No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    দুই বাংলার অনেক গূহ্যকথা চাপিলার ঝালপোস্তে

    দুই বাংলার অনেক গূহ্যকথা চাপিলার ঝালপোস্তে

    Story image

    “মাছ আনিলা ছয় গণ্ডা/ চিলে নিলে দুগণ্ডা/ বাকি রহিল ষোল।/ ধুতে আটটা জলে পলাইল,/ তবে থাকিল আট।/ দুইটায় কিনিলাম দুই আটি কাঠ/ তবে থাকিল ছয়।/ প্রতিবাসিকে চারিটা দিতে হয়/ তবে থাকিল দুই।/ আর একটা চাখিয়া দেখিলাম মুই।/ তবে থাকিল এক;/ এখন হইস যদি ভালো মানুষের পো,/ কাটাখানা খাইয়া মাছ খান থো।”

    চাষির বউ মাছের হিসেব দিচ্ছে চাষিকে। গণ্ডা গণ্ডা মাছ উধাও নানা অজুহাতে। এমনই মাছের স্বাদ যে লোভ সামলাতে পারেনি গিন্নিও। উইলিয়াম কেরি ‘ইতিহাসমালায়’ ঠাঁই দিয়েছিলেন এই অসামান্য ছড়াটিকে। মৎস্যপ্রিয় বাঙালির অনেক গূহ্যকথা এই ছড়ায় নিহিত।

    বাংলার সঙ্গে মাছের সম্পর্ক কি আজকের! সেই কবে থেকে খাবারের পাতে মাছ না হলে বাঙালির চলে না। চন্দ্রকেতু গড়ে মাছের ছবি খোদাই করা ফলক মিলেছে। পণ্ডিতরা বলেন, এই ফলক নাকি সতেরোশো বছরের পুরোনো। বাঙালি বামুনরাও মাছের প্রেমে এমনই মত্ত ছিলেন যে দশম-একাদশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের অন্যতম স্মৃতিকার ভবদেব ভট্টকেও নাকি আসরে নামতে হয়েছিল ব্রাহ্মণের মাছ খাওয়ার রেওয়াজকে অক্ষত রাখতে। এহেন মাছপ্রিয় জাতির হেঁসেলে যে মাছ নিয়ে অসংখ্য গোপন রেসিপি থাকবে, বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশে মাছের ভাঁড়ারও তো নেহাত কম না। আজ, তেমনই একটি মাছের পদের হদিশ।

    মাছটির নাম চাপিলা। স্বাদু জলের ভারী সুস্বাদু মাছ। বিশেষ করে, ওপার বাংলার মানুষরা তো এই মাছের স্বাদে বুঁদ। তবে, এপার বাংলাতেও এই মাছের সুখ্যাতি নেহাত কম না। চাপিলাকে রাঁধাও যায় নানাভাবে। কিন্তু, পোস্ত দিয়ে চাপিলার ঝাল মোটেও পরিচিত রেসিপি নয়। অথচ, এই পদ মুখে পড়লে স্বাদ নামতেই চাইবে না জিভ থেকে। এমনই জাদু এই পদের। তাহলে আর কী, রেসিপি পড়ে বানিয়েই ফেলুন এই পদ। 

    উপকরণ :

    চাপিলা মাছ- ৮টা 
    পোস্তবাটা- ৪ চামচ
    কাঁচালঙ্কা বাটা- ১চামচ
    গোটা কাঁচালঙ্কা- ৪টে (চিড়ে দিতে হবে) 
    পেঁয়াজকুচি- ১টা বড়ো পেঁয়াজের
    হলুদগুঁড়ো- ১ চামচ
    জিরেগুঁড়ো- ১ চামচ 
    কালোজিরে সামান্য ফোড়নের জন্য 
    সরষের তেল, নুন, ধনেপাতা পরিমাণ মতো 

    প্রণালী:

    প্রথমে মাছগুলো নুন হলুদ মাখিয়ে ভেজে নিয়ে একটি পাত্রে তুলে রাখুন। ওই কড়াইতেই তেল দিয়ে তাতে কালোজিরে ফোড়ন দিন ও পেঁয়াজকুচিগুলো ঢেলে হালকা বাদামি করে ভেজে নিন। লঙ্কাবাটা দিয়ে দু-তিন সেকেন্ড নেড়ে তাতে পোস্তবাটা ও তার বাটি ধোয়া জলটা দিয়ে ভালো করে নাড়ুন আরো কয়েক সেকেন্ড। এরপর, নুন ও গুঁড়ো মশলাগুলো দিয়ে ভালো করে নেড়ে তাতে প্রয়োজনমতো জল এবং ভাজা মাছগুলো ঢেলে দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। কিছু সময় পর জল ফুটে উঠলেই তাতে চেড়া কাঁচালঙ্কা দিয়ে দিন। ঝোল কতটা রাখতে চান সেইমতো ফুটিয়ে নামানোর একটু আগে ধনেপাতা ও কাঁচা সরষের তেল উপর থেকে দিয়ে ঢাকা দিন ও গ্যাস বন্ধ করে দিন।  ব্যাস, চাপিলার ঝালপোস্ত তৈরি।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @