No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    কার্টুন মানে রাজনৈতিক খোঁচা নয়, মানুষের বিবেক দর্পণ, বাংলার শ্রেষ্ট কার্টুনের এক ঝলক।

    কার্টুন মানে রাজনৈতিক খোঁচা নয়, মানুষের বিবেক দর্পণ, বাংলার শ্রেষ্ট কার্টুনের এক ঝলক।

    Story image

    কার্টুন হলো ছবি আঁকা আঁকির এক আবেদন পূর্ণ ধারা। প্রচলিত মত, বিশ্বাস, ধারা, ও নীতি কে চ্যালেঞ্জ করাই কার্টুনের উদ্দেশ্যে। বক্তব্য পেশের ভঙ্গিমা তির্যক, বক্র, রাগ মেশানো অথচ হাস্য রসে চোবানো। এক কথায় বলতে গেলে কার্টুনের রয়েছে একটা প্রতিবাদী চরিত্র। কার্টুনিস্ট চন্ডী লাহিড়ীর মতে গোটা সোশালিস্ট আন্দোলনটাই দাঁড়িয়ে আছে কার্টুন আর পোস্টারের ওপর’। দেশ বিদেশের মতো এই বাংলাতেও দেখা গিয়েছে কার্টুন চর্চার একটা ধারাবাহিকতা।

    বাংলা কার্টুনের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন দেখতে  ক্লিক করুন

     সম্প্রতি ‘মায়া আর্ট স্পেস’ আর্ট গ্যালারিতে বাংলার অতীত শিল্পীদের সাথে সমকালের শিল্পীদের ঝাঁঝালো সব কার্টুন দেখে ধারণা করা গেল, বাংলা কার্টুনের জয় যাত্রা আজও অটুট।

    বাংলার প্রথম এডিটোরিয়াল কার্টুন প্রকাশ পায় অমৃত বাজার পত্রিকায়, ১৮৭২-এ। ১৮৭৪ –এ প্রকাশ পেল হরবোলা ভাঁড়, ওই বছরেই প্রকাশ পেল বসন্তক। কার্টুন নিয়ে সমাজে তখন তোলপাড়। শুরু হল বাংলা কার্টুনের জয় যাত্রা। গগনেন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, অসিত কুমার হালদার, হিতেন্দ্রমোহন বসু, বনবিহারী মুখোপাধ্যায়, সুকুমার রায়, চারু রায়, দীনেশ রঞ্জন দাস, সতীশ চন্দ্র সিংহ, চঞ্চল কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, যতীন্দ্র কুমার সেন, বিনয় কুমার বসু, সোমনাথ হোড়, চিত্ত প্রসাদ, কাফি খাঁ, প্রমথ সমাদ্দার, রবীন ভট্টাচার্য, শৈল চক্রবর্তী, রেবতী ভূষণ, কুট্টি, অহিভূষণ মালিক, কমল সরকার, বনফুল(লেখক), সুফি, সঞ্জয়, শ্রী গুপ্ত, দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, সুকুমার রায় চৌধুরী, রঘুনাথ গোস্বামী, অমিয় ঘোষ, অমল চক্রবর্তী, চন্ডী লাহিড়ী, অনুপ রায়, দেবাশীষ দেব, সেন্টু, উদয় দেব, উপল সেনগুপ্ত, স্বপন দেবনাথ, অমিতাভ চক্রবর্তী, ঋতুপর্ন বসু, তাপস মন্ডল, অনির্বান পাল, রৌদ্র মিত্র, চিরঞ্জিত সামন্ত সব মিলিয়ে এক বিরাট নাম তালিকা এই প্রদর্শনীতে যা বাংলা কার্টুনের ধারাবাহিক ঐত্যিকে বুঝতে সাহায্য করে। শিল্পীদের কেউ পেশায় কার্টুনিস্ট, কেউ পেইন্টিং নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন বা থাকেন  আবার কেউবা লেখকও। তবে এটুকু বোঝা গেল যে বাংলায় কার্টুন চর্চার ধারাবাহিক স্বরূপটি কী। এ রকম প্রদর্শনীর আয়োজনও  এই প্রথম।

    গগনেন্দ্রনাথের কার্টুন সংকলন ‘বিরূপ বজ্র’ আর ‘নব হুল্লোড়’ বই দুটি ছিল এই প্রদর্শনীতে। ‘বিরূপ বজ্র’ ছাপা হয়েছিল উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর প্রেসে। ‘নব হুল্লোড়’ ছেপেছিল ‘থ্যাকার স্পিঙ্ক’। তাছাড়া চিত্র শিল্পী বসন্ত গাঙ্গুলী ১৯২১-এ ছাপেন ‘ইন্ডিয়ান কার্টুনস’। সেই বইটিও ছিল এখানে। লোকে বইয়ের পাতা উল্টেও উপভোগ করল বাংলা কার্টুন। অসহযোগ আন্দোলনের সময় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ন্যাশনাল কাউন্সিল অব্‌ এডুকেশন পত্তন করেন। তখন স্যার আশুতোষকে ব্যঙ্গ করেছিলেন গগনেন্দ্রনাথ। সেই কার্টুনটিও দেখ গেল বইতে। পরুশুরামের রস রচনার অলঙ্করণে খ্যাতি যাঁর সেই যতীন্দ্র কুমার সেনের নারী বিদ্রোহ সিরিজের ছবি দেখা গেল এখানে। এগুলি প্রকাশ হয় 'মানসী ও মর্মবাণী' পত্রিকায়। কল্লোল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা দীনেশরঞ্জন দাসের মাসিক বসুমতীতে প্রকাশিত কার্টুন কিম্বা ভারতী পত্রিকা গোষ্ঠীর সদস্য ও আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর কার্টুনিস্ট চারু রায়ের প্রবাসীতে প্রকাশিত কার্টুন বুঝিয়ে দেয় বাংলার কার্টুন চর্চার গোঁড়ার কথা। সমকালে উদয় দেব, দেবাশীষ দেব, অনুপ রায়, অমিতাভ চক্রবর্তী, সেন্টু, রৌদ্র মিত্রের নির্মাণ দক্ষতা ও রসবোধ বাংলা কার্টুন চর্চাকে যে ভিন্ন মাত্রায় উত্তীর্ণ করেছে তা  বোঝা যায় প্রদর্শনীতে তাঁদের কার্টুন গুলি দেখলে।

    এক কথায় বলতে গেলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতবর্ষে নিঃশব্দে কার্টুনের যে বিপ্লব ঘটে গিয়েছে সেখানে বাঙালির ভূ্মিকা অগ্রগণ্য। এর পাশাপাশি বলতে হয় কার্টুনিস্ট মানেই রাজনৈতিক খোঁচা নয়। কার্টুনিস্ট দেশের মানুষের সামনে বিবেকের মতো কাজ করেন। দেশের বীর গাঁথাকেও তুলে ধরেন কার্টুনিস্টরা। পি.সি.এল যেমন তৈরি করেছিলেন সুভাষ আলেখ্য। এসব মিলিয়েই বাংলা কার্টু্ন-এর চেহারা ও বিবর্তন দেখা গেল আগস্ট মাসের ৮ থেকে ১৬ তারিখ, মায়া আর্ট স্পেস আর্ট গ্যালারিতে। এক বিরল অভিজ্ঞতা।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @