No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ‘ক্যান্সার সারভাইভার’ নবনীতা মণ্ডল এখন স্বপ্নপূরণের পথে

    ‘ক্যান্সার সারভাইভার’ নবনীতা মণ্ডল এখন স্বপ্নপূরণের পথে

    Story image
    চার ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস (World Cancer Day)। চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট-এর (Chittaranjan National Cancer Institute) কমিউনিটি রিসার্চার নবনীতা মণ্ডল বঙ্গদর্শন.কম-কে শোনালেন নিজের ক্যান্সার জয়ের গল্প।

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বাসিন্দা নবনীতা মণ্ডল। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছিলেন। হজকিন্স লিম্ফোমা নামক একপ্রকার হেমাটোলজিক্যাল ক্যান্সার (Hematological Cancer) তাঁর শরীরে থাবা বসিয়েছিল ২০১৫ সালে। রোগে জর্জরিত শরীর দেখে মনে হয়েছিল, এখানেই কি শেষ?

    তারপর তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু হয়। চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি নবনীতা শুরু করেছিলেন গ্রামে গ্রামে ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতার দুরন্ত কাজ৷ কেমোথেরাপি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ক্যান্সার আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে তিনি শোনাতেন তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি৷ সেটা শুনে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উজ্জীবিত হতেন বহু ক্যান্সার রোগী৷ নবনীতা দেখেছেন, ক্যান্সার প্রথম হানা দিলে সকলেই হয়ে যায় একদম নির্বান্ধব৷ কেমোথেরাপি আর হাসপাতালে ঘোরা ছাড়া জীবনের বাকি রংগুলো কেমন যেন ফিকে হয়ে যায়! নবনীতা বলেন, ‘‘গ্রামের দিকে ক্যান্সার ছোঁয়াচে বলে মনে করতেন অনেকে৷ রোগীকে বোঝানোর পাশাপাশি আমি বাড়ির লোকদেরও বোঝাতাম৷ ক্যান্সার চিকিৎসা এমনিতেই জটিল, সেখানে মানসিক সাহায্য পেলে রোগীদের সুবিধাই হবে৷ আমি বোঝাতাম, আমি যেমন পেরেছি, আপনারাও পারবেন৷”

    ক্যান্সার তাঁকে দমিয়ে দিতে পারেনি। বোটানি নিয়ে পড়ার পর মেডিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্ক নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়েছেন। পড়েছেন উপশম চিকিৎসা নিয়েও। নবনীতার ভাষায়, “যখন ক্যান্সার ধরা পড়েছিল, বয়স কম ছিল। বাস্তব যে কোনদিকে হাঁটছে, বুঝতে পারিনি। নিজের কেরিয়ার, জীবনের এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছের পাশাপাশি শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করেছি। সবার কাছ থেকে যে খুব সহমর্মিতা পেয়েছি এমনটা নয়। প্রথমদিকে যখন ক্যান্সার ধরা পড়ল, চুল উঠে যাচ্ছিল, তখন আশেপাশের মানুষের ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছি। তখন থেকেই ক্যান্সার নিয়ে কাজ করার সংকল্প করেছিলাম।”

    চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি নবনীতা শুরু করেছিলেন গ্রামে গ্রামে ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতার দুরন্ত কাজ৷ কেমোথেরাপি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ক্যান্সার আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে তিনি শোনাতেন তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি৷ সেটা শুনে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উজ্জীবিত হতেন বহু ক্যান্সার রোগী৷

    নবনীতা এখন ক্যান্সার সারভাইভার। উপরন্তু ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করেন। ক্যান্সারকে কীভাবে প্রথম দিকে রুখে দেওয়া যেতে পারে, সেটা নিয়ে তাঁর গবেষণা। এর পাশাপাশি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের উপশম চিকিৎসা নিয়েও তিনি গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, “মহিলাদের সারভাইকাল ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার আগাম পরীক্ষা করে ঠেকানো সম্ভব। ক্যান্সার নিয়ে সচেতন করার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি। ১০ জনকে সচেতন করলে হয়তো একজন সচেতন হবেন। তবে মানুষের ভুল ধারণা থেকেই যায়।”

     

    নবনীতা তাঁর কাজের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন৷ আমেরিকার ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন লাঙ ক্যানসার (World Conference on Lung Cancer) ও ইউরোপিয়ান স্কুল অফ অঙ্কোলজি-র (European School of Oncology) তরফে তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়েছে৷ বিদেশে উপশম চিকিৎসা নিয়ে তিনি বক্তৃতাও দিয়েছেন৷ তাঁর কাজ উদ্বুদ্ধ করছে বিশ্বের আরও অনেক ক্যান্সার রোগীকে৷ ১৫টির বেশি দেশে নবনীতা পৌঁছে গিয়েছেন ক্যান্সার নিয়ে কাজ করার সুবাদে। উপশম চিকিৎসা বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন লন্ডনের কিংস কলেজে। কিন্তু কোভিড সে সম্ভাবনায় জল ঢেলে দেয়।

    এখন নবনীতার কাজের পরিসর অনেক বড়ো। প্রচুর ক্যান্সার রোগীর সঙ্গে তাঁকে কথা বলতে হয়। তিনি চেষ্টা করেন রোগীদের কষ্ট লাঘব করার। ২৫ বছরের নবনীতার পরামর্শ, “শরীরে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর সমস্যা থাকলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। গ্রামেও এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গ্রামীণ হাসপাতাল আছে। সমস্যা থাকলে সেখানেই যান। ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতার কাজ আরো দরকার।”

    সাড়ে আট বছর ধরে জীবনের কঠিন থেকে কঠিনতম রাস্তায় পথ হেঁটে নবনীতা বুঝেছেন জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসের গুরুত্ব। নবনীতার ভাষায়, “এমন কিছু আরও করতে চাই যাতে মানুষের উপকার হয়। চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে গবেষণার কাজ করার মাধ্যমে সেই কাজ শুরু হয়েছে বলতে পারেন। নিজেই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই এতটা কঠিন পথ পেরিয়ে এলাম কী করে!”

    শুধুমাত্র একটা দিন নয়, প্রতিটা দিন আরও বেশি করে ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। সেই কাজটাই করে চলেছেন নবনীতা।
     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @