No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    Gun-গুলি মোর

    Gun-গুলি মোর

    Story image

    সাল ১৮৩৫। হুগলি বাঁকুড়ার সীমান্তে এক গ্রাম কোতুলপুর। সেখানকার বাসিন্দা নরসিংহচন্দ্র দাঁ, কলকাতা এসে ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওল্ড চিনে বাজার স্ট্রিটে খুলে বসলেন তাঁর গাদা বন্দুক ও গুঁড়ো বারুদের দোকান। ১৮৪ বছর অতিক্রম করে যা এখন কলকাতার প্রাচীনতম বন্দুকের দোকানগুলির একটি। ‘নরসিংহচন্দ্র দাঁ অ্যান্ড কোং, গান অ্যান্ড রাইফেল মেকার্স’ এই নামে দোকান চিনে বাজার স্ট্রিট থেকে পরে সরে আসে হেমন্ত বসু সরণিতে। ৬৪ এ হেমন্ত বসু সরণি। এই মুহূর্তে দোকানের মালিকানায় থাকা ভাইয়েরা এই ব্যবসায় ষষ্ঠ প্রজন্ম। তাঁদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, শুরু যে ১৮৩৫ সালেই তা নিশ্চিত বলা না গেলেও নথিপত্র যা পাওয়া যায় কোনওটিই তার আগের নয়। তাই ধরে নেওয়া হয় প্রায় দুই শতাব্দীর এই দোকান ১৮৩৫ সালেই তার বারুদের যাত্রা শুরু করে কলকাতার বুকে। কিন্তু এতকিছু ছেড়ে বারুদ বা বন্দুক কেন জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পাওয়া যাবে সেই আমলের জমিদারদের কথা। তাদের সখ সৌখিনতার মধ্যে অন্যতম ছিল শিকারে যাওয়া। পাহাড়প্রমাণ বিষয়সম্পত্তি আগলে রাখার ক্ষেত্রে সুরক্ষাও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তো বটেই। আর এই সবের জন্যই জরুরি হয়ে উঠেছিল বন্দুকের কেনা বেচা। জানা যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে সারা ভারত জুড়ে ছিল বেশ কিছু দেশীয় রাজ্য। পৃথক সব জমিদার ছিলেন সেসবের দায়িত্বে। তাঁরা কলকাতা আসতেন বন্দুক কিনতে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য তাঁরা বা তাঁদের লোকজন এসে কিনে নিয়ে যেতেন বন্দুক ও প্রচুর পরিমাণে বারুদ। এও জানা যায় দাঁ-এরা বন্দুক বিক্রয় শুরু করেন অনেক পরে। প্রথমে বারুদ গুঁড়ো, ছিটে অর্থাৎ পেলেট বা লেড শট ও ক্যাপ বিক্রি করতেন তাঁরা। এরপর ধীরে আসে একনলা ও দোনলা বন্দুক। ‘মাজল লোডিং গান’। আদ্যিকালের সেইসব বন্দুকে গুলি বেরোবার মুখ দিয়েই ভরা হত বারুদ, লোহার টুকরো, টিকলি, ও ভুসি। তারপর লক্ষ্যে তাক করে ট্রিগার টানলে ছুটে যেত গুলি। 

    বন্দুক ও গুলির পাশাপাশি এবার লাইসেন্সও করে দেওয়া শুরু করেন দোকান কর্তৃপক্ষ। এভাবে বড়ো হতে থাকে ব্যবসা। চিনেবাজার থেকে দোকান চলে এসে বসে ডালহৌসি স্ক্যোয়ারে। নরসিংহ দাঁ-এর তিন ছেলে এবার দায়িত্ব নেন ব্যবসার। আশুতোষ, নীলমাধব ও নন্দলাল। বন্দুকের বাড়তে থাকা চাহিদার কথা মাথায় রেখে আশুতোষ ধর্মতলা মোড়ের কাছে খুলে বসেন আরেকটি দোকান। নাম এ টি দাঁ অ্যান্ড কোম্পানি।

    এরপর সিপাহি বিদ্রোহের সময় আসে ‘ব্রিচ লোডিং গান’। ওই বন্দুকের টোটার মধ্যেই ভরা থাকত বারুদ। নলে সরাসরি কার্তুজ ভরলেই ছোঁড়া যেত গুলি। এছাড়াও একপ্রকার ছোটো কামান বিক্রি করতেন তাঁরা। ‘উইনচেস্টার রিপিটিং আর্মস কোম্পানির তৈরি এই কামানের দৈর্ঘ্য মাত্র ১৭ ইঞ্চি। দাঁ বাড়ির বিখ্যাত দুর্গাপুজোর সূচনা এখনও হয় সন্ধিপুজোয় এই কামান দেগেই।

    আরও পড়ুন
    জলের মতন তুমি

    সে যুগে কেবল দেশীয় নয়, বহু সাহেবি দোকানের সঙ্গে পাল্লা দিয়েও প্রায় দু’শতক পার করে দিল নরসিংহচন্দ্র দাঁ-এর বন্দুক দোকান। স্বাধীনতার পর বদলে যায় চিত্র। জমিদারি বিলুপ্ত হয়ে যায় নানা আইনের মাধ্যমে। বন্ধ হয়ে যায় শিকারও। প্রভাব পরে বন্দুক ব্যবসায়। যদিও বন্দুক বিক্রি সেভাবে কমে যায়নি। ধরন বদলেছে মাত্র। বিভিন্ন সিকিউরিটি এজেন্সি বা রাজ্যের বিভিন্ন দোকানে এখন সরবরাহ হয় বন্দুক। এভাবেই টিকে রয়েছে দাঁ-দের এতদিনের ঐতিহ্য। ডালহৌসির বুলে তাদের দুইশতাব্দীর পদচারণ।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @