No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    এলিট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন হারছে এবিভিপি?

    এলিট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন হারছে এবিভিপি?

    Story image

    সম্প্রতি বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটে এবিভিপি হেরেছে। এরমধ্যে দিল্লি ও রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাড়া অন্যত্র, যেমন এলাহাবাদ, হায়দরাবাদ বা গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের প্রাধান্য ছিল না। কিন্তু আগেরবার জেতা আসন তাঁরা কোথাও কোথাও হারিয়েছেন। যেমন এলাহাবাদে তাঁরা গতবার জিতেছিলেন পাঁচটির মধ্যে দুটি পদ, এবার জিতেছেন একটা। গতবার রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ে সভাপতি সহ তিনটি পদ জিতেছিলেন তাঁরা, আর এবার জিতেছেন মাত্র একটা।

    কিন্তু দিল্লি ছাড়া অন্য কোনও ভোটের হারকে এবিভিপি ধর্ত্যব্যের মধ্যে আনতে রাজি নয়। কারণ, প্রতিটা ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, তার যুক্তি রয়েছে তাঁদের কাছে। গতবার এলাহাবাদে দুটো আসন তাঁরা পেয়েছিলেন বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে দিয়ে। একাধিক যাদব প্রার্থী ছিলেন সেখানে। ফলে সমাজবাদী ছাত্রদের ভোট ভাগ হয়েছিল। এবার হয়নি। কাজেই জাত–পাতের অঙ্কে জেতার সম্ভাবনা কম ছিল। সমাজবাদী পার্টির ছাত্র সংগঠন সমাজবাদী ছাত্র সভা স্বাভাবিকভাবেই জিতেছে। এবিভিপির মুখপাত্র সাকেত বহুগুনার বক্তব্য, তাঁরা উত্তরপ্রদেশের আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে জিতেছেন। কিন্তু সেগুলো খবর হয়নি। আবার রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের হারের খবর সংবাদমাধ্যমে বেরিয়েছে, কিন্তু উদয়পুর, জয়পুর, বিকানের ও কোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা জিতেছেন। এবং পুরো রাজস্থানের সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে যত আসন তার ৬০ শতাংশ তাঁরা পেয়েছেন। অসমেও অন্য বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা ভাল ফল করলেও গুয়াহাটিতে হেরেছেন।

    এখন একথা ঠিক যে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভোটের খবরই কাগজে–টিভিতে আসে। কম গুরুত্বপূর্ণেরা অবহেলিত হয়। এই বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই এবিভিপি হারছে। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে গতবারও কিছু করতে পারেনি, এবারও পারেনি। কিন্তু এবিভিপি তথা সঙ্ঘ–কর্তারা মনে করছেন, যেহেতু সার্বিক ছবিটা বদলায়নি, তাই তাঁদের সমর্থনে ঘাটতির প্রশ্নটা উঠছে না। কথাটা হয়তো ঠিক। কিন্তু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা পড়ে, তাদের অনেকেই পরে সমাজে তুলনায় বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়। বলা যেতে পারে, এলিট হিসাবে গণ্য হয়। তাদের মধ্যে প্রভাব কেন কমছে?‌ এবিভিপি মনে করছে, তার কারণ বিরোধী সংগঠনগুলোর জোটবদ্ধ হওয়া। জওহরলাল নেহরু  বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ভোট বাড়ছে বলেই বিভিন্ন বাম সংগঠন অতীতের মতো নিজেরা নিজেদের মধ্যে না–লড়ে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থীরা জোট বেধেছে দলিত সংগঠনের সঙ্গে। এইখানে নিজেদের জয় দেখছে তারা।

    কিন্তু এই ঘটনাটাই তো ঘটতে পারে বড়দের রাজনীতিতে। অর্থাৎ, লোকসভা–বিধানসভার নির্বাচনে। যেমন উত্তরপ্রদেশ। সেখানে যদি কংগ্রেস–মায়াবতী–অখিলেশ–বাম একসঙ্গে হয়, তবে বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া প্রতিহত হবে। গতবারের ৭০–এর জায়গায় নেমে যাবে ৩০–৩৫–এ। অঙ্ক অন্তত তাই বলে। কিন্তু বিজেপি আশা করছে, তখন রসায়নটা বদলে যাবে। বিরোধীদের আতাঁতকে সুবিধাবাদী জোট বলে মনে করবে মানুষ। যেটা তারা প্রকাশ্যে বলে না, তাহল এমন জোট হলে সেটাকে মুসলিমপন্থী শক্তিদের জোট বলে প্রচার চালাতে পারবে তারা। ফলে হিন্দুরাও জোটবদ্ধ হবে।

    কিন্তু ঘটনা হল, সেটা হবে নরেন্দ্র মোদির রাজনীতির পরাজয়। কারণ, তিনি উন্নয়নটাকেই ইস্যু করতে চান। গুরুদাসপুর লোকসবা আসনের হারকে হারকে না হয় অকালিদের অপশাসনের ধাক্কা বলে ধরা যেতে পারে। কিন্তু এই এলিট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো?‌ সেগুলো কিন্তু নিশ্চিতভাবেই জাতীয়তাবাদ বা গোমাংস নিয়ে উগ্র রাজনীতির প্রতিক্রিয়া। এদেশের মানুষ উগ্রতা আর পছন্দ করেন না। তাঁরা চান উন্নয়ন ও শান্তি।

    এই সত্য বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার যত দ্রুত বুঝবে তত তাদের মঙ্গল, দেশেরও মঙ্গল।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @