ভোটাধিকার পেলেন মানসিক হাসপাতালের সুস্থ আবাসিকরা

বাড়ির সঙ্গে অনেক দিনই সম্পর্ক নেই তাঁদের। কবে যে পরিবার পরিজন তাঁদের ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন, সব ক্ষেত্রে মনেও পড়ে না সেটা। একটা সময়ে তাঁরা মানসিক অসুস্থতার শিকার ছিলেন ঠিকই, কিন্তু চিকিৎসার ফলে সবাই এখন তাঁরা সম্পূর্ণ সুস্থ। তা সত্ত্বেও বাড়ির লোক তাঁদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়নি এখনও। তাই এখন তাঁদের কারো ঠিকানা পাভলভ মানসিক চিকিৎসালয়, কারো ঠিকানা বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল, কারো বা পুরুলিয়া মানসিক হাসপাতাল। এঁদের মধ্যে যেমন ষাটোর্দ্ধ মানুষ আছেন, তেমনই রয়েছেন সদ্য আঠেরো পেরোনো যুবক বা যুবতীরাও। হাসপাতাল চত্বরেই কখনও বা আলুর দম বিক্রি করে, কখনও বা অন্যের জামাকাপড় কেচে দিয়ে সামান্য কিছু রোজগারের বন্দোবস্ত করেছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন
দুই দেশের দুই লৌহ যবনিকার গল্প
১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী আমাদের দেশে কোনো ব্যক্তিকে আদালত যদি মানসিকভাবে অসুস্থ বলে ঘোষণা করে, তাহলে সেই লোকটির আর নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার থাকে না। কিন্তু যাঁরা “ঘরেও নহে, পারেও নহে”, সুস্থ হয়েও মানসিক হাসপাতালের আবাসিক যে সব মানুষেরা, তাঁদের ভোটাধিকার কি স্বীকৃত? অত্যন্ত বেদনার হলেও এটাই বাস্তব যে এতদিন পর্যন্ত ভারতে এই সব লোকদেরও ভোট দেওয়ার কোনো উপায় ছিল না। অর্থাৎ, নির্বাচন কমিশনের কাছে এঁরা ছিলেন মানসিক অসুস্থ্ ব্যক্তিদেরই সমতুল্য। তবে কমিশন এবছর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জীবন কাটানো সব মানুষই এবারের সাধারণ নির্বাচন থেকে ভোট দিতে পারবেন। সেই নির্দেশকে হাতিয়ার করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা উদ্যোগী হয়েছিল এইসব মানুষদের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে। তাঁদের দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন এই রাজ্যের বিভিন্ন মানসিক হাসপাতালে থাকা ২০০ জন সুস্থ আবাসিক। নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁরা ভোটার তালিকায় নাম তোলার আবেদনপত্রের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের সুস্থতার শংসাপত্রও জমা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন
হ্যাশট্যাগ মিটু : আড়াল আবডাল
ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে এঁদের সবথেকে বড়ো সমস্যার জায়গা ছিল ঠিকানা। এঁরা কেউই নিজের বাড়িতে থাকেন না। শেষ পর্যন্ত মানসিক হাসপাতালের ঠিকানা দিয়েই এই মানুষদের নাম তোলা হল ভোটদাতাদের তালিকায়। যেমন, পাভলভ মানসিক হাসপাতালের সুস্থ হয়ে ওঠা আবাসিকদের আবেদনপত্রে ঠিকানা ছিল, ১৮, গোবরা রোড। এন্টালির ভোটার হিসেবে ভোট দেবেন তাঁরা। তবে পাভলভ হাসপাতালের নাম উল্লেখ করা হয়নি সেখানে। ঠিকানায় মানসিক হাসপাতালের নাম না থাকায় সামাজিক ছুঁতমার্গ কাটিয়ে মূলস্রোতে ফিরতে সুবিধে হবে এই লোকেদের। পাভলভ মানসিক হাসপাতালের ১৬ জন, বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের ৬৫ জন আর পুরুলিয়া মানসিক হাসপাতালের ৫০ জন সেরে ওঠা রোগী এর মধ্যেই জানুয়ারি মাসে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র পেয়ে গেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে পাভলভ হাসপাতাল আর বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের আরও ৭৫ জন আবাসিকও ভোটার আইডি পেয়ে যাবেন। কীভাবে ভোট দিতে হবে, তার প্রশিক্ষণও দেওয়া চলছে এঁদের। এই ভোটারদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য মানসিক হাসপাতালের মধ্যেই বুথ তৈরির ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন।