No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    নীলাভ বোস-এর ক্যামেরায় বাংলার মাদুর বোনার কড়চা

    নীলাভ বোস-এর ক্যামেরায় বাংলার মাদুর বোনার কড়চা

    Story image

    লিও টলস্তয় বলেছিলেন, “শিল্প শুধুই একটা হাতের কাজ নয়, তা হচ্ছে শিল্পীর অভিজ্ঞতার সম্প্রচার।” শিল্প তখনই মর্যাদা পায়, যখন তা মানুষের হাতে পৌঁছে যায়, সেইসঙ্গে ঘরে ঘরে সমাদৃত হয়। তবে বাংলার বহু শিল্প আজও প্রায় নাগালের বাইরে। অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনচর্চায় তার প্রচার বা প্রসার তেমনভাবে ঘটেনি। বাংলায় মাদুর অত্যন্ত জনপ্রিয় এক শিল্প। শিল্পকে সাধারণের মধ্যে পৌঁছে দিতে উচিত সঠিক ডক্যুমেন্টের মাধ্যমে তার সর্বব্যাপী প্রসার। বাংলার নিজস্ব সে সমস্ত শিল্পকে ভালোবেসে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছেন তরুণ ফটোগ্রাফার নীলাভ বোস (Photographer Nilav Bose)।

    নীলাভ বোস একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী। হাওড়া জেলার বালি শহরের বাসিন্দা নীলাভ-র ছবির বিষয় মূলত তথ্য এবং ভ্রমণমূলক। নীলাভ-র তোলা ছবি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, সোনি বিবিসি আর্থ, ডিসকভারি ইন্ডিয়া-র মতো সংস্থা ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

    নীলাভ একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী। হাওড়া জেলার বালি শহরের বাসিন্দা নীলাভ-র ছবির বিষয় মূলত তথ্য এবং ভ্রমণমূলক। নীলাভ-র তোলা ছবি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক (National Geographic), সোনি বিবিসি আর্থ (Sony BBC Earth), ডিসকভারি ইন্ডিয়া (Discovery India)-র মতো সংস্থা ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কাশ্মীরের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের জীবনযাত্রা থেকে কলকাতার বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো, ইটভাটিতে কর্মরত মানুষের গল্প, এমনকি শহর ও শহরতলিতে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন সাধারণ কাহিনি জায়গা করে নিয়েছে নীলাভ-র নানান ফটো স্টোরিতে।

    ফটোগ্রাফির পাশাপাশি দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র ও তা নিয়ে চর্চা করতে ভালোবাসেন নীলাভ। তাঁর তৈরি ‘অ্যান আনফিনিশড পোর্ট্রেট’ (An Unfinished Portrait by Nilav Bose) তথ্যচিত্রটি কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি-তে প্রদর্শিত হয়। সাউথ চাইনা মর্নিং পোস্ট (South China Morning Post)-এর এক আন্তর্জাতিক তথ্যচিত্র প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ হয় নীলাভ-র। Emmy© Awards মনোনীত সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা আহমের খান-এর ‘দ্য লাস্ট ট্রামস অফ এশিয়া’ (The Last Trams Of Asia by Ahmer Khan) ছবিতে কলকাতার ট্রামলাইনের প্রতিচ্ছবি ক্যামেরা-বন্দি করেন নীলাভ। পাশাপাশি নীলাভ বোসের নির্দেশনায় কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি মুক্তি পেতে চলেছে এ বছর।

     

    প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে পশ্চিমবঙ্গে মাদুর শিল্প-এর লৌকিক চরিত্রের অবনতি ঘটেছে। তবে সেই আদি ও অকৃত্রিম চেহারাকে ধরে রাখারও চেষ্টা করছেন অনেকে। মেদিনীপুরের সবং থানার তালদা, রুইনান, দাঁতড়দা, সারতা, দাঁড়রা, পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়ি, ময়না, রামনগরের কচুড়ি, সাদি, হলদিয়া, পুরুষোত্তমপুর, বেতেশ্বর, খোলাবেড়িয়া, চন্দনপুর, এগরা, বীরভূমের শ্রীনিকেতন, কোচবিহার, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা ইত্যাদি অঞ্চলে এখনও নিয়মিত মাদুর তৈরি হয়। গৃহস্থের মঙ্গল কামনা থেকে রাম-রাবণের যুদ্ধ – বাংলার মাদুর বোনার কড়চায় ধরা থাকে কতশত ইতিহাস-পুরাণ

    বাংলার নিজস্ব শিল্প-সম্ভার প্রকৃতিকেন্দ্রিক। আজকের যান্ত্রিক যুগের সমস্ত নকল জিনিস ঢুকে পড়েছে শিল্পে। তাই কাজ হারাচ্ছেন বহু শিল্পী। আবার বাজারে টিকে থাকার জন্য বাধ্য হয়ে অনেকে প্লাস্টিক ব্যবহার করছেন। ক্রেতাদের সচেতন না হলে প্লাস্টিক মুক্ত পৃথিবী হবে দিবাস্বপ্নের মতোই। একহারা, দোহারা মাদুর বাংলার সম্পদ। বাংলার মাদুর শিল্প জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিশ্ব মানচিত্রেও। নিজেদের পণ্যে উদ্ভাবন এবং সৃজনশীল কল্পনা আনার জন্য মাদুরশিল্পীরা কাজ করছেন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, ডিজাইন ইন্সটিটিউট ও শিল্পীদের সঙ্গে। নিজেদের শিল্পকে তুলে ধরার জন্য পাড়ি দিচ্ছেন লিথুয়ানিয়া, জার্মানি, সুইডেন, ডেনমার্ক, ওমান, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যে।

    নীলাভ বঙ্গদর্শন.কম–কে জানান, “বাংলার পুরোনো সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং শিল্পকলা পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াসে আমি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং-এর কাছে অবস্থিত রুইনান গ্রামে মাদুরের বুনন দেখতে একাধিকবার গিয়েছি, স্টাডি করেছি, ছবি তুলেছি। সেখানকার মহিলা শিল্পীদের অভিব্যক্তিগুলোই আমার ছবির প্রধান বিষয়। মাদুর বুননের সময় তাঁদের হাতের ব্যবহার, পায়ের ব্যবহার, সুতো টানার প্রক্রিয়া, মাদুর কাঠি ডিজাইন করে সাজানো এই সমস্তটাই ক্যামেরা-বন্দি করার চেষ্টা করি। ওই গ্রামে গিয়ে দেখেছি হস্তচালিত তাঁত ও পাওয়ারলুম দুটোই ব্যবহার করা হয়। তবে দরিদ্র গ্রামবাসীরা সাধারণত হাতে টানা তাঁত ব্যবহার করতেই পছন্দ করেন।”

    নীলাভ বোস/ আলোকচিত্রী

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @