বিষ্ণুপুরের পাঁচমুড়া থেকে গোটা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বাংলার টেরাকোটা

স্বয়ং সত্যজিৎ রায় তাঁর ফেলুদা কাহিনি ‘রবার্টসনের রুবি’-তে, পশ্চিমবঙ্গের টেরাকোটা শিল্প সম্পর্কে, ফেলুদার মুখ দিয়ে বলিয়েছিলেন- “বাংলার এ সম্পদ সম্পর্কে যে ওয়াকিবহাল নয়, সে বাংলার কিছুই জানে না।”
বাংলার মৃৎশিল্পকলার অন্যতম প্রাচীন ও শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হলো টেরাকোটার (Terracotta) কাজ। শিল্পীদের দক্ষতা, শিল্পকলার নান্দনিকতা, শিল্পদ্রব্যগুলির ব্যবহারিক মূল্য, সবদিক থেকেই বাংলার টেরাকোটা শিল্প অতুলনীয়। শিল্পসামগ্রীগুলির পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে গ্রামবাংলার শিল্পীদের নৈপুণ্য ও শিল্পজ্ঞান। হুগলি জেলাতে আছে টেরাকোটার গ্রাম দশঘরা। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর জুড়ে ছড়িয়ে আছে এমন অনেক মন্দির, ধ্বংসস্তুপের মধ্যে আজও যে মন্দিরগুলোয় বেঁচে আছে বিষ্ণুপুরের ঐতিহাসিক নিদর্শন। তবে মন্দির ও স্থাপত্যের সীমানা ছাড়িয়ে, টেরাকোটা ছড়িয়ে পড়ছে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে। টেরাকোটার বিভিন্ন মূর্তি, পুতুল বা ভাস্কর্য, গত কয়েক বছরে সারা পৃথিবীর শিল্পপ্রেমী মানুষের মন জয় করেছে।
নরম মাটিকে হাতের চাপে বা ছাঁচের মাধ্যমে বিভিন্ন আকার দিয়ে মূর্তি বা পুতুল তৈরি করা হয়। তারপর সেই মূর্তিগুলির ওপর করা হয় সূক্ষ্ম ও নিঁখুত কারুকার্য। এরপর মূর্তিগুলিকে রোদে শুকিয়ে বা আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করলে মূর্তির গায়ের কারুকাজগুলি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই গঠনশৈলীই হলো টেরাকোটা শিল্পের অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য। অনেকসময় মূর্তিগুলিকে প্রাকৃতিক রঙে রাঙিয়ে তোলা হয়। শিল্পীর উৎকর্ষে মূর্তি ও ভাস্কর্যগুলি হয়ে ওঠে অনুপম।
বাঁকুড়া জেলায় অবস্থিত টেরাকোটার আঁতুড়ঘর বিষ্ণুপুর। এই শহর থেকে ২৩ কিমি দুরে অবস্থিত পাঁচমুড়া বাংলার টেরাকোটা শিল্পের পীঠস্থান এবং গ্রামের শিল্পীরা এই শিল্পের পথিকৃৎ। এই গ্রামের পঁচাত্তরটি পরিবার মিলে আজও বাংলার এই সুমহান ঐতিহ্যকে পরম যত্নে লালন করছেন। এই অঞ্চলটি ‘বাংলার টেরাকোটা হাব’ (Bengal’s Terracotta Hub) নামেও পরিচিত।
দ্য বেঙ্গল স্টোর (The Bengal Store)-এর এক কর্মী বললেন- “টেরাকোটার শিল্পসামগ্রীগুলির নিপুণ কারুকার্য ও শিল্পসুষমা সারা পৃথিবীর শিল্পপ্রেমী মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। টেরাকোটার হস্তশিল্প ঘরে রাখলে শোভা বেড়ে যায় বহুগুণ। গত কয়েকবছরে এই জিনিসগুলির কদর আর চাহিদা দুই’ই বৃদ্ধি পেয়েছে।”
মূর্তিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টেরাকোটার বাইসন, হাতি, ঘোড়া, গণেশ, দুর্গা ইত্যাদি। বাইসনগুলির পিঠের বাঁকানো কুঁজের উপর রয়েছে নিঁখুত, বিশদ ও উৎকৃষ্ট মোটিফ, যা মূর্তিগুলিকে করে তুলেছে আরও বেশি মনোহর। এর একটি বৈশিষ্ট্য হলো এই যে-মূর্তিগুলির কান, শিং ও লেজগুলিকে আলাদা করে খুলে রাখা যায়।
গণেশের মূর্তিগুলি সর্বাঙ্গসুন্দর। এই মূর্তিগুলিকে পুজোর জন্য ঠাকুরঘরে অধিষ্ঠান করানো যায়, আবার ঘর সাজানোর কাজেও ব্যবহার করা যায়। হাতির মূর্তির সারা শরীর জুড়ে আঁকা রয়েছে নিখুঁত ও নানা রঙের নিপুণ মোটিফ।
এই সমস্ত হস্তশিল্পগুলিকে ঘরে রাখলে গৃহস্থের মন ভরে ওঠে ইতিবাচকতা আর বাংলার ঐতিহ্যের অনুভবে।
(‘দ্য বেঙ্গল স্টোর’ থেকে টেরাকোটার হস্তশিল্প কিনতে হলে এখানে ক্লিক করুন।)