতি নিয়ে। কিন্তু তারপরেই ম্যাজেশিয়ানের মতো সত্যজিৎ রায় দৃশ্যটাকে ফ্রিজ করে দেন। কেউ কারো হাত স্পর্শ করার আগেই। মনের এক অদ্ভুত অতৃপ্তি নান্দনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সত্যজিতের ‘চারুলতা’-কে রবীন্দ্রনাথের ‘নষ্টনীড়’-এর থেকে অনেকটাই এগিয়ে রাখে। এগিয়ে রাখতে বাধ্য হয়। ক্যামেরা পিছনে ফেরে আর দেখা যায় ব্রজ একটু দূরে গোলাকার আলো নিয়ে আসতে আসতে স্তব্ধ হয়ে গেছে। মনে হয় দূরে থেকেও অমলের স্মৃতি ওই আলোর মতোই ঘিরে থাকবে ভূপতি চারুর দাম্পত্য। শেষ শটে ওই স্তব্ধ হয়ে যাওয়া দৃশ্যের তলায় ‘নষ্টনীড়’ কথাটি ফুটে ওঠে। এই শব্দগুচ্ছটি না থাকলেও চলত। তবে ‘নষ্টনীড়’ কথাটি দর্শককে ভাবতে বাধ্য করবে হয়তো এই ভেঙে যাওয়া ঘরে আগের মতোই চারু ভূপতির দাম্পত্য চলবে নিষ্প্রভ আবেগ ও দূরত্ব বজায় রেখে।

    ‘চারুলতা’ সিনেমায় একটি একলা মেয়ের মনখারাপ বড় মুনশিয়ানায় দেখিয়েছেন। অল্প কথায়, সামান্য কয়েকটি দৃশ্যের আঁচড়ে চারুলতার যন্ত্রণা দৃশ্যরূপ পেয়েছে। সন্তানহীন নারী, স্বামীর প্রবল কর্মব্যস্ততায় ঘনিষ্ঠ নৈকট্যের অভাববোধ চারুর সৃষ্টিশীল মনকে ক্ষতবিক্ষত  করেছে বারবার। এর মধ্যে অমলের সান্নিধ্য ও ঘনিষ্ঠতায় চারু ভুলস্বর্গ রচনা করে ফেলে। কিন্তু অমলের সাবধানী পদক্ষেপে চারুর নীড় ভেঙে যায়। সত্যজিৎ বা রবীন্দ্রনাথ কেউই স্পষ্ট করে বলেননি। তবে আমরা বুঝি, চারুলতার নীড় নষ্ট হয় দুইবার। একবার অমলের সঙ্গে গড়া অলীক নীড় আর আরেকবার ভূপতির সঙ্গে তৈরি দাম্পত্যের নীড়। চারুলতা সত্যিই ভূপতির খবরের কাগজের অফিসের কাগজের মতো নিষ্প্রাণ ও শুষ্ক হয়ে যায়। মেয়েদের এই ব্যক্তিগত যন্ত্রণার গল্প রবি ঠাকুর আর  সত্যজিৎ রায় দক্ষ ভঙ্গিতে ফুটিয়ে তুলেছেন। দুই শিল্পীকেই কুর্নিশ। 

    ‘চারুলতা’ সিনেমাটি বিদেশে ‘The Lonely Wife’ নামে পরিচিত। সিলভার বেয়ার, গোল্ডেন লোটাস, ওসিআইসি পুরস্কার পেয়েছে সিনেমাটি। তবে চারুলতায় সত্যজিতের গল্প কথনে একটি মনখারাপ করে থাকা lonely wife ঘুরে ফিরে আসে। ভাবতে ইচ্ছে করে, একলা ঘরে বিরহী চারুলতা যেন মাঝে মাঝেই শুনতে পায় অমলের সেই কথাগুলি— ‘জীবনের সমস্ত কিছুর মধ্যেই একটা ছন্দ, বৌঠান—দেখ — জীবন/মৃত্যু, আলো/অন্ধকার, দিন/রাত্রি, মিলন/বিচ্ছেদ— সব একটা ছন্দের মতো।’

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @