“আমরা হিন্দুস্তানি, কোনো কাগজই দেখাব না” – কলকাতায় প্রতিবাদী জমায়েত শিল্পীদের

কেন্দ্রীয় সরকারের এনআরসি, সিএএ এবং এনপিআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে গোটা দেশ। দেশের প্রায় প্রত্যেকটি রাজ্যের মানুষ পথে নামছেন, সোচ্চার হচ্ছেন। বিক্ষিপ্ত ঘটনাও ঘটে চলেছে পাশাপাশি। কখনও আন্দোলনকর্মীদের ট্রেন জ্বালানো আবার কখনও পুলিশের গুলিতে মৃত্যু আন্দোলনকর্মীদের। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরপর কর্মসূচি এবং মিছিলের ডাক দিয়ে বলছেন, জীবন দিয়ে অধিকার রক্ষার আন্দোলন চলবে। বাংলায় ধর্মীয় বিভাজন করা যাবে না। এমনকি এ-ও বলেছেন, এনআরসি করতে হলে তাঁর লাশের উপর দিয়ে যেতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য বিরোধী দলগুলিও প্রতিবাদে রাস্তায় নামছে। বাদ নেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও।
২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার কলকাতার আকাদেমি অফ ফাইন আর্টসে অন্যরকমের প্রতিবাদী স্বর শুনল ভারত। বাংলার শিল্পীদের এই জমায়েতে এদিন শোনা গেল গর্জে ওঠা কণ্ঠস্বর। কেউ দশম শ্রেণির ছাত্র আবার কেউ থিয়েটার করেন প্রায় চল্লিশ বছর ধরে। আকাদেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে রাণু ছায়া মুক্তমঞ্চে এদিন উপস্থিত ছিলেন এরকম অসংখ্য প্রতিবাদী মুখ। উপস্থিত ছিলেন চিত্র-পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, চিত্র-পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য, চিত্র-পরিচালক আশিস অভিকুন্তক, অভিনেত্রী সুদীপা বসু, নাট্যব্যক্তিত্ব গৌতম সরকার-সহ বহু তরুণ শিল্পী-লেখকরা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এদিন জমায়েতে হাজির ছিলেন বহু ধর্মের মানুষ। যা আক্ষরিক অর্থেই ভারতের ‘জনগণমন’-এর ছবিটাই স্পষ্ট করে। এই সৌহার্দ্যবোধ বা সৌভ্রাতৃত্ববোধ ভারতবর্ষের প্রতীক। দশম শ্রেণির ছাত্রটি বলেন, “আমি নিজেকে মুসলিম বলে মনে করি না। আমি একজন হিন্দুস্তানি। এটাই আমার গর্ব।”
অন্যদিকে পরিচালক সুদেষ্ণা রায় বলেন, “আমার জন্ম ষাটের দশকে। তখন কি সবাইকে বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়া হত? আমারই যেমন বার্থ সার্টিফিকেট নেই। তাহলে আমার বাবা-মায়ের কী করে থাকবে! এনআরসি বা সিএএ-এর জন্য কোনো কাগজই আমি দেখাব না।”
আরও প্রচুর মানুষ এদিন মঞ্চে উঠে নিজেদের বক্তব্য রাখেন। সংস্কৃতের ছাত্র এবং শিক্ষক পোখরাজ চক্রবর্তী গেয়ে ওঠেন ‘একলা চলো রে’। পাশাপাশি চলে কবিতা এবং নৃত্য পরিবেশন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া উর্দু শায়েরি পড়েন, তারপর ‘আজাদি’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে আকাদেমি-নন্দন চত্বর।
চিত্রগ্রাহক- প্রতীক দে চৌধুরী