নতুন বছরের রেজোলিউশনে ‘না’ বাঙালির!

সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তী একসময় বলেছিলেন, “নতুন বছর নিয়ে অত হৈ চৈ করার কিছু নেই, কোনো বছরই তো এক বছরের বেশি টেকেনি।” সেই কতবছর আগে এসব বলে গেলেন তিনি, আজকের যুগে দাঁড়িয়েও যে উক্তি ‘ভাইরাল’। এই নতুন বছর নিয়ে বিশ্ববাসীর হৈ চৈ-এর শেষ নেই ঠিকই। কিন্তু এর ঠিক অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে একদল বাঙালি। বাঙালি মাত্রেই আবেগপ্রবণ, একথা যেমন সত্যি। পাশাপাশি নিজেদের নিয়ন্ত্রণের সীমাতেই বাঁধতে পারেন বৈকি! এই যেমন নতুন বছর এলেই নেটদুনিয়ায় হইহই শুরু হয় ‘রেজোলিউশন’ নিয়ে। রেজোলিউশনের বাংলা অর্থ সমাধান। এই সহজ সমাধানের রাস্তায় হাঁটতে বরাবর অপছন্দ একদল বাঙালির।
কী হবে নিউ ইয়ার রেজোলিউশন! ধুর মশাই! ওসব ‘সেলিব্রিটি’দের ভাষা। ওসব রেজোলিউশন টেসোলিউশনে কিস্যু হবে না। আরে ভাই, বাঁচো বাঁচো। নিজের ইচ্ছামতো বাঁচো। খাও, ঘুমাও, চাকরি করো, শিল্প করো, রাস্তায় হাঁটো, প্রেম করো, বিরহ করো – কিন্তু রেজোলিউশনের পাল্লায় পোড়ো না। যা হবার তা এমনিই হবে। দিব্যি টিব্যি কেটে কোনোদিন কারোর কিছু হয়েছে! সোশ্যাল মিডিয়ায় ঠিক যখন স্ট্যাটাসে উপচে পড়ছে ভিন্নরকম রেজোলিউশনের, ঠিক তখন অর্থাৎ নতুন বছর শুরু হওয়ার মুহূর্তে আরেকদল বাঙালি কী বলছেন?
কলকাতার শোভাবাজার এলাকায় থাকেন সত্তর বছর বয়সী দীপেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, “রেজোলিউশন নামক শব্দগুলো তো কয়েকবছর হল মার্কেটে এসেছে। আমাদের কাছে নতুন বছর মানে গুড়ের পায়েস আর গুড়ের রসগোল্লা। ব্যাস, আমার সারা বছর সার্থক।” অন্যদিকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র অনামিকা সেনগুপ্ত বলছেন, “পাগলরাই এসব করে। তাছাড়া মানাও যায় না। আমি কি বলতে পারি, সারাবছর আমার কেমন যাবে! ভালোটাকে যেমন সুন্দরভাবে গ্রহণ করব, তেমন খারাপটাও তো আমারই জীবন। কাউকেই অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই। এবার যদি কেউ খাবার খাওয়া কমাতে চান বা নিদেনপক্ষে ল্যাদ খাওয়া কমাতে চান, সে অন্য ব্যাপার।” বর্ধমান এবং উত্তর চব্বিশ পরগণার সায়ন মল্লিক এবং রমজান মণ্ডল প্রায় এক কথাই বললেন – “রেজোলিউশন! সেটি কী বস্তু!”
সত্যিই, বিশ্ব র্যাঙ্কিয়ে এখনও কিছু ট্রেন্ড বহু মানুষকে স্পর্শ করতে পারেনি। পারেনি বলেই মানুষ তাঁর ইচ্ছায় বাঁচে। ভালোবাসায় বাঁচে। পাশে থাকায় বাঁচে। আচ্ছা, রেজোলিউশনকে নতুন বছরে যদি গুরুত্ব দিতেই হয়, তাহলে কি বলা যায় না সারাবছর অনেক গাছ লাগাব, সম্প্রীতির পক্ষে কথা বলব, গা বাঁচিয়ে আর চলব না – এগুলোও?
আসলে গানের ভাষায়, “এমন যদি হত, হতাম পাখির মতো/ উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ।” উড়ে বেড়ানোই হোক ‘সমাধান’। তবে কাউকে বিপদে ফেলে নয়। নতুন বছর প্রত্যেকের ভালো কাটুক। আনন্দে-মনখারাপে কাটুক।