শিল্পী পার্থ দাশগুপ্ত এর প্রদর্শনী ‘অমৃৎ’


শিল্পী পার্থ দাশগুপ্ত-র এক অসাধারণ সেরামিক্স সৃষ্টির প্রদর্শনী ‘অমৃৎ’, প্রদর্শিত হয়েছিল ২০১৫ সালে, মায়া আর্ট স্পেসে । শিল্পীর সেই প্রদর্শনী সম্পর্কে বলা যায়, ‘মৃৎ’-মৃত্তিকার ছায়া স্বরূপ শব্দে প্রক্ষিপ্ত। অন্য দিকে ‘অ’ এর তাৎপর্য অতিক্রম করার গুণ প্রকাশক হিসেবে। সব মিলিয়ে বলা যায় যে সৃষ্টির মধ্যে মৃত্তিকার গুণ সজীব। কিন্তু সৃষ্টি এখানে মাধ্যমকে অতিক্রম করে অমরত্বের গুণে উত্তীর্ণ হয়েছে। এ কথার মধ্যে যে সামান্যতম অত্যুক্তি নেই তা বোঝা যায় প্রদর্শনীটি দেখা মাত্র।

সেরামিক্সের কাজ বলতে কিছুদিন আগে পর্যন্তও সকলেই ব্যবহারিক তৈজসের নির্মাণ মাধ্যম বুঝতেন। সেরামিক্স শিল্পকে যে অসামান্য মাত্রায় তৈজসের সীমানা থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন শিল্পী পার্থ দাশগুপ্ত, তা বিস্ময়কর। আর সেই সঙ্গে পোড়ামাটির সংস্কৃতি, টেরাকোটা মন্দির রিলিফের মেঠো গন্ধ, আমসত্ত্বের ছাঁচ ভাঙা নকশা, তার মিষ্টতা, মাটি, রং, গ্রাম-গঞ্জের পাঠশালার অন্দরে, কথক ঠাকরুনের গৃহ কোণে লুকিয়ে থাকা পুঁথি-পাঠের নির্যাসও যেন ঠেলে উঠে আসতে চায় পার্থ দাশগুপ্তের কাজে। সঙ্গে হরপ্পা সভ্যতা থেকে যেন উঠে আসে নিবিড় প্রত্ন-পর্যবেক্ষণ। ফলে পরিবেশনের ধ্রুপদী আড়ালে একটা রাখালিয়া সুর বাজতেই থাকে কাজ গুলির অন্দর মহল্লায়। কেবল একটু কান পাততে হয়। সেই সঙ্গে থাকে বিভিন্ন মাধ্যমের সীমারেখা মুছে দেওয়ার বিপুল আয়োজন।

চিত্রকলা ভাস্কর্যের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করে নির্মাণের পর্বে পর্বে। বিরাট মাপের প্রেক্ষাপট সুলভ ছবি যেন প্রত্যেকটি সেরামিক্স কর্মকে একটা আলাদা বিশেষত্ব দান করে। অথচ চিত্রকলার অস্তিত্ব সংকট হয় না। এ ছাড়া সেরামিক্স ক্রিয়া কর্মের সারফেস টেক্সচার বা উপরি তলের বুনোট, রঙের পোড়া মাটি সুলভ জাদু, রঙের বিভিন্ন মাত্রিক পর্দা চিত্রকলা সুলভ গুণে সেরামিক্সের কাজ গুলিকে একটা অন্য মাত্রায় উত্তীর্ণ করে।

একই সাথে ভাস্কর্যের পেডেস্টালের সংজ্ঞাও বদলে দিয়েছেন শিল্পী। শুধু কী তাই! বিভিন্ন মাপের ধাতব পাত নকশার বিবিধ চরিত্র নিয়ে সেরামিক্সের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়েছে শিল্পরূপ হিসেবে। পাশা-পাশি সাদা-কালোর দ্বন্দ্ব প্রদর্শনীর বিশেষ মাত্রা বহন করে। একই সাথে বলতে হয় প্রদর্শনীর সূত্রলেখক অধ্যাপক সুনন্দ সান্যালের কথা যিনি মার্কিন মুলুকে লেসলি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্পকলার ইতিহাস অধ্যাপনারত। তাঁর মূল্যবান লেখনীতে আমাদের সেই দিকটাই ধরিয়ে দিয়েছেন যে, শিল্প কর্ম দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর সময় এসেছে। আর এসেছে মাধ্যমের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার যুগ।
এই অতিক্রম রচনের এক নিবিড় প্রদর্শনীর সাক্ষী হয়ে রইলো শহর কলকাতা।