No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    দেশের সেরা পর্যটন গ্রামের স্বীকৃতি পেল মুর্শিদাবাদের বড়নগর

    দেশের সেরা পর্যটন গ্রামের স্বীকৃতি পেল মুর্শিদাবাদের বড়নগর

    Story image

    গেই ইউনেস্কোর সেরা সাংস্কৃতিক পর্যটন গন্তব্যের তকমা পেয়েছিল বাংলা। এবার বাংলার পর্যটন-মুকুটে জুড়লো নতুন পালক। মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ ব্লকের লালবাগ মহকুমার বড়নগর। ছোট্ট এই গ্রামকে এবছর কৃষি-পর্যটন বিভাগে ‘সেরা পর্যটন গ্রাম’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক। বাংলার পর্যটনের এই নতুন সাফল্যের খবর টুইট করে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    সেকালে ছোট্ট এই গ্রামকে বলা হত ‘বাংলার বারানসী’, যা নাটোরের রানি ভবানির খুব প্রিয় ছিল। নরানি বড়নগরে ডজন খানেক মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তার মধ্যে অন্যতম ‘চারবাংলা’ মন্দির।

    পোড়ামাটির মন্দির জুড়ে সূক্ষ কারুকাজ ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়

    সেকালে ছোট্ট এই গ্রামকে বলা হত ‘বাংলার বারানসী’, যা নাটোরের রানি ভবানির খুব প্রিয় ছিল। রানি ভবানি ৩২ বছর বয়সে বিধবা হন। তারপর তিনি আজিমগঞ্জের উত্তর প্রান্তে ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ে বড়নগরে বসবাস শুরু করেন। রানি বড়নগরে ডজন খানেক মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তার মধ্যে অন্যতম ‘চারবাংলা’ মন্দির। টেরাকোটার কাজে সমৃদ্ধ পোড়ামাটির বাংলা ইটের তৈরি ৪টি মন্দিরকে একত্রে বলা হয় চারবাংলা মন্দির। চারবাংলার চারটি মন্দিরের প্রতিটিতে তিনটি করে শিব রয়েছে। ১২২ বছর আগে ১৮৯৭ সলে বাংলা ভাষায় ইতিহাস লেখার প্রথম পর্বে প্রকাশিত হয় নিখিলনাথ রায়ের ‘মুর্শিদাবাদ কাহিনি’। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, “মদনগোপাল মন্দিরের পূর্ব-দক্ষিণে চারি বাংলার মন্দির। ওই চারি বাংলার শিল্পকার্য অতীব প্রশংসনীয়। বড়নগর সমাগত প্রত্যেক লোকই ইহার শিল্পকার্য দেখিয়া চমৎকৃত হইয়া থাকেন। ইহার প্রত্যেক ইষ্টক কারুকার্যময়, নানাবিধ দেবদেবীর মূর্তি খোদিত ছাঁচে মৃত্তিকাবিন্যাস করিয়া এই সকল ইষ্টক নির্মিত হইয়াছে। এই সকল ইষ্টকে কোনও স্থানে দশাবতার, কোনও স্থানে দশমহাবিদ্যা, কোথাও রাম-রাবনের যুদ্ধ, কোথাও শুম্ভ-নিশুম্ভর যুদ্ধ, এতদ্ভিন্ন রাধাকৃষ্ণ, অসংখ্য শিব ও দেবমূর্তি চতুর্দিকে অঙ্কিত রহিয়াছে। এই সকল মন্দির দেখিলে পুরাতন শিল্পের ও তৎকালীন লোকদিগের স্বধর্মভক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। মুর্শিদাবাদের মধ্যে ইহা একটি দর্শনীয় পদার্থ।’’

    বিদেশী পর্যটকরা চারবাংলা মন্দিরের টানে বড়নগর ভ্রমন করেন। পর্যটকদের সুবিধার জন্য এই গ্রামে অনেক হোম-স্টে রয়েছে। সেখানে রাত্রিবাসের বন্দোবস্তও রাখা হয়েছে।

    বিদেশী পর্যটকরা চারবাংলা মন্দিরের টানে বড়নগর ভ্রমন করেন। পর্যটকদের সুবিধার জন্য এই গ্রামে অনেক হোম-স্টে রয়েছে। সেখানে রাত্রিবাসের বন্দোবস্তও রাখা হয়েছে। প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বহন করছে মুর্শিদাবাদের বড়নগর। এই গ্রামের বাসিন্দারা অনেকে তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বালুচরী, জামদানি, টাঙ্গাইলের মতো সুক্ষ্ম বস্ত্র উৎপাদন করেন তাঁরা। এ ছাড়া, বাঁশ ও বেতের কারুশিল্প, মৃৎশিল্পের সঙ্গেও জড়িত অনেকে। মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরাও সক্রিয় বড়নগর গ্রামে। 

     

    বড়নগর পুরাকীর্তির প্রাচীন নিদর্শন, ছবিটি পাওয়া যায় ১৯০৫ সালে প্রকাশিত মসনদ অফ মুর্শিদাবাদ বই থেকে

    প্রসঙ্গত, গতবছর মুর্শিদাবাদের কিরীটেশ্বরী গ্রাম পেয়েছিল সেরা পর্যটন গ্রামের তকমা, যা  ইতিহাস, সম্প্রীতি, পর্যটনে আজও অদ্বিতীয়। এবছর আবারও বাংলার পর্যটনের এহেন সাফল্যের খবর প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন মন্ত্রকের কৃষি-পর্যটন বিভাগের প্রতিযোগিতায় ‘সেরা পর্যটন গ্রাম’-এর তকমা পেয়েছে মুর্শিদাবাদের বড়নগর গ্রাম, এই খবরে আমি আপ্লুত। এ রাজ্যে যে অনন্য ভান্ডার রয়েছে, আরও বেশি করে তার প্রচার করে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেব আমরা।’’

    আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবসে কেন্দ্রের ‘সেরা পর্যটন গ্রাম’-এর পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে বাংলার হাতে।
     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @