পেশাজীবী মেয়েদের গান – বলছেন চন্দ্রা মুখোপাধ্যায়
ঘুমপাড়ানি থেকে ধান তোলার গান, শিলনোড়া বা পাটাপুতা থেকেপান্তাভাতের গান – মেয়েরা গান বেঁধে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে। দাইমা, কাটুনি, জেলেনি, গোয়ালিনী, মালিনী, কিষাণী থেকে রাঁধুনি, পরিচারকা, ভানুনি, ভাজানি, ছাতপিটানি – সংসারের জাঁতাকল সামলেপ্রত্যেকের কাজই যেন গানের অংশ হয়ে উঠেছে। নারীর গান হয়ে উঠেছেশ্রমের গান। এমন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন শিক্ষিকা চন্দ্রামুখোপাধ্যায়। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথমদশকে মেয়েদের সাক্ষরতার হার চার শতাংশের কাছাকাছি; তার মধ্যেকলম ধরতে পেরেছিলেন অতি সামান্যজন। কিন্তু হাতে লেখাই কিশিক্ষার একমাত্র পরিচয়? নারীদের অন্তর্বিশ্বে প্রবেশ করলে উপলব্ধি করাযাবে তাঁদের তৈরি হাজার হাজার গান নদীমাতৃক বাংলাকে সুরমাতৃককরে তোলে। সেই সুরের বিশ্ব থেকে গিয়েছে খানিক আড়ালে। নারীরজীবনযন্ত্রণা যত বেড়েছে, গান তত দৃপ্ত হয়েছে। হয়ে উঠেছে একাকিত্বেরপ্রিয় বন্ধু।
চন্দ্রা মুখোপাধ্যায় গত ৩৫ বছর ধরে অবিস্মরণীয় কাজ করে চলেছেন।দুই বাংলা ঘুরে ঘুরে তিনি সংগ্রহ করেছেন অজস্র নারীশ্রমের গান।ঘর-নিকানো, বাসনমাজা, কাপড় কাচা, মশলা কোটা, জ্বালানি জোগাড়করা, রান্না করা, সবাইকে খেতে দিয়ে তারপর নিজের মুখে কিছু তোলা, সন্ধ্যায় আবার প্রদীপ জ্বালা, রাত্রের খাবার তৈরি করা – সব কাজ একাহাতে সামলানো কি মুখের কথা? এই সমস্ত কাজের আলাদা আলাদাগান রয়েছে তাঁদের। গানের কথা মেয়েদের, সুরও মেয়েদের। চন্দ্রামুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন,“খেতখামার থেকে ঘর – সবদিকের কাজ করেও কিছু কাজ মেয়েরা করেন,বৃত্তি হিসেবে বংশ পরম্পরা ধরে। গানে‘চিকনগোয়ালিনী’-র কথা, কবি চণ্ডীদাসের প্রেম প্রসঙ্গে রামী রজকিনীর কথা বা অন্নদামঙ্গলে ঈশ্বরী পাটনির কথা আমরাজানি। চর্যাপদে তো মেয়েদের শুঁড়িখানা চালাবার কথাও পাওয়া যায়। ...মেয়েদের নিপীড়িত, নির্বাক, অসহায় দেখানোর যে একপেশে চর্চা, তার পাশাপাশি এই স্বাধীন কর্মরতাদের কথা, বিশেষ মর্যাদায় স্মরণ করার চেষ্টা করেছি।”
বঙ্গদর্শনের পডকাস্টে এবার তিনিই ধারাবাহিকভাবে বলবেন সেসব গানতৈরি হবার গল্প। বিষয়: মেয়েদের শ্রমগান। বলছেন: চন্দ্রা মুখোপাধ্যায়।বঙ্গদর্শনের পডকাস্ট প্রতি সোম, বুধ, শুক্র সন্ধে ৬টায় দেখা/শোনা যাচ্ছেইউটিউব ও ফেসবুকে। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল। ক্লিক করুন এখানে।