No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    আবেদ চিত্রকর-দের আজকাল

    আবেদ চিত্রকর-দের আজকাল

    Story image

    শিলিগুড়ির মাটিগাড়াতে পাওয়া যায় হরেক মাটির টব ও ফুলদানি। সেইসব টব কিনে নিচ্ছেন মেদিনীপুরের শিল্পীরা। তারপর তাঁরা তার ওপর নানান ছবি আঁকছেন। আর সেই কারু কাজ করা টব ও ফুলদানি দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববাংলা শিল্পী হাটের বাজার মাত করছেন। মেদিনীপুরের পটুয়াদের এই সৃজন প্রতিভার জেরে শিলিগুড়ি মাটিগাড়ার অনেক মাটি শিল্পী বেশ খুশি।

    মেদিনীপুরের পটুয়া শিল্পী আবেদ চিত্রকরের বাড়ি হবিচক গ্রামে। বয়স ৪৪ বছর। বহুদিন ধরে তিনি পটুয়া। কিন্তু মাঝখানে এই শিল্পের প্রতি সরকারি উদাসীনতার জেরে অনেক পটুয়া তাঁদের বংশপরম্পরার এই পেশা ছেড়ে অন্য কাজে চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এখন সরকারি অনেক প্রকল্পের জেরে আবার তাঁরা মূল স্রোতে ফিরে আসছেন। মেদিনীপুর জেলাতেই এই রকম অনেক নজির আছে। আবেদ চিত্রকর তাঁদেরই একজন।

     

    আবেদ মাধ্যমিক পাশ। মাঝখানে এই পটুয়া পেশা ছেড়ে গাড়ি চালানো শুরু করেছিলেন পেটের টানে। গাড়ি চালানোর ফাঁকেই গান লিখতেন বাল্য বিবাহ, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে। সেই সব ছেড়ে দিয়ে এখন আবার পুরানো পটুয়া পেশায় ফিরে এসেছেন। তাঁর কথায়, এই সরকার হস্তশিল্পীদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। তাই গাড়ি চালানো ছেড়ে পুরানো কাজে ফিরে আসা। গাড়ি চালানো আর পটুয়া পেশায় রোজগারে কিছু ফারাক আছে, তবু সরকারি অনেক সুযোগ সুবিধা চালু হওয়ায় এবং নেশা বা শিল্পের টানে আবার ডুব দেওয়া পুরানো কাজে। বাল্য বিবাহের পাশাপাশি সেভ ড্রাইভ সেফ লাইফের ওপরও গান বেঁধেছেন আবেদ। তাঁর কাছ থেকেই জানা গেল, সরকার হস্তশিল্পীদের জন্য বিভিন্ন হাট এবং সুযোগ সুবিধা চালু করায় এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাওয়া দুলাল চিত্রকর, কোহিনুর চিত্রকর সহ আরও অনেকে তাঁদের মূল পেশায় ফিরে আসছেন।

     

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ঐতিহ্যপূর্ণ শিল্প হল এই পটুয়াদের কাজ বা পটচিত্র। বিভিন্ন মাটির পাত্রে তাঁরা রং তুলি দিয়ে অনেক সুন্দর ছবি মেলে ধরেন। তাতে সমসাময়িক অনেক ছবিও ফুটে ওঠে। এখন তাঁরা অনেকেই শিলিগুড়ির বিশ্ব বাংলা শিল্পী হাটে এসেছেন। আর এখানে এসে মাটিগাড়ার ঐতিহ্যপূর্ণ মাটি শিল্পীদের কাছ থেকে তাঁরা মাটির টব ও ফুলদানি কিনছেন। এরপর মেলায় বসেই তার ওপর আঁকছেন সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনার ছবি। বিক্রি হচ্ছে ভালোই। ফলে দুটো পয়সাও আসছে হাতে। পাশাপাশি, তাঁরা কেমিক্যাল রং ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করছেন। শিম পাতা থেকে তাঁরা সবুজ রং তৈরি করছেন। পুঁই পাতার বীজ থেকে গোলাপি রং। পান-চুন-খয়ের পেস্ট করে তৈরি হচ্ছে লাল রং। অপরাজিত ফুল থেকে নীল রং। কাঁচা হলুদ থেকে হলুদ রং। পূর্ব মেদিনীপুরের আরেক পট শিল্পী জাহাদ আলি জানালেন, তাঁদের ঐতিহ্যের পট শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে তাঁরা নানারকম উদ্ভাবনী বুদ্ধি বের করছেন। সঙ্গে গান বাঁধা হচ্ছে। ছবি আঁকার কাজ করতে করতেই তাঁরা গান বেঁধে তাতে সুর দিচ্ছেন। মাটিগাড়ার শিল্পী সুভাষ পাল জানালেন, মেদিনীপুরের পটুয়াদের সঙ্গে তাঁদের মাটি শিল্পের যেভাবে নতুন করে যোগাযোগ গড়ে উঠছে তা একটি নতুন দিক । 
     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @