No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    গত দশ বছরে ম্যানগ্রোভ রোপণে নজর কাড়া সাফল্য বাংলার

    গত দশ বছরে ম্যানগ্রোভ রোপণে নজর কাড়া সাফল্য বাংলার

    Story image

    সুজলা-সুফলা বাংলা। নদী, পাহাড়, জঙ্গলে ঘেরা এমন বৈচিত্র্যময় পরিবেশ সম্ভবত ভারতের অন্য কোনও রাজ্যে নেই। তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো দক্ষিণ ২৪ পরগণার সুন্দরবন। ১,৪০,০০০ হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত এই এলাকা বারবার উঠে এসেছে আলোচনায়। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমাও পেয়েছে ১৯৮৭ সালে। কখনও বেড়েছে বাঘের সংখ্যা, কখনও সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে গেছে সৌরবিদ্যুৎ, কখনও বা সাফল্যের মুখ দেখেছে সুন্দরবনের মধু সংগ্রাহকদের জন্য রাজ্যের তরফে নেওয়া বিশেষ বিমা প্রকল্প। বাস্তুতন্ত্র আর পরিবেশ, দুই প্রেক্ষিতেই আলাদা গুরুত্বের দাবি রাখে এই অঞ্চল। ভারতের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য রয়েছে এখানেই। ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ (Mangrove Conservation) এবং ম্যানগ্রোভ অরণ্য (Mangrove Forest) বিস্তারেও এবার উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে রাজ্যের বনদপ্তর। সুন্দরবন ছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য উপকূলবর্তী অঞ্চলেও ম্যানগ্রোভ গাছ রোপণে উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে রাজ্যে।

    কেন ম্যানগ্রোভ গাছ গুরুত্বপূর্ণ? কারণ, ম্যানগ্রোভ গাছগুলি, উপকূলবর্তী এলাকায় ভূমিক্ষয় রোধে অত্যন্ত কার্যকরী। আর বিভিন্ন ঝড়ঝঞ্জা, টাইফুন থেকে সংলগ্ন অঞ্চলকে রক্ষা করতেও ম্যানগ্রোভের জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও, ম্যানগ্রোভ অরণ্য বহু প্রজাতির প্রাণীর বসবাসস্থল। তাছাড়া, বাতাস থেকে বিপুল পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশ দূষণকে নিয়ন্ত্রনও করে ম্যানগ্রোভ গাছগুলি। 

    এবার দেখে নেওয়া যাক ম্যানগ্রোভ বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণে রাজ্যের বনদপ্তরের গত দশ বছরের সাফল্যের কিছু খতিয়ান। উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলি নিম্নরূপঃ 
    ১) ঘূর্ণিঝড় আমফান এবং ইয়াসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে (উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুর) ২০ কোটিরও বেশি ম্যানগ্রোভ, অন্যান্য উপকূলীয় ছায়া প্রদানকারী গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল কর্মদিবস (Man-day)। এই প্রকল্পে কাজ পেয়েছেন মহিলা স্বনির্ভর দল-এর লক্ষাধিক মহিলা। ২০২০ থেকে ২০২২ সময়কাল ধরে চলেছে এই কাজ। লকডাউনের সময় আর্থিক সহায়তাও করা হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে। 

    ২) ২০২০-২১ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় ২৫০০ হেক্টর এলাকায় ৫ কোটিরও বেশি ম্যানগ্রোভ প্রোপাগুল রোপণ করা হয়েছে। 

    ৩) ২০২১-২২ সালে উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং পূর্ব মেদিনীপুর, এই তিন জেলার উপকূলীয় এলাকায় ১৫ কোটি ম্যানগ্রোভ ও সংশ্লিষ্ট প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। 

    ৪) রাজ্য বনবিভাগের এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের সব উপকূলবর্তী এলাকায় ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণের জন্য নিয়েছে MISHTI (Mangrove Initiative for Shoreline Habitats & Tangible Incomes) প্রকল্প। এই প্রকল্পে নোডাল সংস্থারূপে কাজ করার জন্য ইতিমধ্যেই প্রাথমিক ভাবে মৌখিক প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে। 

     

    ম্যানগ্রোভ ও অন্যান্য গাছের চারা রোপণের সময় বিশেষজ্ঞেদের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চলভেদে বিভিন্ন গাছ, গুল্ম, ঘাস লাগানো হয়েছে-
    ম্যানগ্রোভ এলাকায়- কালো বাইন, পেয়ারা বাইন, কাঁকড়া, বকুল-কাঁকড়া, গর্জন, হরগোজা, ধনি, খলসি, টোক কেওড়া
    উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন ছায়াপ্রদানকারী গাছ- ঝাউ, নিম, করঞ্জ, আকাশমনি, কাজু, বাবলা, নারকেল
    অন্যান্য এলাকায়- কেয়া, শিশু, অর্জুন, আমলকি, নিম, মেহগনি, শিয়ালকাঁটা, কাশ, কুশ, নল, ফণীমনসা ইত্যাদি।

    এই সমস্ত গাছ ও গাছের চারা রোপণের ফলে একদিকে যেমন বেড়েছে পরিবেশের ভারসাম্য, ভূমিক্ষয়, ঝড়ের বিধ্বংসী প্রভাব উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। প্রান্তিক মানুষ, বিশেষ করে মহিলারা হয়ে উঠেছেন স্বনির্ভর। বলা যায়, আক্ষরিক অর্থেই রাজ্যে ঘটছে ম্যানগ্রোভ বিপ্লব। 

    ** প্রাপ্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, ১ কর্মদিবস- ১ দিনে ৮ ঘণ্টা কাজের সময় এবং একদিকে যাতায়াতের সময় যোগ করে যত সময় হয়। কাজের সময় ৮ ঘণ্টা অতিক্রম করলে, কিন্তু ১৬ ঘণ্টার কম হলে তাকে দেড় কর্মদিবস ধরা হয়। ১৬ ঘণ্টার বেশি কাজের সময় হলে তাকে ২ কর্মদিবস ধরা হয়, ইত্যাদি।

    তথ্যসূত্র ও ছবিঋণ- পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনদপ্তরের ফেসবুক পেজ 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @