No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ফুল পালং-এ বাংলার আবহমান স্বাদের ম্যাজিক 

    ফুল পালং-এ বাংলার আবহমান স্বাদের ম্যাজিক 

    Story image

    শীত এলেই সবুজ সবজির জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করে। আমিষ-প্রিয় বাঙালির নিরামিষ-প্রীতিও কিন্তু আজকের নয়। কৃত্তিবাসী রামায়ণে সীতা নেমন্তন্ন করে খাওয়াচ্ছেন অতিথিদের। সেখানেও কত্তো নিরামিষ পদের তালিকা। আজও সেখানে চেনা পদের নাম দেখলে চমকে উঠতে হয়। তার মানে, কত কত দিন ধরে এইসব পদ রান্না হয়ে আসছে আমাদের হেঁসেলে। যে পদগুলোর সন্ধান আর মেলে না, সেগুলোর জন্য মন খারাপ হয়। ঐতিহ্যের স্বাদ হারিয়ে যাওয়া মানে তো ইতিহাসের একটুকরো হারিয়ে যাওয়া। সংস্কৃতিরও।

    সময়ের সঙ্গে নতুন পদ জন্মাবেই। দেশি-বিদেশি পদের ফিউশনও হবে। স্বাদের খোলতাই হবে, সীমা বাড়বে। কিন্তু, তার পাশাপাশি আমাদের সাবেকি রান্নার মোহরগুলোও বাঁচিয়ে রাখাটা দরকার। শহুরে জিভ যার অনেককটার স্বাদই ভুলতে বসেছে। কিন্তু, আজও হয়তো মফস্বলে, গ্রামে, দেশের বাড়িতে পাত পেড়ে খাওয়ার সময় ডালের পরেই সেইসব তরকারিরা উঠে আসে থালায়। কেউ কেউ আবার ভাতের পাশাপাশি রুটির সঙ্গেও বেশ স্বচ্ছন্দ। শীতকাল এলে এইসব শহুরে রেসিপির কাব্যে উপেক্ষিতা সবজিদের আরও মোহময়ী লাগে।

    তেমনই একটা পদের কথা আজ। শীতের রাজা ফুলকপি, সঙ্গে পালং শাক। আর, সবার শেষে মটরশুঁটি। স্বাস্থ্যগুণের কথা ছেড়েই দিলাম, স্বাদেও এই পদ অনেক হেভিওয়েটকে বলে বলে টেক্কা দেবে। অথচ, মশলার ব্যবহার সামান্যই, বানানোর খরচ প্রায় নেই বললেই চলে। থাকার মধ্যে আছে বাংলার আবহমান মা-কাকিমা-দিদিমা-পিসিমাদের হাতের ম্যাজিক। আর আছে, ইতিহাসের মায়াবী গন্ধ। সবটা মিলিয়েই ‘ফুল-পালং’ এক আশ্চর্য পদ। কিন্তু সাবধান, সহজ আটপৌরে পদ রাঁধাই কিন্তু সবচাইতে কঠিন। তাই প্রণালীটা ভালো করে জানা থাকা প্রয়োজন।

    উপকরণ:
    ফুলকপি-১টা
    পালংশাক- ১ আঁটি
    মটরশুঁটি- ১ কাপ
    আলু- ১টা মাঝারি সাইজের 
    হলুদ- দেড় চা-চামচ
    জিরে বাটা- ২ চামচ
    আদা বাটা- ১ চামচ
    কাঁচালঙ্কা বাটা- ২টো
    চেরা কাঁচালঙ্কা- ৩টে
    সরষের তেল- ২ পলা
    পাঁচফোড়ন- পরিমাণ মতো 
    ঘি- সামান্য
    নুন- পরিমাণ মতো 

    প্রণালী:
    প্রথমে পালং শাক ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে। ফুলকপি ও আলু ছোটো ছোটো টুকরোয় কেটে নিতে হবে। কড়াইতে এক পলা তেল দিয়ে তাতে আগে একটু হলুদ দিন। হলুদ আগে দিলে তেল ছিটকে আসে না। এরপর, ফুলকপিগুলো ঢেলে নুন দিয়ে ভেজে তুলে নিতে হবে। তারপর, ওই কড়াইতেই ও পাঁচফোড়ন দিয়ে আলু ও মটরশুঁটিগুলো ঢেলে দিতে হবে। কিছুক্ষণ সাঁতলানোর পর ভাজা ফুলকপিগুলো ঢেলে দিতে হবে ওর মধ্যে।

    এরপর, একে একে সব বাটা মশলাগুলো নুন ও অল্প জল দিয়ে ভালো করে দুমিনিট কষিয়ে নিয়ে, পালং শাকটা দিয়ে দিতে হবে। পালং শাকটা খুন্তি দিয়ে ভালো করে নেড়ে, ঢাকা-চাপা দিয়ে পাঁচ মিনিট মতো রেখে দিতে হবে। ঢাকনা তোলার পর তাতে চেরা কাঁচালঙ্কাগুলো দিয়ে আবার পাঁচ মিনিট মতো রেখে দিতে হবে। পালং শাক থেকে যে জলটা বেরোবে তাতেই সবটা সিদ্ধ হয়ে যাবে। ৫ মিনিট পর ঢাকা তুলে দেখতে হবে জলটা পুরো টেনেছে কি না। জল টেনে গেলে উপর থেকে সামান্য ঘি দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে ফের ঢাকা চাপা দিয়ে রাখতে হবে। এভাবে ৩০ সেকেন্ড রাখলেই তৈরি ফুল পালং। এরপর শুধু কড়াই থেকে তুলে নিয়ে গরম গরম রুটি বা ভাতের সঙ্গে পরিবেশনের অপেক্ষা।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @