No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    পৌষ-পাব্বনে পেটে পড়ুক চন্দ্রমুগের পিঠে

    পৌষ-পাব্বনে পেটে পড়ুক চন্দ্রমুগের পিঠে

    Story image

    ‘মুদগ বড়া, মাস বড়া, কলা বড়া মিষ্ট।
    ক্ষীরপুলি নারিকেল পুলি আর পিষ্ট।।’

    চৈতন্যচরিতামৃতে গৌরচন্দ্রের জন্য রাঁধা পঞ্চাশব্যঞ্জনে ছিল পিঠেপুলিও। না থেকে উপায়ও নেই। পিঠে ছাড়া বাঙালির শীতকালীন ভোজ সম্পূর্ণই হয় না। পুরোনো বাংলা কাব্য নিয়ে আমার জ্ঞানগম্যি খুবই কম, তবু পিঠের ইতিহাস নাড়াচাড়া করতে গিয়ে দেখছিলাম মঙ্গলকাব্য জুড়ে বিছিয়ে রয়েছে পিঠের উল্লেখ। পিঠে ঠিক কবে থেকে বাংলার হেঁসেলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হল, তা বলতে পারবেন পণ্ডিতেরা। তবে, এই খাদ্যটির ওপর যে বাঙালির বিশেষ অধিকার আছে—তা স্পষ্ট। পৌষ-পার্বণ মানেই পিঠে। বাংলার ঘরে ঘরে নানা স্বাদের, গড়নের পিঠে তৈরি করতে থাকেন মা-কাকিমা-জেঠিমা-দিদিমারা। এ এক আবহমান অভ্যেস আমাদের। পিঠে খেলে, তবেই পেট খুশি থাকে বছরের এই ক’টা দিন।

    পিঠের হাজারো রেসিপি তো ঘরে ঘরেই রয়েছে। শুনেছিলাম, দুই বাংলা মিলিয়ে প্রায় আটশো রকমের পিঠে আজো বেঁচে-বর্তে আছে। তবে, সব ধরনের পিঠে বানানো তো সহজ নয়। তাছাড়া, উপকরণও সহজলভ্য হয় না আজকের নাগরিক সভ্যতায়। ফলে, আমাদের চারপাশে বহু পিঠেকেই আমরা আর দেখতে পাই না। চাখতেও পারি না তার স্বাদ। অথচ, কম মিষ্টি-টক-নোনতা-ঝাল সব রকম স্বাদের পিঠেই ছিল এই বাংলার হেঁসেলে। এমন স্বাদের বাহার আর কোনো জাতির ভাঁড়ারেই নেই।

    যাহোক, পৌঁষ সংক্রান্তি আসছে। এমন দিনে পিঠের রেসিপি না দিলে চলে না। আজ তাই থাকল চন্দ্রমুগের পিঠের রেসিপি। এই পিঠে চিনির রসে বা গুড়ে ডুবিয়েও খাওয়া যায়, আবার বানানো যায় দুধপুলির মতো করেও। আজ দুধপুলির রেসিপিটাই থাকল। মুগডাল, নারকোল, দুধের এই পিঠে ঠিকঠাক বানাতে পারলে স্বাদ জিভে লেগে থাকবে বহুদিন। তাহলে, আর দেরি কীসের?  

    উপকরণ:

    মুগডাল- হাফ কাপ
    চালের গুঁড়ো- ১কাপ
    নারকেল কোড়া- ১টা বড়ো নারকোলের
    গুড়- ২০০গ্রাম
    নুন- হাফ চামচ
    দুধ- ১লিটার
    এলাচ- ৩টে
    সাদাতেল পরিমাণ মতো 

    প্রণালী:

    প্রথমে, কড়াইয়ে মুগডাল দেড় থেকে দু মিনিট ভেজে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে জল দিয়ে ভালো করে ডাল ধুয়ে নিতে হবে। তারপর, দুকাপ জল দিয়ে কড়াইতে ডাল সিদ্ধ করার জন্য বসিয়ে দিতে হবে। ডাল সিদ্ধ হয়ে এলে ক্রমাগত ডালঘুটনি বা খুন্তি দিয়ে নেড়ে ডালটি একদম মিহি করে নিতে হবে। মিহি হয়ে গেলে চালের গুঁড়ো মিশিয়ে আর হাফ চামচ নুন দিয়ে ভালো করে নেড়ে মিনিট পাঁচ রেখে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে।

    এরপর, একটা কাঁচের পাত্রে গরম অবস্থাতেই মিশ্রণটি মেখে একটি মণ্ড তৈরি করে নিন, প্রয়োজনে অল্প গরম জল যোগ করে মণ্ডটি তৈরি করুন। মন্ডটি তৈরি হয়ে গেলে একটি ভেজা সুতির কাপড় দিয়ে ঢেকে মিনিট দশ রাখুন।  

    পুরের জন্য কড়াইয়ে নারকেল ও গুড় দিয়ে ভালো করে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন।  

    এরপর, পিঠে বানানোর জন্য হাতে সামান্য তেল নিয়ে মণ্ডটি আবার মেখে লেচির আকারে ভাগ করে নিয়ে, তার থেকে লুচির মতো ডো নিয়ে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মাঝখানটা চেপে দুহাত দিয়ে ওটাকে একটা বাটির আকার দিন। তারপর, ওর ভিতরে নারকেলের পুর দিয়ে চেপে দিয়ে অর্ধচন্দ্রের আকার দিন। এভাবে এক এক করে বাকি পিঠেগুলো তৈরি করে নিন। এরপর, কড়াইয়ে ডুবো তেলে পিঠেগুলি ভেজে নিলেই তৈরি চন্দ্র মুগের পিঠে।  

    হাঁড়িতে এক লিটার দুধ এলাচ দিয়ে ভালো করে ঘন করে তাতে গুড় সহযোগে জ্বাল দিন। এবারে এই দুধে কিছুটা নারকেল কোড়া মিশিয়ে, ভালো করে নেড়ে পিঠেগুলি ছেড়ে দিন। দুধ ফুটে উঠলেই গ্যাস বন্ধ করে দিন। ব্যাস, পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত চন্দ্রমুগের পিঠে।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @