বিকাশবাবুর উপর আক্রমণ কেন

গোঘাটের উল্লাসপুরের কাছে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র এবং ত্রিপুরার প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিকাশ ভট্টাচার্যকে মাটিতে ফেলে পেটানো হয়েছে। গত শনিবার ১ এপ্রিলের ঘটনা। এই মুহূর্তে রাজ্য রজনীতির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী মুখের নাম বিকাশ ভট্টাচার্য। কোনও সন্দেহ নেই, বিকাশবাবু রাজনীতি করেন। রাজনীতির মানুষ রাজনীতি করবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। এবার তিনি যদি বিরোধী রাজনীতির মানুষ হন, তাঁকে সেই রাজনীতি চর্চার একশো ভাগ পরিসর দেবে, সভ্য শাসকদলের সেটাই পরিচয়। কেউ বলতেই পারেন, ওরা তো আমাদের অমুক সময়ে তমুক জায়গায় যেতে দেয়নি। এর উত্তর হচ্ছে, ঠিক কথা, ওরা ওই কাজ করেছিল বলেই আজ ওরা সরকারে নেই, তোমরা আছ। ওরা তো অমুক সময়ে তমুক করেছিল, এই যুক্তিতে পুরনো অন্যায় কাজের পুনরাবৃত্তি করা নিচু মানের রাজনীতি হিসেবেই পরিচিতি পাবে।
কেন্দ্রের শাসকদলের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ হল, অসহিষ্ণুতার রাজনীতি-চর্চা। ভাবাদিঘিতে আন্দোলনরত মানুষের কথা শুনতে দেব না বলে, পথ আটকে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে ‘খুনি বিকাশ দূর হটো’ স্লোগান দিতে দিতে মাটিতে ফেলে মারধর করা, সেই একই অসহিষ্ণুতার পরিচয়। বিকাশবাবুর অপরাধ কী? তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বিচার চেয়ে দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাতে সরকারপক্ষ অসুবিধায় পড়েছে বার বার। কিন্তু দেশের যে কোনও নাগরিকেরই তো আদালতে যাওয়ার অধিকার আছে। শাসকদলের নেতারা যদি মনে মনে সেই অধিকারও সীমিত করার বাসনা পোষণ করে থাকেন, সেটা রাজ্যবাসীর পক্ষে খুবই ভয়ের কথা।
বিকাশবাবুকে যখন মারা হচ্ছে, তখন সেখানে পুলিশ এবং জেলার শাসকদলের শীর্ষনেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনেই এই ঘটনা ঘটে। এমনই অভিযোগ করা হয়েছে। অন্য দিকে শাসকদলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। ঘটনাস্থলে সাংবাদিকরা ছিলেন, সবাই জানে, এই দাবি ঠিক নয়। কিন্তু যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নেওয়া হয়, এই দাবি ঠিক, তাহলে, উত্তরপ্রদেশে পান থেকে চুন খসলে যারা মুহুর্মুহু টুইট করতে পারেন, তারা এমন একটি, অসংসদীয়, অগণতান্ত্রিক, অসহিষ্ণু, অন্যায়, শাস্তিযোগ্য অপরাধের ঘটনায় নীরব কেন?
ছবির সূত্র- NDTV India