No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    স্যমন্তক অ্যান্ড মেটস-এর প্রথম অ্যালবামে রক ব্যালাড আর প্রেমের উদযাপন

    স্যমন্তক অ্যান্ড মেটস-এর প্রথম অ্যালবামে রক ব্যালাড আর প্রেমের উদযাপন

    Story image

    অ্যালবামের অফিশিয়াল কভার

    স্যমন্তক অ্যান্ড মেটস-এর (Samantak & Mates) প্রথম অ্যালবাম। ভলিউম ওয়ান (Vol-1)। প্রকাশ করছে হিন্দুস্তান রেকর্ডস (Hindusthan Records)। অ্যালবামের চার-চারটে গান বুনে দেয় ঋতুকালীন ভালোবাসা। কখনও তা বন্ধুত্বের, কখনও বিষাদের, কখনও রোমহর্ষক। অথচ সেই সুর, ছন্দ, লয় পুরোনো হয় না কোনোদিন কোনো অবস্থায়। কারণ ভালোবাসা তো চিরন্তন। মোটামুটি দুই বছর আগের সেইসব দিন। করোনার ভয়াবহ দিনগুলোর খোলস ছেড়ে মানুষ নতুন করে বাইরে বেরোচ্ছে, নিশ্বাস নিচ্ছে, গান গাইছে – আর মহামারি-শেষের কোনো এক বাদলা-রাতে জন্ম নিচ্ছে এ শহরের নতুন বাংলা ব্যান্ড স্যমন্তক অ্যান্ড মেটস। স্যমন্তক ও বন্ধুরা আসলে সেই দিন থেকেই চেষ্টা করেছে নিখাদ ভালোবাসার গান গাইতে, যে গানে শহর-গ্রামের কোনো বিভাজন নেই, নেই বয়সের গণ্ডিও। একালের তরুণ ও অতি-তরুণদের অন্যতম প্রিয় সংগীতশিল্পী স্যমন্তক সিনহা (Samantak Sinha) বলে চলছিলেন প্রথম অ্যালবাম নিয়ে তাঁর উত্তেজনার কথা। ডিসেম্বরের সেই চমৎকার সন্ধেয় রচিত হচ্ছিল আবেগঘন মুহূর্ত। মুহূর্তেরা তো মুহূর্তের কাছেই ঋণী। স্যমন্তক বলছিলেন, “স্যমন্তক অ্যান্ড মেটস শুধুমাত্র একটা ব্যান্ড নয়, মহামারী সৃষ্ট কিছু চ্যালেঞ্জের একটা স্থিতিস্থাপক প্রতিক্রিয়া, স্তব্ধ সময়ে সৃজনশীলতার স্থায়ী আশ্রয় এবং ওরিজিনাল বাংলা গানের নির্যাসটুকু ধরে রাখার চেষ্টা মাত্র।” ব্যান্ডটির নেতৃত্বে গায়ক-গীতিকার-সুরকার স্যমন্তক, লিড গিটারে শুভ্র, ড্রামে দীপায়ন আর বেসে রয়েছেন কুশল।

    নব্বইয়ের দশক থেকে ২০১০ পূর্ববর্তী সময়েও বাংলা ব্যান্ডের যে রমরমা ছিল, তা অধুনা বিলুপ্তপ্রায়। টেলিভিশন হয়েছে সিরিয়াল নির্ভর। যদিও এখনও বাংলা ব্যান্ড বেঁচে আছে কলেজ পড়ুয়াদের উন্মাদনায় আর গ্রামবাংলার শীতকালীন উৎসবে। প্রযুক্তি যত আধুনিক হয়েছে গান হয়ে উঠেছে ততই ‘মূল্যহীন’ (অর্থাৎ বিনা পয়সায় গান শোনা)। আমাদের মনে থাকবে, এলপি থেকে ক্যাসেট আসতে সময় লেগেছিল অনেকটাই। ক্যাসেট থেকে সিডি আসতে সময় লেগেছে প্রায় একদশক। মধ্যবিত্ত গ্রামবাংলার মানুষ তখনও পছন্দের অ্যালবাম কিনছেন। গানের বিচার হচ্ছে অ্যালবাম বিক্রির সংখ্যা দেখে। তারপর একদিন হঠাৎ করেই আছড়ে পড়ল ইন্টারনেট। অতঃপর পাইরেসি। একটা এমপিথ্রি-তে ধরে যেতে থাকল কয়েকশো গান। পাইরেসি গ্রাস করল বাজার। বহু ব্যান্ড বন্ধ হয়ে গেল। আর ইন্টারনেট তো সবই ‘ফ্রি’ করে দিল। স্যমন্তকদেরও সে পথে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে নিজেদের শিল্পচর্চা। ধীরে ধীরে অ্যালবামের গান পৌঁছে গেছে সিনেমায়, বিপ্লব পরিণত হয়েছে বাণিজ্যে। করোনার পর এ-চিত্র আরও বদলেছে। অথচ এই বাঁকদবলের মধ্যেই স্যমন্তক ও তাঁর বন্ধুরা যৌথভাবে অ্যালবামের দিকেই ঝুঁকলেন। ব্যান্ড ভেঙে যাওয়ার বিষাদ নিয়ে না ভেবে, যুথবদ্ধতার স্বপ্ন দেখলেন।

