No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ক্যান্সার রোগীদের পাশে ক্লান্তহীন অভিস্মিতা, তাঁর হাতেই ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল পুরস্কার

    ক্যান্সার রোগীদের পাশে ক্লান্তহীন অভিস্মিতা, তাঁর হাতেই ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল পুরস্কার

    Story image

    মারণ ব্যাধি ক্যান্সার শুরুতে চিহ্নিত হলে মানুষের মৃত্যুকে প্রতিহত করে দেওয়া যায়। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতার অভাব দেখা যায়। ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন সেই মানুষকে আর বাঁচানো সম্ভব হয় না। কিন্তু এই প্রথম পর্যায়ে রোগ চিহ্নিতকরণের কাজটাই বহু ক্ষেত্রে হয় না।

    জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব আলতাগ্রামের কম্যুনিটি হেলথ অফিসার তথা সরকারি নার্স অভিস্মিতা ঘোষ (Abhismita Ghosh) সেই রোগ চিহ্নিতকরণের কাজটিই করে চলেছেন নিঃশব্দে। যাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনীহা ছিল, তাঁরা এখন স্বেচ্ছায় বছরে একবার হলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাচ্ছেন সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে। আর গ্রামের মানুষদের এই বোঝানোর কাজটি সুচারুভাবে করতে পেরেছেন নার্স অভিস্মিতা।

    জলপাইগুড়ি নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করে ধূপগুড়ি হাসপাতালে স্টাফ নার্স হিসাবে তিনি কাজে যোগ দেন ২০০৯ সালে। সেখানে এগারো বছর বেশ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার পর ধূপগুড়ি ব্লকেরই মাগুরমারি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন পূর্ব আলতাগ্রামে কম্যুনিটি হেলথ অফিসার হিসাবে কাজ শুরু করেন। সেখানেও অসামান্য কাজের বেশ কিছু নমুনা তৈরি করেন তিনি। মা ও শিশু স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দিকে নজর দেন।

    কখনও রোদে পুড়েছেন, কখনও জলে ভিজেছেন। কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি। গ্রামের মধ্যে কখনও কারও গোয়াল ঘরে বসেও রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বুঝিয়েছেন, বছরে একবার অন্তত হলেও পরীক্ষা করানো উচিত। অভিস্মিতার কথায়, অবুঝ মানুষকে লাগাতার বোঝানোর ফলে তাঁরা নিজেরাই এখন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসছেন। ত্রিশ বছরের ওপর যাঁদের বয়স সেই সব ছেলেমেয়ে থেকে বয়স্ক, স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলে কারও কারও শুরুতেই ক্যান্সার ধরা পড়ছে। শুরুতেই ক্যান্সার চিহ্নিত হওয়ায় চিকিৎসার জটিলতা কমে। ফলে তাঁদের অনেকেই মৃত্যুকে ঠেকিয়ে ক্যান্সার মুক্ত হতে পারছেন। ক্যান্সারের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনের মতো রোগগুলোও এভাবে প্রথম পর্যায়ে চিহ্নিত হওয়ায় রোগীর চিকিৎসা শুরু হচ্ছে। রোগী ভালো হচ্ছে। এভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতার নতুন পরিবেশও তৈরি হচ্ছে গ্রামে।

    এ ধরনের অসামান্য সব কাজের জন্য এবছর দেশের নার্সিং পেশার সর্বোচ্চ সম্মান বা জাতীয় পুরস্কার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল (National Florence Nightingale Award) বাংলা থেকে একমাত্র পাচ্ছেন অভিস্মিতা ঘোষ। আগামী ১৭ জুন দিল্লিতে দেশের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে এই পুরস্কার নিতে চলেছেন অভিস্মিতা। লকডাউনের সময় অভিস্মিতা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ধূপগুড়ির বাড়ি থেকে তাঁর কর্মস্থল ছিল আট কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন তাঁর শিক্ষক-স্বামী তাঁকে কর্মস্থলে পৌঁছে দিয়েছেন। অন্তঃসত্ত্বা হলেও লকডাউনের ওই দুঃসময়ে মানুষের সেবা থেকে পিছু হটেননি অভিস্মিতা।

    দৃষ্টান্তমূলক এই কাজের ফলে আজ জাতীয় স্বীকৃতি। বঙ্গদর্শন.কম-কে অভিস্মিতা জানান, “ফলের আশা করে কাজ করিনি। তবে সুপ্ত বাসনা তো একটা থাকেই। আর যদি এরকম স্বীকৃতি আসে তবে খুবই ভালো লাগে। তবে বহু নার্স কিন্তু চারদিকে নিজেদের সেবার মানসিকতা নিয়ে উৎসর্গ করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।”

     

    ধূপগুড়িতেই জন্ম অভিস্মিতা ঘোষের। বাবা একজন ব্যবসায়ী, মা গৃহবধূ। স্বামী স্কুল শিক্ষক। দুই সন্তান। ছোটো থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল বড়ো হয়ে নিজে কিছু করবেন, স্বনির্ভর হবেন। কলেজে ভূগোল অনার্স নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়তে পড়তেই নার্সিং পেশায় যোগদানের জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগ আসে। একবারে সেই প্রশিক্ষণে যোগ দেন। অভিস্মিতা বলেন, “শৈশব থেকেই দেখেছি পিসিকে। পিসি আমার নার্স। মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন তিনি। সেখান থেকেই একটা প্রেরণা পেয়েছিলাম।”

    এ ধরনের অসামান্য সব কাজের জন্য এবছর দেশের নার্সিং পেশার সর্বোচ্চ সম্মান বা জাতীয় পুরস্কার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল (National Florence Nightingale Award) বাংলা থেকে একমাত্র পাচ্ছেন অভিস্মিতা ঘোষ। আগামী ১৭ জুন দিল্লিতে দেশের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে এই পুরস্কার নিতে চলেছেন অভিস্মিতা। লকডাউনের সময় অভিস্মিতা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ধূপগুড়ির বাড়ি থেকে তাঁর কর্মস্থল ছিল আট কিলোমিটার দূরে।

    জলপাইগুড়ি নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করে ধূপগুড়ি হাসপাতালে স্টাফ নার্স হিসাবে তিনি কাজে যোগ দেন ২০০৯ সালে। সেখানে এগারো বছর বেশ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার পর ধূপগুড়ি ব্লকেরই মাগুরমারি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন পূর্ব আলতাগ্রামে কম্যুনিটি হেলথ অফিসার হিসাবে কাজ শুরু করেন। সেখানেও অসামান্য কাজের বেশ কিছু নমুনা তৈরি করেন তিনি। মা ও শিশু স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দিকে নজর দেন। ভবিষ্যতে তাঁর লক্ষ্য, নিজের কাজটি সঠিকভাবে চালিয়ে যাওয়া। আর প্রতিনিয়ত যেন মানুষের সেবা করে যেতে পারেন। হতদরিদ্র কোনো মানুষ বিপদে পড়লে তাঁর পাশে ব্যক্তিগতভাবে দাঁড়াতেও পিছুপা হন না এই ব্যতিক্রমী নার্স।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @