No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটি ভাবতে গিয়ে অনেককেই শুনতে হয় ‘পাগলামি’ – কেন? 

    মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটি ভাবতে গিয়ে অনেককেই শুনতে হয় ‘পাগলামি’ – কেন? 

    Story image

    শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি আমরা অনেকেই মানসিক অসুস্থতাকে গুরুত্বের চোখে দেখি না। এই সমস্যা চিরকালীন। উপলব্ধির যাত্রাপথ আমাদের সবার কাছে সমানভাবে পরিষ্কার নয়। খানিক অবহেলাতেই কাটে মানসিক স্বাস্থ্য। এই যেমন কেউ মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বাড়ি থেকে অনেকসময় বলা হয়, "তুমি কি পাগল? পাগলের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।" 

    আসলে সমস্যাটা এখানেই। একেবারের শিকড়ের। ভারতবর্ষের মতো তৃতীয় বিশ্বে যেখানে গ্রামের সংখ্যা বেশি, যেখানে বেশিরভাগ মানুষ দিন আনে দিন খায়, সেখানে মনের অসুখ করতে নেই। এই রোগ খানিক বিলাসিতা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষ এইসব ধ্যানধারণা নিয়েই সমাজ 'বদলের' ডাক দিচ্ছেন। 

    আজ অর্থাৎ ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। ১৯৪৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু)-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্বাস্থ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ মানসিক স্বাস্থ্য। শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে নীরোগ থেকে জীবন উপভোগ করা ও সাধ্য অনুযায়ী ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে কিছু করতে পারার সক্ষমতাই মানসিক স্বাস্থ্য। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস হল  সকলের মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সচেতনতার দিন। কিন্তু ঘটনাচক্রে এই দিনটির কথা আমরা প্রায় কেউ মনে রাখি না।

    ১৯৯২ সালে প্রথমবার সারা বিশ্বজুড়ে মোট ১৫০টি দেশ প্রথম পালন করেছিল বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এবছর এই দিনের মূল লক্ষ্য 'সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য : অধিক বিনিয়োগ-অবাধ সুযোগ’।

    মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব প্রয়োজনীয় একটি প্রশ্ন তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন, "একটি বেসরকারি চ্যানেলে মন ভালো থাকা নিয়ে অনুষ্ঠান। সেদিনের বিষয়, ‘নারী এবং যৌনতা’। সঞ্চালক রত্নাবলীদি (রত্নাবলী রায়)। অতিথি আমি। দুপুরের অনুষ্ঠানে বহু মহিলা ফোন করেছেন। তাঁদের কামনা, অপ্রাপ্তি, অসম্মতি, উদযাপন, যন্ত্রণার আখ্যান আমাদের সঙ্গে অকপটে ভাগ করেছেন। তাঁদের সংশয় এবং প্রশ্নের সাধ্যমত বিশ্লেষণ করেছি আমরা। উত্তরে পৌঁছেছি একসঙ্গে।

    ছোট্টুর দোকানে ভাঁড়ের চা শেষ করছিলাম। ফোনটা ঢুকল। অন্যপ্রান্তে এক স্বনামধন্য লেখক। দু-তিনটি সৌজন্যমূলক বাক্য। ‘খুব জরুরি বিষয়’, ‘ভালো হয়েছে’ ইত্যাদি। তারপর বলেই ফেললেন, একজন নারী এত খোলামেলাভাবে যৌনতা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন এ নাকি তিনি ভাবতেই পারছেন না। তিনি বিস্মিতও বটে। আমাদের গালের রং বদলায়নি দেখে! নারীকণ্ঠের এমন ‘নিলাজ উচ্চারণ’ নাকি তাঁর কর্ণমূল আলোড়িত করেছে। একজন নারীর পক্ষে এমন কুণ্ঠাহীন হওয়া কীভাবে সম্ভব এই জাতীয় কী একটা প্রশ্ন করেছিলেন। তাঁকে বলেছিলাম, ‘অনুষ্ঠানটিতে আসলে দুজন মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী কথা বলছিলেন। আপনি কেবল নারীকণ্ঠ শুনতে পেয়েছেন!’"

    এই সমাজে কিছু করার আগেই সেখানে লিঙ্গ চাপিয়ে দেওয়া হয়। বিচার করার প্রক্রিয়াও এগোয় সেই ভাবে (কিন্তু বিচারক কারা, কেন, কীসের বিচার করবে?)। এই যেমন মহিলা ডাক্তার, মহিলা অধ্যাপক, মহিলা কবি ইত্যাদি। খেয়াল করে দেখবেন, পুরুষদের আগে তাঁদের লিঙ্গ ব্যবহার করা হয় না। এবং অবশ্যই এ-ও এক ধরনের পাওয়ার পলিটিক্স। আর মানসিক রোগ তো বটেই।

    হু সংস্থা জানাচ্ছে, মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত সারা বিশ্বজুড়ে প্রায় ১২ শতাংশ মানুষ। বিশ্বে প্রতি চার জন মানুষের মধ্যে ১ জন মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন। হু-এর পরিসংখ্যান অনুসারে ২০০২ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ মানসিক অসুস্থতার শিকার। যার জেরে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যা করেন প্রায় আট লক্ষ মানুষ। আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। অধিকাংশ ব্যক্তিই আত্মহত্যার সময় কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকেন। সাধারণত সেটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না বা মানসিক রোগ নিশ্চিত হলেও যথাযথ চিকিৎসা করা হয় না বলেই আত্মহত্যার মতো ঘটনা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতএব প্রয়োজন মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটি গুরুত্বের চোখ দিয়ে দেখা। আর এটি আসতে হবে পরিবার পরিজন থেকে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশে থাকতে হবে। না পারলেও অন্তত সাহসটুকু দিতে হবে। 

    আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে একটু ভাবুন। একটু ঘুরে দাঁড়ান।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @