No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    সে এক রাজবাড়ির কথা

    সে এক রাজবাড়ির কথা

    Story image

    যারা ঘুরতে ভালোবাসে তাদের কাছে মনে হয় ঘুরে বেড়ানোর আলাদা করে কোনও সময় হয় না, যে-কোনও সময়কেই মনে হয় আদর্শ সময়, যেমন আমার। আর যদি তা নিজের বাসস্থানের আশেপাশে হয় তাহলে তো কথাই নেই। উইকএন্ডেই হই হই করে ঘুরে আসা যায়। কত যে সুন্দর সুন্দর জায়গা আমাদের এই বাংলায় – কোনওটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তাক লাগিয়ে দেয় তো কোনওটা আবার তার ঐতিহ্যে। ওদিকে সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসার জায়গাও কম নাকি, কত যে ছড়িয়ে রয়েছে, বেছে নিলেই হল। আমার বাছাইয়ের এক রাজবাড়ির কথা জানাই বরং, হ্যাঁ তা আবার কলকাতার পাশেই হাওড়া জেলায়, আন্দুল রাজবাড়ি, কলকাতা থেকে মাত্র কিছুটা সময়ের পথ। বেরিয়ে পড়লেই হল।

    কী ভাবে যাবেন
    কলকাতা থেকে গাড়ি করে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগে যেতে। আন্দুল রোড ধরে আন্দুল পৌঁছে যাকেই জিজ্ঞেস করা যায়, রাজবাড়ির কথা সে-ই বলে দেবে। ট্রেনে করে গেলে, হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেনে আন্দুল নেমে রিক্সা করে আন্দুল রাজবাড়ি।

    কলকাতা থেকে সড়কপথে মিষ্টি নামের মৌরীগ্রাম পার হয়ে একটু পরেই আন্দুল আর আন্দুল পৌঁছনো মানেই কিন্তু এক রাজবাড়ির রোমাঞ্চকর হাতছানি। বিশাল এই রাজবাড়ি, তা বলে খুবই যে ভগ্নদশা, বলা যাবে না। ভারী সুন্দর দেখতে ছিল একসময় তা স্পষ্ট বোঝা যায়। প্রায় ২০০ বছরের কাছাকাছি ঐতিহ্য বহন করছে এই বাড়ি। ঘুরে ঘুরে দেখতে বেশ ভালো লাগে, কেমন এক ইতিহাসের গন্ধ মাখা। স্থানীয় মানুষের কাছে জানলাম হিন্দি ছবি ‘সাহেব-বিবি-গোলাম’-এর নাকি এই বাড়িতেই শ্যুটিং হয়েছিল।

    সেইসময় তো রাজবাড়ির ঠাঁটঠমকই অন্য ছিল, শ্যুটিং হয়েছে আরও বহু সিনেমার। তারা এও জানালেন গর্বিতভাবে, বাড়িটি হেরিটেজ বিল্ডিং-এর মর্যাদা পেয়েছে। সামনে বিরাট খোলা প্রাঙ্গণ, শুনলাম একসময় সরস্বতী নদীর এই প্রাঙ্গণ পর্যন্ত অবাধ বিচরণ ছিল, এখন ক্ষীণতনু, রাজবাড়ির চত্বরে আর দেখা যায় না। যাইহোক, শীতকাল হলে রাজবাড়ির দিকে মুখ করে আরামে, অলসভাবে কিছুক্ষণ চুপ করে নিশ্চিন্তে বসে থাকা যায় এই প্রাঙ্গণে অথবা কলকলিয়ে আড্ডা দেওয়া যায়, কোনওকিছুতেই বাধা নেই।

    বাড়িটি বাইরে থেকে ঘুরে দেখতে দেখতেই এক জায়গায় দেখলাম লেখা আছে, এটি স্থাপিত ১৮৩৪ সালে, স্থাপন করেছিলেন রাজা রাজনারায়ণ রায়বাহাদুর। যে-কোনও রাজবাড়িরই নিজস্ব কিছু ইতিহাস, কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে; আবার লোকমুখেও শোনা যায় নানান কথা। শুনলামও, কিন্তু সেইসব গভীর ইতিহাস আর লিখলাম না। মন বলছে, রাজবাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে পারলে কেমন হয়? কী বিশাল বিশাল থাম, দেখলাম প্রচুর মানুষের বাস কিন্তু কিছু জানতে চাইলে জানানোর আগ্রহ নেই কারোর তেমন। তাই বাইরে থেকেই ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে মন প্রবেশ করল প্রায় ২০০ বছর আগের রাজবাড়িতে।

    হেরিটেজ বিল্ডিং আখ্যা যখন পেয়েছে তখন আশা করাই যায়, আবার আগের মহিমায় ফিরে আসলেও আসতে পারে। পাশেই রয়েছে রাজবাড়ির অন্নপূর্ণা মন্দির। খুবই সুন্দর দেখতে এই মন্দিরের প্রবেশমুখেই একটি কামান রাখা। মন্দিরের পূজারীর কাছে জানলাম পুজোয় প্রথম মোষবলি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কামানটি দাগা হত। সেই শব্দ ছড়িয়ে যেত সমস্ত আন্দুল শহর জুড়ে। তারপর শুরু হত বাকি সব পুজো। মূল মন্দিরের ভিতরে দুইপাশে শিবমন্দিরও রয়েছে। মন্দিরের খোলা জায়গায় কেউ কেউ বসে রয়েছেন। তাঁরাই জানালেন, দত্তচৌধুরীবাড়ি ও কুণ্ডুবাড়ি দেখতে যেন না ভুলি, রাজবাড়ি না হলেও জমিদারবাড়ি তো বটেই!

    দত্তচৌধুরীবাড়ি পৌঁছে দেখলাম, এই বাড়ির প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন দুর্গামন্দির। সংস্কারের কাজ চলছে পুরোদমে, তাই সেই প্রাচীনত্বের ছোঁয়া ক্রমশ বিলীন। জানলাম, এখনের কারিগরেরা নাকি কিছুতেই প্রাচীন কাজের সঙ্গে মেলাতে পারছে না, তাহলে আর সেই প্রাচীনত্বের আশা না করাই ভালো। দেখলাম কুণ্ডুবাড়িও, হ্যাঁ, এই বাড়িটির এখনও প্রাচীনত্ব তবু কিছুটা বিদ্যমান। সব মিলে বেশ একটা জমজমাট ব্যাপার।

    তাই নামটি কেন ‘আন্দুল’ হয়েছিল তা নিয়ে নানান মতামত থাকলেও, কোনও এক উইক-এন্ড সফরের জন্য যে আন্দুল যাওয়াই যায় এবং এ-নিয়ে যে কারোর দ্বিমত থাকতেই পারে না, সেটা পৌঁছে গেলে কিন্তু অবশ্যই বোঝা যাবে।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @