No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    লালমাটির দেশে সবুজের বিপ্লব আনছেন ‘পদ্মশ্রী’ দুখু মাঝি

    লালমাটির দেশে সবুজের বিপ্লব আনছেন ‘পদ্মশ্রী’ দুখু মাঝি

    Story image

    ‘গাছ বাবা’, ‘গাছ দাদু’, ‘গাছ পাগল’। তাঁর নামের আগে বসে এই শব্দবন্ধগুলোই। তাঁর সাইকেলের সামনে ছোট্টো একটা ফলকে লেখা, ‘বৃক্ষমানব শ্রী দুখু মাঝি’। পুরুলিয়া-র তপ্ত লালমাটিকে স্নিগ্ধ সবুজের ছায়া দিয়েছেন তিনি। দু-এক বছর না, প্রায় একযুগের বেশি সময় ধরে গাছ লাগিয়ে প্রকৃত অর্থেই ‘সবুজ বিপ্লবী’ হয়ে ওঠা রুখু মাটির দুখু মাঝি এ বার পেয়েছেন পদ্মশ্রী সম্মান।

    পরিবারের আর্থিক অনটনে প্রথাগত শিক্ষা এগোয়নি। নিজেই তা স্বীকার করেন। কিন্তু কম বয়সে এক পুলিশকর্তা তাঁর মনে পরিবেশ সচেতনতার যে বীজ পুঁতেছিলেন, তাকে অতি যত্নে লালনপালন করে আজ মহীরুহে পরিণত করে ফেলেছেন পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের সিঁদরি গ্রামের এই বাসিন্দা। ৭৮ বছর বয়সেও তাঁর ধ্যানজ্ঞান গাছ।

     

    বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস আরণ্যক-এর যুগল প্রসাদ চরিত্রটি দুর্গম জায়গা থেকে গাছ নিয়ে এসে নদীর ধারে এবং অন্যত্র লাগাতেন। সাহিত্যের এই চরিত্র আজও বেঁচে আছে বাস্তবে, মনে করিয়ে দেন দুখু। পুরুলিয়ার পিছিয়ে পড়া ব্লকগুলির মধ্যে অন্যতম বাঘমুন্ডি। এই ব্লকের রুক্ষ পাহাড়ি মাটিতে ভালো ফসল হয় না। মাইলের পর মাইল রুক্ষ জমি পড়ে থাকে অনাবাদি। এই ব্লকেরই সিঁদরি গ্রামের বাসিন্দা দুখু এইসব অনাবাদি জমিতে প্রাণ দান করেছেন। 
     
    চাষবাস করেই তাঁর দিনগুজরান হয় দুখুর। তাঁর কথায়, ‘‘তখন বয়স পঁচিশ-তিরিশ হবে। এক জন বড় অফিসারের মুখে শুনলাম গাছ নাকি অক্সিজেন না কী একটা দেয়! কিন্তু এই অক্সিজেন কী, কিছুই জানতাম না। কথার ফাঁকে অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে বললেন, এর জন্যই তো আমরা শ্বাস নিতে পারি।”

    বড়ো অফিসারের সেই কথা যুবক দুখুর মনে ধরেছিল। সেই থেকেই গাছ লাগানোর নেশা চাপে। সে নেশা আজও ছাড়তে পারেননি। তাঁর হাতে এলাকায় কমপক্ষে কয়েক হাজার গাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। দুখুর লাগানো গাছের মধ্যে বেশির ভাগই বট, আম আর জাম। 

    ৭৮ বছর বয়সে এখনও সকাল হলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গে থাকে মাটি খোঁড়ার কোদাল, গাঁইতি। শুধু গাছের চারা পুঁতে দায় সারা নয়, সেই গাছকে বড়ো করে তোলা পর্যন্ত চলে তাঁর অদম্য লড়াই।

    ৭৮ বছর বয়সে এখনও সকাল হলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গে থাকে মাটি খোঁড়ার কোদাল, গাঁইতি। শুধু গাছের চারা পুঁতে দায় সারা নয়, সেই গাছকে বড়ো করে তোলা পর্যন্ত চলে দুখুর অদম্য লড়াই। আর সেই লড়াই-ই তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে ‘গাছদাদু’বা ‘গাছবাবা’ নামে। বন দফতর ২০১৯ সালে বনমহোৎসবে দুখুকে সংবর্ধনা ও পুরস্কার দিয়েছে। এ বার পেলেন পদ্মসম্মান।

    ভারত সরকার প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে পদ্মশ্রী সম্মানের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে দুখু মাঝির কাজকে। পদ্মশ্রী সম্মান পেয়ে কেমন লাগছে? ৭৮ বছরের দুখু’র উত্তর, ‘‘ভালই লাগছে। এমনটা হতে পারে কখনও তো ভাবিনি। আমি যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন এ ভাবেই গাছ লাগিয়ে যাব।” সেই সঙ্গেই তাঁর আক্ষেপ, ‘‘একটা গাছ কাটলে কমপক্ষে পাঁচটা গাছ লাগাতে হবে, কিন্তু সে কথা কেউ শোনে না। কেউ মানতেও চায় না। এমন চলতে থাকলে একদিন সকলকে অক্সিজেন কিনতে দোকানে যেতে হবে! সেটা কি ভাল হবে?’’

    সবাই পারে না, একমাত্র দুখুই বুক ঠুকে বলতে পারে “এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে আমি...”

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @