No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    রেলগাড়িতে শৌচাগার চালু হওয়ার পিছনে রয়েছে এক বাঙালির অবদান

    রেলগাড়িতে শৌচাগার চালু হওয়ার পিছনে রয়েছে এক বাঙালির অবদান

    Story image

    ভারতবর্ষে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল ১৮৫৩ সালে। তারপর দীর্ঘ ৫৫ বছর ট্রেনগুলোতে সবার জন্য শৌচালয়ের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এর ফলে বিশেষ করে দূরপাল্লার ট্রেনগুলোতে খুবই বিপাকে পড়তেন যাত্রীরা। ১৮৯১ সালে তৃতীয় শ্রেণির কামরায় শৌচাগার চালু হল। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণিতে অনেক বেশি যাত্রী চলাচল করতেন। সেই কামরাগুলোতে হঠাৎ করে প্রকৃতির ডাক এলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা থেকেই যেত। রেলকর্তারা ভাবতেন, নিচু শ্রেণির যাত্রীরা ৫০ মাইলের বেশি যাবে না, সুতরাং তাদের কোনো শৌচাগারের প্রয়োজন নেই। রেল কর্তৃপক্ষের ধারণা যে কতটা ভ্রান্ত, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন এক বাঙালি। যাঁর অবদানে ১৯০৯-১০ সালে ট্রেনে সবার জন্য শৌচাগারের বন্দোবস্ত হল। 

    ১৯০৯ সাল। শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরছিলেন অখিলচন্দ্র সেন। বেরনোর আগে স্ত্রী তাঁকে যত্ন করে কাঁঠাল খেতে দিয়েছিলেন। পাকা কাঁঠাল বলে কথা! স্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসার গল্প করতে করতে অনেকটাই খেয়ে ফেলেছিলেন অখিলবাবু। খাওয়াদাওয়ার পর টাঙ্গা চেপে রেলস্টেশনে গিয়ে উঠলে ট্রেনে। ট্রেন চলতে শুরু করল। এতক্ষণ পর্যন্ত ঠিকই ছিল সব। হঠাৎ মাঝরাস্তায় তাঁর শুরু হল পেটে ব্যথা। পেটে এতগুলো কাঁঠালের চাপ, হজমও হয়নি ঠিকঠাক। প্রকৃতি হাতছানি দিয়ে ডাকতে লাগল তাঁকে। সে ডাক উপেক্ষা করবে এমন সাধ্য কারই বা আছে!  অথচ চতুর্থ শ্রেণির কামরায় নেই কোনো শৌচাগার। অগত্যা আহমেদপুর স্টেশনে ট্রেন থামতেই কামরা থেকে নেমে এক দৌড়ে চলে গেলেন স্টেশনের শৌচালয়ে।

    কিন্তু সেদিন তাঁর ভাগ্য ছিল বিরূপ। তিনি শৌচকর্ম সারছেন, এরই মধ্যে হুইসল বাজিয়ে দিলেন ট্রেনের গার্ড। অখিলবাবু আর কী করেন! এক হাতে লোটা আর এক হাতে ধুতি নিয়ে পড়িমড়ি করে ছুট লাগালেন ট্রেনের উদ্দেশ্যে। এদিকে ট্রেন তখন ছেড়ে দিয়েছে। দৌড়তে গিয়ে প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন অখিলচন্দ্র। চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল ট্রেন। এদিকে তাঁর অবস্থা দেখে তো আশেপাশের সবাই তো হেসে লুটোপুটি খাচ্ছেন। অখিলচন্দ্র প্রচণ্ড লজ্জা আর অসম্মানে বেরিয়ে গেলেন স্টেশন ছেড়ে। 

    বাড়ি ফিরে প্রবল ক্ষোভে এক কড়া চিঠি পাঠালেন সাহেবগঞ্জ ডিভিশনাল রেলওয়ে অফিসে। সেই চিঠিতে ক্ষতিপূরণের দাবি করলেন তিনি। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না পেলে এই ঘটনাটি তিনি খবরের কাগজে ফাঁস করে দেবেন, সেই হুমকিও দিলেন। ভুল ইংরেজিতে লেখা সেই চিঠি কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ খুব গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করেছিল। গোটা ঘটনার তদন্ত হল, এবং তার ফলশ্রুতিতে শেষ পর্যন্ত সমস্ত দূরপাল্লার ট্রেনে চতুর্থ শ্রেণির কামরাগুলোতেও চালু হল শৌচাগার। অখিলচন্দ্রের সেই যুগান্তকারী চিঠি নয়াদিল্লির রেলওয়ে মিউজিয়ামে আজও রাখা আছে।

    এবার থেকে যদি কখনও চলন্ত ট্রেনে প্রকৃতির ডাক আসে, কামরার শৌচাগার ব্যবহার করার সময়ে অখিলচন্দ্র সেনকে একবার ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @