No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ইংল্যান্ড থেকে চিঠি লিখে ক্রিকেটের আলোচনা করতেন সুকুমার 

    ইংল্যান্ড থেকে চিঠি লিখে ক্রিকেটের আলোচনা করতেন সুকুমার 

    Story image

    সুকুমার রায়ের রক্তে ছিল ক্রিকেট। বঙ্গদেশে ক্রিকেট খেলা চালু করেছিল তাঁর পরিবার। পূর্ব বাংলার মসুয়া গ্রামে রায় পরিবারের পাঁচ ভাই ছিলেন ক্রিকেটের ভক্ত – সারদারঞ্জন, উপেন্দ্রকিশোর, মুক্তিদারঞ্জন, কুলদারঞ্জন ও প্রমদারঞ্জন। বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৮৭৭ সালে। রায় পরিবারের ছেলেরা তার আগে থেকেই গ্রামের মাঠে ক্রিকেট খেলতেন। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর দাদা সারদারঞ্জনের যখন ৮ বছর বয়স, পড়তেন কিশোরগঞ্জ মাইনর স্কুলে। ওই সময়ে তাঁর এক হাতে থাকত বই, আরেক হাতে ব্যাট। 

    ১৮৮০ সালে সারদারঞ্জনেরা পাঁচ ভাই মিলে গড়ে তোলেন ঢাকা কলেজ ক্রিকেট ক্লাব। নেতৃত্বে সারদারঞ্জন স্বয়ং। পরে তাঁরা কলকাতায় টাউন ক্লাব গড়ে তুললেন। এখানেও দলপতি সারদারঞ্জন। ভারতে তখন ক্রিকেট খেলতেন ব্রিটিশ সাহেব এবং অভিজাত ভারতীয়রা। রায়চৌধুরী ভাইরা সেই খেলাকে বাংলার আমজনতার মধ্যে ছড়িয়ে দিলেন। ঢাকা কলেজ ক্রিকেট ক্লাব এবং কলকাতার টাউন ক্লাব নিয়মিত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ক্রিকেট খেলত। বাংলায় জেলাভিত্তিক ক্রিকেট খেলার প্রচলন তাঁরাই করেন।


     
    তখন ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম ছিল বাংলার সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। সারদারঞ্জনের উদ্যোগে ১৮৯৫ সালে কলকাতায় যাত্রা শুরু করে ‘এস রায় অ্যান্ড কোম্পানি’। বাংলার প্রথম ক্রিকেট সামগ্রীর দোকান। তারপর গড়ে ওঠে ক্রিকেটসামগ্রীর কারখানা। ক্রিকেট কোচ হিসেবেও কৃতিত্বের ছাপ রেখেছেন সারদারঞ্জন। তাঁকে বলা হয় ‘বাংলার ক্রিকেটের জনক’। তাঁর ভাই উপেন্দ্রকিশোর বাংলায় প্রথম কিংবদন্তি ক্রিকেটার রঞ্জির জীবনী লিখেছিলেন। মুক্তিদারঞ্জন এবং কুলদারঞ্জন ছিলেন দুর্ধর্ষ ব্যাটসম্যান। প্রমদারঞ্জন ফাস্ট বোলার হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন। এই পরিবারের ছেলে হয়ে সুকুমার রায়ের ক্রিকেটে আগ্রহ থাকবে না, তা কী করে হয়?

    ক্রিকেটের প্রতি সুকুমারের অমোঘ আকর্ষণ ছিল, প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর চিঠিপত্রে। ইংল্যান্ডে যখন পড়তে গিয়েছিলেন, বাবা উপেন্দ্রকিশোর এবং কাকা কুলদারঞ্জনকে চিঠি লিখে নিয়মিত ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করতেন। শোনা যায়, কলকাতার মার্কাস স্কোয়ারে স্পোর্টিং ইউনিয়নের খেলা দেখতে যেতেন সুকুমার।    

    “কুমড়ো নিয়ে ক্রিকেট খেলে কেন রাজার পিসি?”

    নারীদের ক্রিকেট খেলার সূচনাও হয়েছিল রায় পরিবারে। তখন গ্রামের মেয়েদের পক্ষে ব্যাটবল জোগাড় করা অসম্ভব ছিল। তাই রায় পরিবারের মেয়েরা কাঠের তক্তা এবং শুকনো কুমড়ো দিয়েই কাজ চালাতেন। মসুয়া গ্রামের রায়বাড়ির উঠোনে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা দেখতে ভিড় করতেন আশেপাশের গ্রামের লোকজনেরা। তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘বোম্বাগড়ের রাজা’ ছড়ায় সুকুমার লেখেন, “সভায় কেন চেঁচায় রাজা ‘হুক্কা হুয়া’ ব’লে? / মন্ত্রী কেন কলসী বাজায় ব’সে রাজার কোলে? / সিংহাসনে ঝোলায় কেন ভাঙা বোতল শিশি? / কুমড়ো নিয়ে ক্রিকেট খেলে কেন রাজার পিসি?”

    ‘জগ্যিদাসের মামা’ গল্পেও সুকুমার ক্রিকেটের প্রসঙ্গ এনেছেন, “জগ্যিদাসের মামার কথা আমাদের ভারি আশ্চর্য ঠেকত। তার গায়ে নাকি যেমন জোর তেমনি অসাধারণ বুদ্ধি। তিনি যখন ‘রামভজন’ বলে চাকরকে ডাক দিতেন, তখন ঘর বাড়ি সব থরথর করে কেঁপে উঠত। কুস্তি বল, লাঠি বল, ক্রিকেট বল, সবটাতেই তাঁর সমান দখল।”

    ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা সঞ্চারিত হয়েছিল সুকুমারের পরের প্রজন্মেও। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে লেগ স্পিনার হিসেবে ক্রিকেট খেলতেন সত্যজিৎ রায়। 

    তথ্যঋণ - সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়, ইফতেখার মাহমুদ। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @