ইন্দুবালা দেবীর প্রথম রেকর্ডিং

উত্তর কলকাতার মেয়ে ইন্দু। গানের গলাটি যারপরনাই মিঠে। গওহরজানের কাছে দীক্ষা নিয়েছেন তো বটেই, সব থেকে বড় কথা হল অমন দাপুটে কণ্ঠ সেকালে বাংলা সঙ্গীত জগতে বিরল। ইন্দুবালা উত্তর কলকাতার ‘অবিদ্যা’ পাড়ার চৌহদ্দিতেই তাঁর গান জীবনের চলাচল।
১৯১৫ সালের কথা। সাহেব-সুবোরা ততদিনে খবর পেয়েছেন ইন্দুবালার সঙ্গীত ও অভিনয় দক্ষতার। এই মেয়ে আজীবন স্বপ্ন দেখেছে গওহরের মতো হওয়ার। সে ইচ্ছে পোষণের জন্য মা রজবালার কাছে ধমকও খেয়েছেন বারে বারে। একবার বলেছিলেন তোর অমন ‘রূপ’ কোথায়? দমেননি ইন্দু। ১৯১৫ সালে গেলেন গানের রেকর্ড করতে। রেকর্ডে গাইবেন বলে বাছাই করেছেন কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের একটি রচনাকে। ‘ওরে মাঝি তরী হেথা বাঁধবো না আর...।’
সে যুগে এ রকমটা প্রায়ই হয়েছে যে, রেকর্ডিং ইঞ্জিনিয়ার গানের শুরুতে বা শেষে গায়ক বা গায়িকার নাম বলেছেন শিল্পীর দর ও কদর বুঝে। আসলে সকলের সেই অধিকার-ও ছিল না। গওহর, জানকী, মালকাদের কথা আলাদা। খানিকটা হলেও আলাদা কৃষ্ণভামিনীর প্রসঙ্গ। যাই হোক ইন্দুবালা গাইতে শুরু করলেন। আবেগ ও দরদে কবিতার ভাষা পৃথক ভাবে সাংগীতিক মাধুর্যে ভরে উঠল। মিনিট তিনেকের দরদি চলনের পর ইন্দুবালা গান শেষ করলেন। সেই মুগ্ধতার রেশ হয়তো স্পর্শ করেছিল সাহেবকেও। তাই ইন্দুবালা নন, তাঁর নামটি গানের শেষে বলে দিলেন স্বয়ং সাহেব ইঞ্জিনিয়ারই। বলতে গেলে মন থেকেই সাহেব ইন্দুবালাকে সেই নামের সম্মান দিলেন প্রথম দিনেই।
এই ‘ওরে মাঝি’-র রেকর্ড গিয়ে পৌঁছল স্বয়ং ইন্দুবালার বাড়িতে। সঙ্গে রেকর্ডের খাপের এক পাশে ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন। কিন্তু অসহায় ইন্দুবালা সেই গান শুনতে পেলেন না। কারণ তাঁর কাছে তো গ্রামোফোন যন্ত্রই নেই। রাগে দুঃখে রেকর্ডটি ভেঙে ফেললেন ইন্দুবালা। পড়ে যখন গ্রামোফোন কোম্পানি শুনল এ কথা, তখন অবশ্য স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে একটি যন্ত্র পাঠিয়ে দিয়েছিল কোম্পানি। যাতে গায়িকা স্বয়ং শুনতে পান তাঁর কণ্ঠ আর সাহেবের উচ্চারণে, ‘ইন্দুবালা অ্যামেচার।’