No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধারে অভিনব দিগন্ত খুলে দিলেন বাঙালি মেয়ে

    সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধারে অভিনব দিগন্ত খুলে দিলেন বাঙালি মেয়ে

    Story image

    মাটি খুঁড়ে সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল গত শতকের দ্বিতীয় দশকে। ১৯২১-২২ সাল নাগাদ সিন্ধু অববাহিকায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য শুরু হয়েছিল। আধুনিক মানুষের সামনে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগের এই সভ্যতার দরজা যাঁরা খুলে দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে বাঙালি গবেষক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম আলাদাভাবে করতেই হয়। গ্রিক বিজয়স্তম্ভের সন্ধানে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার একজন অধিকর্তা হিসেবে তিনি সিন্ধু অঞ্চলে গিয়েছিলেন। সিন্ধু নদের পশ্চিম তীরে মহেঞ্জোদারোতে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। ১৯২২ সালে তিনি মহেঞ্জোদারোকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থল হিসেবে সুনিশ্চিতভাবে ঘোষণা করেন। সিন্ধু অঞ্চলের প্রাচীন নগরসভ্যতা আবিষ্কার হওয়ার সময় থেকেই সেখানে পাওয়া লিপিগুলির পাঠোদ্ধার করতে চেষ্ঠা করে যাচ্ছেন সারা পৃথিবীর নানান দেশের গবেষকরা। কিন্তু এখনও সে লিপির মর্মভেদ করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার সেই অজানা লিপি পাঠোদ্ধারের নতুন পথ খুলে দিলেন আরেক বাঙালি।

    বাংলার মেয়ে বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায় এখন বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। পেশায় ওয়েব ডেভেলপার বহতার এক দীর্ঘ গবেষণাপত্র ‘নেচার’ ব্র্যান্ডের পত্রিকা ‘প্যালগ্রেভ কমিউনিকেশন্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে এই জুলাই মাসেই। লেখাটির বিষয় সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধারের পদ্ধতি নির্ধারণ। বহতা অংশমালীর এই গবেষণা প্রকাশ্যে আসার পরই আলোড়ন শুরু হয়ে যায় গোটা বিশ্বের পণ্ডিতমহলে। সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার করেননি বহতা। কিন্তু এই লিপি নিয়ে এমন কিছু তিনি জানিয়েছেন, যার মাধ্যমে সিন্ধুলিপি পাঠোদ্ধারের দিকে আরও খানিকটা এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হল।

    বহতার স্বামী একজন বিজ্ঞানী। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বহতাদের বাড়ি গিয়েছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিশিষ্ট গণিতবিদ ও পদার্থবিদ রণজয় অধিকারী। সিন্ধুলিপি নিয়ে তাঁর গবেষণার কথা আগেই জানতেন বহতা। অধ্যাপক অধিকারীকে তিনি অনুরোধ করেন, তাঁর প্রোজেক্টে অংশ নিতে চান বহতা। কিন্তু সেখানে কয়েকদিন কাজ করার পর বহতা উপলব্ধি করলেন, তিনি যেভাবে এগোতে চাইছিলেন, বিশুদ্ধ গাণিতিক ও সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সেই পথে যাওয়া যাবে না। 

    ২০১৫ সালে বহতা আইটি অফিস থেকে এক মাসের ছুটি নিয়ে জাভা প্রোগ্রামিং-এর প্যাটার্ন সার্চের মাধ্যমে সিন্ধুলিপিকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেন। দেখা যায়, তিনি যা অনুমান করেছিলেন, তার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে এর ফলাফল। তখন চাকরি ছেড়ে দিয়ে সিন্ধুলিপি নিয়ে গবেষণাপত্র লেখার কাজে মন দেন। এই কাজের ক্ষেত্রে তাঁকে উৎসাহ জুগিয়েছেন এবং নানাভাবে সাহায্য করেছেন অধ্যাপক রণজয় অধিকারী, প্রয়াত লিপি বিশেষজ্ঞ ইরাভথম মহাদেবন এবং বহতার বাবা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়। সিন্ধুলিপি নিয়ে দু’টি গবেষণাপত্র লিখেছিলেন বহতা। তার একটি প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি।

    প্রকাশিত হওয়া গবেষণায় বহতা দেখিয়েছেন, সিন্ধুলিপি কোনোভাবেই ধ্বনিকে নির্দেশ করে না, বরং সেখানকার বার্তাগুলি হল শব্দচিত্র। যে সব ফলক এবং সিলমোহরে সিন্ধুলিপি খোদাই করা অবস্থায় পাওয়া গেছে, সেগুলি ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন এবং প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত হত। শব্দচিত্রগুলির ধ্বনিরূপ না খুঁজে বহতা চেয়েছেন লিপির কাঠামোকে বিশ্লেষণ করতে। কীভাবে চিহ্নগুলি একে অপরের সঙ্গে বসেছে, কোন জায়গায় কোন চিহ্ন বেশি পাওয়া গেছে, কোন জিনিসে কোন কোন চিহ্ন খোদাই করা ছিল, সেই বিষয়েই আলোকপাত করেছেন তিনি। চিহ্নগুলোকে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণিতে সাজিয়েছেন, তার জন্য ব্যবহার করেছেন গণিতের মতো অকাট্য এক ইন্টারডিসিপ্লিনারি পদ্ধতি। আরেকটি গবেষণাপত্রে সিন্ধুলিপির বাক্য এবং বাক্যাংশগুলির অর্থ অনুসন্ধান নিয়ে কাজ রয়েছে। সেই গবেষণাপত্র প্রকাশ্যে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন সিন্ধু সভ্যতা নিয়ে আগ্রহী সারা বিশ্বের মানুষ।

    ছবিসূত্র - ফেসবুক 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @