পাকিস্তানি ধারাবাহিকে রবীন্দ্রসংগীত আর দুই সীমান্তের মাঝে বাংলা ভাষা

দুই দেশের মাঝে কাঁটাতার। চব্বিশ ঘণ্টা পাহারাদার। দুই দেশ – যেন একে অপরের ‘ঘোষিত শত্রু’। কিন্তু এর মাঝেও পড়ে রয়েছে বহু যুগের প্রেম। ভারত আর পাকিস্তানকে এক সুতোয় মিলিয়ে দিয়েছে বহু চলচ্চিত্র, বহু সংগীত, বহু কবিতা। রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া ‘নিয়ম’-এর কাছে জিতে গিয়েছে মানবতা। রবীন্দ্রনাথ যাকে বলেছেন সৌভ্রাতৃত্ববোধ। সাম্প্রতিক আরও একবার সেই ছবিটা দেখল ভারত-পাক।
রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি। তাঁর গানেই মিলন ঘটেছে দুই প্রতিবেশী দেশের। সম্প্রতি পাকিস্তানের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘দিল কেয়া করে’-র বিশেষ একটি দৃশ্য নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে গিয়েছে। যেখানে এক মহিলা চরিত্রের মুখে শোনা গিয়েছে রবীন্দ্রসংগীত ‘আমার পরান যাহা চায়’। সেই গান মুগ্ধ হয়ে শুনছেন বাকি চরিত্রেরা। ফ্রেমে বয়ে চলেছে ভালোবাসার সুর। ধারাবাহিকটির পরিচালক মেহরিন জব্বার এবং গানটি গেয়েছেন শর্বরী দেশপাণ্ডে।
মূল পাকিস্তানি সিরিয়ালের পোস্টার
এতে নেটাগরিকরা উচ্ছ্বসিত হলেও এর আগেও কিন্তু এমন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দুই দেশ। বর্ডার অগ্রাহ্য করে মানবতার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিল ২০০৮ সালে নির্মিত বলিউডি ছবি ‘রামচাঁদ পাকিস্তানি’। পাকিস্তানের অন্যতম বড়ো শহর করাচি। সেখানে ঐতিহ্যবাহী করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বাংলা বিভাগ। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলা বিভাগ, ফ্যাকাল্টি এবং ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম বিভাগ। যদিও ব্যাচেলর’স ডিগ্রি থেকে পিএইচডি পর্যন্ত ভর্তি নেওয়া হয়। বাংলা বিভাগের সিলেবাসে জায়গা করে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ। বর্তমানে বিভাগীয় প্রধান ডঃ মুহম্মদ আবু তায়াব খান। করাচি-সহ সমগ্র পাকিস্তানে বাঙালি বসবাসকারীদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ
তবে পাক ধারাবাহিক ‘দিল কেয়া করে’-তে সম্পূর্ণ খালি গলায় রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার অন্য মাত্রা যোগ করেছে। উচ্চারণেও কোনো জড়তা নেই। ধারাবাহিকের সেই পর্বটি সম্প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে নেটমাধ্যমে। দুই দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় ‘মুক্ত’ মানুষরা কুর্নিশ জানাচ্ছেন।আসলে রাষ্ট্রব্যবস্থা আমাদের অনেকগুলো নিয়মের মধ্যে ফেলে দেয়। কেউ বেরিয়ে আসি, কারোর উপায় থাকে না। কিন্তু একবার যে বেরিয়ে আসতে পারে, সে ভেসে চলে অসীমে। তাকে আটকাবে কে! রবীন্দ্রনাথে এই যে প্রেম, এই যে আকুলতা – বারবার বুঝিয়ে দিয়েছে মানুষই একমাত্র সত্য। পাকিস্তানি ধারাবাহিকে বাংলা গানের ব্যবহারে বিস্মিত ওয়াঘা সীমান্ত। সেখানে বাঙালিদের মুখে একটা মুচকি হাসির রেখা দেখা যাবে নিশ্চয়ই।