No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সাধারণ সভাপতি এই বঙ্গসন্তান

    ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সাধারণ সভাপতি এই বঙ্গসন্তান

    Story image

    আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের হাতে গড়া বেঙ্গল কেমিক্যালস-এর বিরুদ্ধে একবার মামলা করে এক বিদেশি ওষুধ কোম্পানি। অভিযোগ, বেঙ্গল কেমিক্যালস নাকি পেটেন্ট আইন ভঙ্গ করেছে। সেসময় আদালতে রুখে দাঁড়ান প্রফুল্লচন্দ্রেরই এক স্নেহধন্যা ছাত্রী, কিংবদন্তি বিজ্ঞানী ও রসায়ন গবেষক অসীমা চট্টোপাধ্যায়। বিশেষজ্ঞ হিসেবে সংগ্রাম করে তিনি বেঙ্গল কেমিক্যালস-এর জয় হাসিল করেন।

    অসীমা চট্টোপাধ্যায় ভারতে জৈব-রসায়ন গবেষণার এক অগ্রদূত। আমাদের দেশে আয়ুর্বেদ চর্চার ধারা এক সময়ে খুব সমৃদ্ধ ছিল। পরবর্তীকালে, ব্রিটিশ যুগের শুরুতে তা যথেষ্ট অবজ্ঞার শিকার হয়। অসীমা চট্টোপাধ্যায় আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভেষজ গাছগাছালি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। আয়ুর্বেদশাস্ত্রে নতুন গতি আনেন। প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহার মতো প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানীরা ভারতের বিজ্ঞান সাধনার ইতিহাসে যে স্বর্ণযুগের সূচনা করেছিলেন, অসীমা চট্টোপাধ্যায় সেই যুগেরই এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। 

    অসীমার জন্ম ১৯১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। ২০০৬ সালের ২২ নভেম্বর ৯০ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি। তখনকার দিনে আমাদের সমাজে মেয়েদের শিক্ষালাভের পথে যথেষ্ট বাধাবিপত্তি খাড়া করা হত। উচ্চবিত্ত পরিবারেও মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোকে খুব একটা প্রয়োজনীয় মনে করা হত না। তবে অসীমা এই দিক থেকে খানিকটা সৌভাগ্যবতী ছিলেন, কারণ তাঁর বাবা ডঃ ইন্দ্রনারায়ণ মুখোপাধ্যায় শুধু মেয়ের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেই থেমে থাকেননি। নিজের ছিল উদ্ভিদবিদ্যার প্রতি আগ্রহ, যা সংক্রামিত করেন মেয়ের মধ্যেও। বেথুন স্কুল, বেথুন কলেজের পর অসীমা যখন স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন, তখন পরিবারের অনেকেই আপত্তি করেছিলেন। কারণ, কলেজটি ছিল কো-এড। মা কমলা দেবী তখন বড়ো মেয়ে অসীমার পাশে দাঁড়ান। রসায়ন অনার্সে স্বর্ণপদক-সহ উত্তীর্ণ হয়েছিলেন অসীমা। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে জৈব-রসায়নে স্নাতকোত্তর, ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ। তিনিই প্রথম মহিলা, যাঁকে কোনো ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডক্টরেট অফ সায়েন্স উপাধি প্রদান করে।

    বিজ্ঞানী অসীমা চট্টোপাধ্যায়

    কর্মজীবনে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে রসায়ন বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব সামলেছেন। পাঠ দিয়েছেন রাজাবাজারের ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ সায়েন্সের রসায়ন বিভাগে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের খয়রা অধ্যাপকের পদে ছিলেন অনেক বছর। গবেষণা করেছেন বিশ্বের নানা বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে। ভিনকা অ্যালকালয়েডের ওপর তাঁর গবেষণা তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সারা দুনিয়ার বিজ্ঞান মহলকে। এই পদার্থ এখন কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত হয়। মৃগী এবং ম্যালেরিয়ার ওষুধ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

    ১৯৪৫ সালে অসীমা বিয়ে করেন শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যাপক বরদাচরণ চট্টোপাধ্যায়কে। এভাবে তিনি মুখোপাধ্যায় থেকে চট্টোপাধ্যায় হন। তাঁদের কন্যা জুলি বন্দ্যোপাধ্যায়ও একজন বিজ্ঞানী।

    ১৯৬০ সালে ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হন অসীমা চট্টোপাধ্যায়। ১৯৬১-তে লাভ করেন শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার। বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ভারতে এটি সর্বোচ্চ সম্মান। বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পদ্মভূষণ সম্মানেও ভূষিত করা হয় তাঁকে। তিনিই প্রথম মহিলা, যিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস সংস্থার সাধারণ সভাপতি হন। ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন রাজ্যসভার সদস্য। এত ব্যস্ততার মধ্যেও ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের চর্চা করতেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ‘চিরঞ্জীব বনৌষধী’ বইটির সম্পাদনা করেছেন। আমজনতার কাছে ভেষজ গাছপালার উপযোগিতা তুলে ধরতে বইটির জুড়ি নেই।

    তথ্যসূত্র – গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়, তৃষ্ণা বসাক
     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @