উত্তরবঙ্গে রেলি নদীর তীরে রূপকথার রাজ্য বিদ্যাং

সামনেই আসছে গ্রীষ্মকাল। তীব্র দাবদাহে ক্লান্ত হয়ে মন চাইবে দূরে কোথাও গিয়ে বিশ্রাম নিতে। শহরের কোলাহল থেকে সরে শীতল প্রকৃতি মধ্যে খানিকটা জুড়িয়ে নেওয়ার ইচ্ছে তীব্র হয়ে উঠবে, কিন্তু ছুটির দিনগুলোয় কলকাতার আশেপাশে পর্যটনকেন্দ্রগুলো লোকে লোকারণ্য। অথচ আপনি চাইছেন চিৎকার-চেঁচামিচি আর ভিড় থেকে রেহাই পেতে। পাহাড়ের রানি দার্জিলিং-এও ওই সময়ে প্রচুর ভ্রমণার্থী পাড়ি জমায়। সেখানেও আপনি নির্জনতার স্বাদ পাবেন না। এমন পরিস্থিতিতে ঘুরে আসতে পারেন বাংলার মধ্যেই তুলনায় কম পরিচিত একটি জায়গায়, যেখানে নির্মল প্রকৃতির বুকে আপনার অবসন্নতা যেমন দূর হবে, অসাধারণ সুন্দর দৃশ্যরাজি আপনার মনকেও তৃপ্ত করবে।
রেলি নদীর তীরে ছোট্ট গ্রাম বিদ্যাং বা বিধ্যাং। পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে এই রূপকথার রাজ্যই হতে পারে আপনার গন্তব্য। এই জায়গাটা কালিম্পং শহরের খুব কাছেই। বিদ্যাং থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে রেলি নদী গিয়ে মিশেছে সুন্দরী তিস্তার সঙ্গে। ছবির মতো সুন্দর বিদ্যাং-এ প্রকৃতি তার সমস্ত সৌন্দর্য যেন ঢেলে দিয়েছে। আঁকাবাঁকা নদী, দিগন্ত বিস্তৃত ওক, পাইন, দেবদারু গাছের অরণ্য, কুয়াশাচ্ছন্ন বাতাস, সরু রাস্তা, ছোট্ট সব বাড়ি এবং নম্রস্বভাবের অতিথিপরায়ণ বাসিন্দারা মিলে জায়গাটাকে স্বর্গরাজ্য বানিয়ে তুলেছে। সারাদিন ধরে অনবরত পাখির কূজন এখানকার বড়ো প্রাপ্তি। সন্ধে হলে গ্রামবাসীরা সেদিনের মতো কাজকর্ম থেকে অবসর নেয়। অন্ধকার নেমে এলে আশ্চর্যরকম শান্ত হয়ে যায় সমস্ত এলাকা। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে ভেসে আসবে নিশীথচারী পরিযায়ী পাখির চিৎকার, পেঁচার ডাক কিংবা ঝিঁঝিঁপোকার গুঞ্জন। এখানে জোনাকিরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায়, রাতে আকাশের কালো ক্যানভাসে একের পর এক ছবি এঁকে যায় তাদের চলাফেরা।
পড়া ফ্যান্টাসির জগৎ চোখের সামনে মূর্ত হয়ে উঠেছে, এই বুঝি আকাশ থেকে নেমে আসবে পরিদের দল।
যাঁরা উদার প্রকৃতির মাঝখানে হারিয়ে যেতে ভালোবাসেন, বিদ্যাং তাঁদের কাছে আদর্শ পর্যটনস্থল। পূর্ণিমার রাতে সমস্ত গ্রাম চাঁদের রুপোলি আলোয় যেন স্নান করতে থাকে। তখন মনে হয়, ছোটোবেলায়
সমতল থেকে ৩০০০ ফুট ওপরে প্রাণী এবং উদ্ভিদের বৈচিত্র্যও আপনাকে মুগ্ধ করবে। স্থানীয় মানুষেরা বাড়িতেই বেশ কিছু তরিতরকারি এবং ফলের চাষ করেন। পাশের কৃষিজমিতে চাষিরা শস্য ফলান। সেখানকার বিশাল সবুজ প্রান্তর দেখে আপনার শহুরে চোখ জুড়িয়ে যাবে। অসংখ্য পাখি, পোকামাকড় আর প্রজাপতির বাসস্থান এই বিদ্যাং। পাহাড়ে চড়া এবং নদীতে ভেসে বেড়ানোর মজাও আপনি নিতে পারবেন এখানে। নদীর ওপর ঝুলে থাকা কাঠের সেতুটিও অনবদ্য। বিদ্যাং ভিউ পয়েন্ট থেকেই চোখে পড়ে অসাধারণ সুন্দর দার্জিলিং উপত্যকা। কাছেই রয়েছে শূকরশালা এবং গোশালা। জার্সি গরুও আছে সেখানে। স্থানীয় মানুষেরা একটা পুকুর খনন করে নিজেরাই ঝরনার জলে সেটিকে পরিপূর্ণ করেছেন। এখন সেখানে তাঁরা মাছের চাষ করে থাকেন।
কীভাবে যাবেন
শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছতে হবে অথবা প্লেনে আপনাকে যেতে হবে বাগডোগরা। সেখান থেকে জিপ, ট্যাক্সি বা অন্য কোনো গাড়ি ভাড়া করে কালিম্পং যাওয়া যায়। ঘণ্টা তিনেকের সেই যাত্রা সত্যিই উপভোগ করার মতো। কালিম্পং থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বিদ্যাং গ্রাম, সেখানে পৌঁছতে মিনিট ৪৫ সময় লাগবে।
কোথায় থাকবেন
বিদ্যাং গ্রামে হোম স্টে-র ব্যবস্থা আছে। একটা রিসর্টও পাবেন, যার নাম ‘বিদ্যাং দুন ভ্যালি নেচার রিট্রিট’। সেখানে রয়েছে আধুনিক যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা।
ভ্রমণস্থল
এখানে বেড়ানোর প্রধান জায়গা হল রেলি নদীর তীর। বর্ষায় এই নদী দু’কূল ছাপিয়ে যায়, আবার শীতে এর জল খুবই কমে আসে, যদিও স্রোত থাকে খুব বেশি। বিদ্যাং থেকে মিনিট ১৫ হাঁটলে একটা সুন্দর কমলালেবু বাগিচার দেখা মিলবে।