    স্যমন্তক অ্যান্ড মেটস-এর (Samantak & Mates) প্রথম অ্যালবাম। ভলিউম ওয়ান (Vol-1)। প্রকাশ করছে হিন্দুস্তান রেকর্ডস। অ্যালবামের চার-চারটে গান বুনে দেয় ঋতুকালীন ভালোবাসা। কখনও তা বন্ধুত্বের, কখনও বিষাদের, কখনও রোমহর্ষক।

    একটি ব্যান্ডের পরিচয় নির্মাণের ক্ষেত্রে কতখানি জরুরি অ্যালবাম! অ্যালবামে সম্পূর্ণ নতুন গান নাকি পুরোনো গানের নতুন সাজ – কোনটায় আকর্ষণ বেশি! স্যমন্তক সিনহা ঘরোয়া আড্ডায় এ প্রসঙ্গে বলেন, “এর আগেও কলকাতার অনেক বাংলা ব্যান্ডের গান অ্যালবাম প্রকাশের আগেই মঞ্চে শুনেছি। ক্যাকটাস, ফসিলস বা অঞ্জন দত্ত – তাঁদের অ্যালবাম প্রকাশের আগেই কিছু কিছু গান লোকের মুখে মুখে ঘুরত। অর্থাৎ লোকসংগীতের যে ধারা, মুখে মুখে গান ঘোরা এটা কিন্তু শহর-সংগীত বা আরবান গানের মধ্যেও ছিল। প্রযুক্তির জন্য হাতের মুঠোয় মিউজিক চলে এসেছে। অ্যালবামের পর সিঙ্গেলস এসেছে ধীরে ধীরে। ওরিজিনাল গান শোনার মতো মানুষের সেই আগ্রহ ক্রমশ কমেছে ঠিকই। তবে আমার মনে হয় অ্যালবাম প্রকাশ করাটা জরুরি। একটা অ্যালবাম ব্যান্ডের আইডেন্টিটি বা পরিচয় নির্ধারণ করে দেয়। অ্যালবামে নিজেদের কাজের ছাপটা থেকে যায়। পরবর্তীকালে আমরাও বুঝতে পারব যে কোথায় কোথায় খামতি ছিল, আরও কী কী পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে ভালো গান মানুষকে শোনাতে পারব।”

    স্যমন্তক বলেন, ভলিউম ওয়ান অ্যালবামে একটাও তাঁর লেখা গান নেই। তাঁরই বন্ধুজনেদের কিছু নতুন-পুরোনো লেখা বেছে নিয়েছেন। এই অ্যালবামের চারটে গান লিখেছেন সাহানা বাজপেয়ী, স্বদেশ মিশ্র, সোমেন রায় এবং অর্ঘ্যদীপ ঘোষ। “সাহানার লেখা আর আমার সুর করা ‘ছাতিম ফুল’ আমি আগেও গেয়েছি, কিন্তু সেটা ছিল অ্যাকুয়াস্টিক ভার্সেনে। এই অ্যালবামে সেটা ব্যান্ডের গান হিসেবে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। আসলে অ্যালবামের প্রত্যেকটাই প্রেমের গান। গানের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে ঋতু বৈচিত্র্য। বর্ষা, হেমন্ত, শীত আর বসন্তকে আমরা উদযাপন করছি গানের মধ্যে। খুঁজে বেড়াচ্ছি ভালোবাসা...” — বলছিলেন স্যমন্তক।

    “আমার কিছু কুড়িয়ে পাওয়া মনখারাপের ঘাসের দিন/ তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়ে জ্যোৎস্না-ক্ষত বিরামহীন” — ছাতিম ফুল শিরোনামে সাহানা বাজপেয়ীর এই লেখায় দিব্যি সুর বসিয়েছিলেন স্যমন্তক বছর তিনেক আগে। সেই ‘ছাতিমফুল’ নতুন অ্যারেঞ্জমেন্টে ফিরে এল ভলিউম ওয়ান অ্যালবামে। গান শোনার পর রেশ থেকে যায় আর থেকে যায় প্রিয় বন্ধুর গায়ের গন্ধ। হেমন্ত জন্ম দেয় বিবিধ রং। অন্যান্য তিনটে গানও তাই। গানের কথা আর সুরের চলনে দিব্যি মানানসই।

    অ্যালবামের প্রতিটি গানেই ফিরে ফিরে আসে প্রেম আর আকাঙ্ক্ষার আখ্যান। রক ব্যালাড ও মর্মস্পর্শী কবিতার মিশেলে গানের সুরেরা ইকো হয়। গত বছর ২১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছে স্যমন্তক অ্যান্ড মেটস-এর প্রথম অ্যালবাম ‘ভলিউম ওয়ান’। শোনা যাচ্ছে ইনরেকো (হিন্দুস্তান রেকর্ডস)-র ইউটিউব চ্যানেল ও অন্যান্য সাংগীতিক অ্যাপ থেকে। শেষ ছয় মাসে এই অ্যালবামের গান রেকর্ড সংখ্যক মানুষ শুনেছেন। স্যমন্তক মনে করেন, এই আকালের সময়েও যে এত সংখ্যক মানুষ গানগুলি শুনছেন, এটা আসলে স্বতন্ত্র বাংলা আধুনিক গানের জয়।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @