No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    এই সংকটকালে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হাতিয়ার হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াও

    এই সংকটকালে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হাতিয়ার হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াও

    Story image

    আপাতত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ-যাপন। চার দেওয়ালের আবদ্ধ নির্জনতা। যেন এক অদৃশ্য মিসাইল কানে কানে এসে বলে গেছে, ঘরে থাকো, নইলে বিপদ। আছড়ে পড়াও এখন আর তার নিজের হাতে নেই। অতএব, বুদ্ধিশ্রেষ্ঠ প্রাণীকুল এখন দৈনন্দিনতা-বিস্মৃত। ওদিকে রোজকার খবরের কিছু অংশ বরাদ্দ থাকছে জাপানের শহরে হরিণকুলের অবাধ যাযাবরবৃত্তি বা ভেনিসের খালবিলে নিশ্চিন্ত ডলফিনের অলস সন্তরণ। আসলে, নিজেদের বিপন্ন হতে দেখে ঝকঝকে পরিবেশের ছবিতে সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টাটুকু। পরিবেশের ভালো থাকা দেখে খানিক অক্সিজেন নেওয়ার চেষ্টা। কাকতালীয় ভাবে, সেই বস্তুটি এখন বেশ প্রতুলই বলা চলে।

    তবে এসব তত্ত্বকথা রেখে এখন খানিক কেজো সত্যের কাছাকাছি আসা যাক। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের আপাত-অচলাবস্থা, এর মধ্যেও যেসব মানুষজন, সচেতনভাবে বা নিতান্ত নিরূপায় হয়ে সচল থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, বিপদটা মূলত তাঁদেরই। তবে এই গোষ্ঠীর বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা অসহায়ত্বের সন্ধান মিলবে বন্ধ দরজার এপারেই। করোনা-মোকাবিলার অগ্রসর-অনগ্রসরতার মধ্যেই মাঝে মাঝে টুকরো খবর আসছে, ব্লাড ব্যাঙ্কে টান, বিপদে অন্যান্য রোগীরা। আবার যেসব ন্যারেটিভ সহজে খবর হয় না, এই যেমন নিয়মিত ওষুধের প্রয়োজনীয়তা থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধার একলা ঘরের অসহায়ত্ব। আম-সমাজের কাছে এখন অবশ্য সবই ব্যাকফুটে। তাঁরা আপাতত ঘরে বসে পুলিশি আইনরক্ষার সীমাবদ্ধতার প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত। এই সবই আসলে ভয়, প্রাণের ভয়, অজানা শত্রুর মরণকামড়ের ভয়। সঙ্গে আরও এক বিকৃত মানসিকতা, নিজের ক্ষতির জন্য অন্যকে দোষারোপের প্রাচীন পন্থা। সেসব নিয়েই দিব্যি পার হচ্ছে লকডাউনের ক্রান্তিকাল।

    আর এই থমকে যাওয়া সংকটকালের পর্বে আদর্শ হয়ে উঠে আসছে কিছু কাজ-পাগল মানুষের ভিড়। এক জায়গায় নয়। বিভিন্ন জায়গা জুড়ে। সকলের সকলকে চেনার প্রয়োজন নেই, একক মানসিকতায় তাঁদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে রৈখিক দূরত্ব। সামাজিক দূরত্বকে সফল করতে সামাজিক কাজে এগিয়ে আসছে তারা। যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই। এক্ষেত্রে তাদের হাতিয়ার হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতা। ২৪ মার্চ দমদমের এক যুবক তেমনই একটি আর্জি জানিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন ফেসবুকে। মুদির দোকানের ভিড় ঠেকাতে পাড়ায় বিভিন্ন বাড়ির দোরগোড়ায় গিয়ে প্রয়োজনীয় রসদের যোগান দিতে চেয়েছিলেন তিনি। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। পাশে পেলেন বাবা ও কয়েকজন বন্ধুকে। তবে মানুষের পাশে থাকতে গিয়ে যাতে যথাযথ সুরক্ষা বিধি মেনে চলা যায়, সেজন্য কিনে আনা জিনিসগুলিকে তাঁরা রেখে দিচ্ছেন দরজার সামনে। আবেদন জানাচ্ছেন, অনলাইন ট্রানজাকশনের। 

    নিজের এলাকায় একইরকম জরুরি পরিষেবার উদ্যোগের কথা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন এই সময়ের একজন সুপরিচিত নাট্যকর্মী ও অভিনেতা। এমনিতেও নানাবিধ সাংগাঠনিক কাজের জন্য তিনি ফেসবুক ও বাস্তবের দুনিয়ায় ভালোই পরিচিত। সেক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতিতেও যে তিনি সচল থাকবেন, তা আর আশ্চর্যের কী! থিয়েটারের যেসব মানুষ দৈনিক পারিশ্রমিকের উপর নির্ভর করে জীবনধারণ করেন, এই অচলাবস্থার ফলে তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই আতান্তরে। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যেও ফেসবুকের মাধ্যমে থিয়েটার-প্রেমী দর্শকের কাছে আবেদন করেছেন ওই নাট্যকর্মী। সাড়াও মিলছে আস্তে আস্তে। 

    এই অসম লড়াইয়ে বিপদের একদম ওয়ারফ্রন্টে থাকা অগণিত ডাক্তার-নার্স, তাঁরাই কিনা পিষ্ট ছোঁয়াচে অসুখ নিয়ে মজ্জাগত মধ্যবিত্ত সংকীর্ণতার জাঁতাকলে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ উৎখাত হচ্ছেন বাড়িওয়ালার চোখ-রাঙানির কাছে। তার মধ্যেও কেউ এগিয়ে আসছেন তাঁদের জন্য উপযুক্ত আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে। নির্দ্বিধায় খুলে দিচ্ছেন নিজের বাড়ির দরজা। কেউ আবার হয়তো খোঁজ দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র পৌঁছে দেবে, এমন কোনও সূত্রের। কেউ বা জানিয়ে দিচ্ছেন, এই লকডাউন তাঁদের কাছে অন্তত ছুটি নয়, মানুষের সাহায্যার্থে রাস্তায় নামতে তাঁরা প্রস্তুত। সোশ্যাল মিডিয়ার যাবতীয় ‘আমাকে দেখুন’-এর বাইরে গিয়ে উঠে আসা এমন কিছু ভরসা জোগানোর মুখ।

    সংবাদমাধ্যমের পেজ থেকে মিনিটে মিনিটে আসছে আক্রান্ত-মৃতের পরিসংখ্যান, দিশেহারা বিজ্ঞানী-গবেষকদের তত্ত্বে কখনও আশার আলো, কখনও বা ভবিষ্যৎ-আতঙ্কের পূর্বাভাস, মানুষের অসচেতনতার অন্ধকার, কোথাও আইনরক্ষক শিক্ষকের ভূমিকায়, কোথাও বা শাসকের – জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য মানুষের ভিড়ে এই আপৎকালের মুখ হয়ে বেঁচে থাকুন এই সোশ্যাল মিডিয়ার বাস্তব নায়করাও।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @