No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    পদ্মলুচি : শোভাবাজার রাজবাড়ির ১১৭ বছরের পুরোনো পদ

    পদ্মলুচি : শোভাবাজার রাজবাড়ির ১১৭ বছরের পুরোনো পদ

    Story image

    নেদিবাড়ির ঐতিহ্য, ইতিহাস, রোমান্টিকতা শুধুমাত্র কলকাতাতে আটকে থাকে না, পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে অসংখ্য বনেদিবাড়ি রয়েছে—বরং সেখানে অনেক বেশি রং এবং গভীরতা। ইতিহাসের পাতায় যেমন অমর হয়ে থাকবে এসব বাড়ি, তেমনই তাদের রান্নাঘরও। রান্নার কিছু কিছু পদ কোনও কোনও পরিবারের হাত ধরে ঢুকে পড়ে ইতিহাসের খাতায়, সর্বসাধারণের হেঁশেলে। দেশিয় থেকে কন্টিনেন্টাল, আমিষ থেকে নিরামিষ, নোনতা থেকে মিষ্টির নানান পদ আজও ‘পাক’ হয় সেই সব পরিবারের উত্তরসূরির রন্ধনশালায়। প্রতিটি বনেদি পরিবারের খাওয়া-দাওয়াতেই থাকত এক-একটি সিগনেচার পদ। শতক পেরিয়ে ধুমধাম, আনন্দ-জৌলুসে ঘাটতি পড়লেও রীতি ভাঙতে পারেনি এখনও বহু পরিবার। বাংলার বিভিন্ন অভিজাত পরিবারের বিশেষ বিশেষ পদের কথা, তাদের বিচিত্র সব নাম শুনলে জিভে জল আর মনে কৌতূহলের উদ্রেক হয় বইকি! তাই বনেদিবাড়ির রাজকীয় রান্না, তাদের পাকঘরে এবার ঢুঁ মারবে ‘বঙ্গদর্শন’।

    প্রথম দিনের প্রথম কিস্তি কী দিয়ে শুরু করা যায়… ভাবতে ভাবতে আমরা যখন কলকাতার রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম, দেখলাম অদূরেই দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড শোভাবাজার রাজবাড়ি। এ বাড়ির পাকঘরের এত খ্যাতি, এত বৈচিত্র্য – কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলা! পাঁচ-ছ’ বছর আগে শোভাবাজার রাজবাড়ির মেয়ে কৃষ্ণ শর্বরী দাশগুপ্ত তাঁদেরই পরিবারের ১১৭ বছরের পুরোনো বিয়ের বৌভাতের মেনু কার্ড তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে আপলোড করেছিলেন, যা সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো ‘ভাইরাল’ হয়ে গেছিল। এটি ছিল ১৯০৬ সালের ১৬ জুলাই, কুমার রামেন্দ্র কৃষ্ণ দেবের জ্যেষ্ঠপুত্র শ্রীমান কেশবচন্দ্র দেবের বিয়ের মেনুকার্ড।

    অবিভক্ত বাংলায় ভোজের আসরে বিদেশের মেনু কার্ডের আদলে হাতে লেখা ‘ক্রমণী’ চালু করেছিলেন ঠাকুরবাড়ির প্রজ্ঞাসুন্দরীদেবী। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র হেমেন্দ্রনাথের মেজো মেয়ে প্রজ্ঞাসুন্দরীই লিখেছিলেন বাংলা ভাষায় প্রথম রান্নার বই। সে যাই হোক, ১১৭ বছর আগে কেশবচন্দ্র দেবের বিয়ের সেই মেনু কার্ডে ছিল ৩৬ রকমের পদ। যার মধ্যে খোঁজ পাওয়া যায় ‘হোসনি কাবাব’ বা ‘সন্ধ্যানিকা’ – বেশ কিছু বিচিত্র নাম যুক্ত পদেরও। তবে, মেনু কার্ডের একেবারে শুরুর দিকে যে পদটিতে চোখ আটকে যাবে, তা হল- ‘লুচি’। তবে, যেমন তেমন নয়। এ হল ‘পদ্মলুচি’। আজ বঙ্গদর্শন ‘বনেদিবাড়ির পাকঘর’-এ আমরা পরিবেশন করছি সেই রাজকীয় পদটিই।

     

    কীভাবে বানাবেন ‘পদ্মলুচি’?

    উপকরণ:

    ময়দা- ১ কেজি
    গাওয়া ঘি- ১/২ কাপ
    নুন- ১/২ চামচ
    বেকিং সোডা- ১/২ চামচ (চাইলে নাও দিতে পারেন)
    সাদা তেল- ভাজার জন্য

    পুরের জন্য-

    নিরামিষ/আমিষ দুভাবেই বানানো যায় এই লুচি।

    নিরামিষ পদ্মলুচিতে থাকে ছানার পুর। আমিষ বানালে পাঁঠার মাংসের কিমার পুর দিতে হবে।

    উপকরণ:

    ২কাপ জল ঝরানো মিহি করে বাটা ছানা/পাঁঠার মাংসের কিমা।
    ১কাপ কাজু কিশমিশ বাটা
    ২চামচ গাওয়া ঘি
    ১চামচ আদা বাটা
    ২চামচ শুকনো খোলায় ভাজা জিরে গুঁড়ো
    নুন ও চিনি পরিমাণমতো

    পদ্ধতি :

    ময়দায় নুন, ঘি ও বেকিং সোডা মিশিয়ে অল্প অল্প করে জল মিশিয়ে শক্ত করে মেখে ভিজে কাপড় চাপা দিয়ে এক ঘন্টা রাখতে হবে।

    পুর বানানোর জন্য কড়ায় ঘি গরম করে তাতে আদা বাটা দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে তাতে কাজু কিশমিশ-বাটা দিয়ে আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে ভালোভাবে ভাজা-ভাজা হলে তাতে ছানা/পাঁঠার মাংসের কিমা, নুন, চিনি দিয়ে সামান্য ভাজতে হবে। এবার এতে ভাজা জিরে গুঁড়ো মিশিয়ে কিছুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রেখে ঠান্ডা হতে দিতে হবে।

    পুর ঠান্ডা করার ফাঁকে মেখে রাখা ময়দার বেশ কয়েকটা লুচি বেলে রাখতে হবে।

    এবার একটা লুচির মাঝখানে কিছুটা পুর রেখে লুচির ধারে একটু জল মাখিয়ে নিয়ে আর একটা লুচি দিয়ে ঢেকে দিয়ে ধারটা হাতে বা ছুরির সাহায্যে ফুলের পাপড়ির আকারে কেটে নিয়ে ডুবো তেলে ভাজলেই তৈরি পদ্মলুচি। এবার গরম গরম পদ্মলুচি মুখে পুরলেই দেখবেন সুদূর কোনও প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে রামকুমার চাটুজ্জের পুরাতনী গান-

    ওগো লুচি তোমার মান্য ত্রিভুবনে
    তুমি অরুচির রুচি মুখমিষ্টি সূচি
    তুমি অরুচির রুচি মুখমিষ্টি সূচি
    খাইয়ে ধন্য জীবন-এ

    _______________________

    তথ্যসূত্রঃ

    পদ্মলুচি, পাদুকাহরণ এবং অন্যান্য : কৃষ্ণ শর্বরী দাশগুপ্ত
    মৌ কয়াল, এই সময়

     

    **বঙ্গদর্শন-এর নতুন বিভাগ ‘বনেদিবাড়ির পাকঘর’। ইতিহাস আর নির্ভরযোগ্য রেসিপিতে পরিপূর্ণ বাঙালি পদের রকমারি। প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত।  

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @